মানিকগঞ্জে সবজি সংরক্ষণে নতুন সংযুক্তি
Published: 28th, August 2025 GMT
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের মেদুলিয়া গ্রাম। দুপুরের গরম সহ্য করে এই গ্রামে উপস্থিত ছিলেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কৃষক। তাদের কেউ টমেটো, আবার কেউ ঝুড়িতে ফুলকপি নিয়ে এসেছিলেন। কারো মুখে ছিল না ক্লান্তি। কারণ তারা জানেন, এবার আর তাদের ফসল মাঠে পচে নষ্ট হবে না। গ্রামে এসেছে নতুন আশার আলো; ফারমার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ। ঘাম ঝরানো পরিশ্রম আর নতুন প্রযুক্তির মেলবন্ধনে বদলে যাবে গ্রামীণ অর্থনীতি এমনটাই আশা তাদের।
চাষিরা এতদিন প্রচুর ফসল ফলালেও বিপাকে পড়তেন বিক্রির সময়। মৌসুমে বাজার ভরে যেত সবজিতে, দাম পড়ত মাটিতে। লোকসানের দুঃখ নিয়ে কৃষক ঘরে ফিরতেন। অনেক সময় বিক্রি করতে না পারায় নিজেদের উৎপাদিত টমেটো বা ফুলকপি মাটিতেই পুঁতে ফেলতে হতো চাষিদের।
আরো পড়ুন:
ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কদ্বীপে সবজি চাষ
রুবেল দেখিয়েছেন সাফল্য শুধু চাকরিতে নয়, ঘাস থেকেও পাওয়া যায়
সেই দুঃখের কথা মনে করে কৃষক আব্দুল করিম বলেন, “গত শীতে এত টমেটো উঠেছিল যে, বাজারে দামই ছিল না। বাধ্য হয়ে ফসল নষ্ট করেছি। এখন যদি কোল্ড স্টোরেজে রাখতে পারি, মৌসুম শেষে ভালো দামে বিক্রি করতে পারব। এটাই আমাদের বাঁচাবে।”
ফারমার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ নিয়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারী কৃষকরাও ছিলেন সমান উচ্ছ্বসিত। শামীমা বেগম বলেন, “আমাদের এলাকায় মেয়েরা অনেক সবজি চাষ করে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সব নষ্ট হয়ে যেত। এখন আমরা নিজেরাই দাম ঠিক করতে পারব। এই কোল্ড স্টোরেজ আমাদের জন্য আশীর্বাদ।”
বুধবার দুপুরে কোল্ড স্টোরেজ উদ্বোধন করেন কৃষি উপদেষ্টা মো.
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
কৃষক রহিম মিয়া এই কোল্ড স্টোরেজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, “দাম পড়ে গেলে আমরা সবজি সংরক্ষণ করব। যখন চাহিদা বাড়বে, তখন বিক্রি করব। আমাদের আর লোকসান গুনতে হবে না।”
কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ আর জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে চালু হওয়া এই প্রকল্পের নাম—‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সাশ্রয়ী কোল্ড স্টোরেজ সম্প্রসারণ’। ছোট আকারের এই হিমাগারই বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ধাপে ধাপে সারা দেশে এমন ১০০টি কোল্ড স্টোরেজ দেওয়া হবে কৃষকদের সংগঠনের হাতে।
এই কোল্ড স্টোরেজের দুটি ধরণ রয়েছে—ঘরভিত্তিক ও কনটেইনারভিত্তিক। দুইটি সৌরশক্তি চালিত, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। বিশেষ সেন্সরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, যা মোবাইল অ্যাপ থেকেই পরিচালনা সম্ভব। ৫ লাখ টাকায় তৈরি ঘরোয়া কোল্ড স্টোরেজে রাখা যাবে ১০ টন পণ্য, আর কনটেইনারভিত্তিক সংস্করণের খরচ ১৫ লাখ টাকা। প্রচলিত বড় কোল্ড স্টোরেজের তুলনায় খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ কম।
এই প্রযুক্তি শুধু কৃষকের আয় বাড়াবে না, পরিবেশ রক্ষাতেও বড় ভূমিকা রাখবে। একেকটি সৌরচালিত মিনি কোল্ড স্টোরেজ বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ রোধ করে যা ১৪০–১৬০টি পূর্ণবয়স্ক গাছের সমান কাজ করে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক তালহা জুবায়ের বলেন, “এটি পুরোপুরি কৃষকবান্ধব প্রযুক্তি। আমাদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক মনিটরিং থাকায় ঘরে বসেই মোবাইল ফোন দিয়ে হিমাগার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।”
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানও আশাবাদী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ফসল উৎপাদনে এগিয়ে থাকলেও সংরক্ষণে পিছিয়ে। এই উদ্যোগ কৃষকদের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। ধাপে ধাপে গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে যাবে এই প্রযুক্তি।”
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ফারমার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষকের বহু বছরের কষ্ট ঘোচাবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও আধুনিক এই প্রযুক্তি কৃষিকে এগিয়ে নেবে বহুদূর।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ