হুতিদের হামলায় সৌদি যুবরাজের লোহিত সাগর বন্দর পরিকল্পনা কি ভেস্তে যাবে
Published: 1st, August 2025 GMT
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লোহিত সাগরের বন্দরগুলোতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলা সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।
২০১৪ সালে চালু হওয়া কিং আবদুল্লাহ বন্দরে ২০২৩ সালে ১৮৮টি কনটেইনারবাহী জাহাজ এসেছিল। ২০২৪ সালে তা কমে ৫৯টিতে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এই জাহাজ আসার পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ৫১টি জাহাজ এসেছে। এমন তথ্য দিয়েছে জাহাজ পর্যবেক্ষণ সংস্থা মেরিন ট্রাফিক।
২০১৪ সালে যখন কিং আবদুল্লাহ বন্দর চালু হয়, তখন এর পেছনে দুটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, সৌদি সরকার মনে করেছিল, লোহিত সাগরের বাণিজ্য রুটে অবস্থিত বন্দরটি বড় জাহাজ থেকে পণ্য নামিয়ে ছোট জাহাজে তুলে চূড়ান্ত গন্তব্যে পাঠানোর মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবসা থেকে আয় এনে দেবে। দ্বিতীয়ত, তারা এটিকে কিং আবদুল্লাহ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতায়াতের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। এখানে বিদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারখানা চালু করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বন্দরের দুই কর্মকর্তা বলছেন, কিং আবদুল্লাহ বন্দরের মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবসার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। কারণ, আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলো হুতিদের হামলার কারণে লোহিত সাগর এড়িয়ে চলছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, কিং আবদুল্লাহ বন্দরের ব্যবসা এতই খারাপ যে মালিকেরা চাইলেও এখন কনটেইনার টার্মিনাল বিক্রি করতে পারবেন না।
সৌদির এ বন্দর একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, যেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ইমার এবং হুটা মেরিন ওয়ার্কসের সঙ্গে যুক্ত। সৌদির সরকারি বিনিয়োগ তহবিল (পিআইএফ) ২০২১ সালে ইমার ‘দ্য ইকোনমিক সিটি’-এর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।
মেরিন ট্রাফিকের তথ্যানুযায়ী, সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক বন্দরেও জাহাজ চলাচল কমেছে। তবে সেখানে প্রভাব তুলনামূলক কম। ২০২৩ সালে সেখানে ৪০০টি কনটেইনার জাহাজ এসেছিল। ২০২৪ সালে তা প্রায় ১৪ শতাংশ কমে ৩৪৪টিতে নেমে এসেছে।
নির্বাহীরা বলছেন, বন্দরটি মূলত সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলে আমদানি পণ্যের প্রধান প্রবেশপথ হওয়ায় সেখানে ট্রান্সশিপমেন্টের ওপর নির্ভরতা কম। তাই ব্যবসা কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এশিয়া থেকে আসা কনটেইনারবাহী জাহাজগুলো এখন সৌদি আরবের পূর্ব উপকূলের দাম্মামের কিং আবদুল আজিজ বন্দরে ভিড়ছে। এক কর্মকর্তা বলেন, বিওয়াইবিডি প্রতিষ্ঠানের গাড়িগুলো এখন দাম্মামে যাচ্ছে, লোহিত সাগরের বন্দরে নয়। ওটা এখন নিরাপদ।
হুতিরা গাজার অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করে। এ হামলায় সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে মিসরের। কারণ, সুয়েজ খাল থেকে মিসর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। এখন অনেক জাহাজ হুতিদের হামলা এড়াতে আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে যাচ্ছে। ফলে সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচল অনেক কমে গেছে।
ক্ষতির মুখে পড়েছে সৌদি আরবও। সৌদির বন্দর ব্যবসায় এই বড় পরিবর্তন প্রমাণ করছে, হুতিদের হামলার প্রভাব রিয়াদের জন্যও অপ্রত্যাশিতভাবে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক সমুদ্রবন্দর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ব যবস আরব র
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা