১ সেপ্টেম্বর থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত সুন্দরবন
Published: 31st, August 2025 GMT
তিন মাসের জন্য বন্ধ থাকার পর আবারো বনজীবী ও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে সুন্দরবন। আগামীকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন ভ্রমণ ও জীবিকার জন্য উন্মুক্ত হবে।
বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটন ও মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এসময় বনের মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য প্রজাতির প্রজননকাল হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকে।
স্থানীয় বনজীবীরা জানিয়েছেন, তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের জেলেরা চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন।
সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলার বনজীবী মাসুম ফরাজী বলেন, “তিন মাস মাছ ধরতে না পারায় পরিবার চালাতে কষ্ট হয়েছে। ধারদেনা করে সংসার সামলাতে হয়েছে। সরকার থেকে আমরা কোনো সহায়তা পাইনি। এখন আবার বন খোলার পর স্বস্তি ফিরবে।”
পর্যটকরা জানান, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত মৌসুম।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম ডেভিড বলেন, “খুলনা থেকে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭০টিরও বেশি জাহাজ প্রস্তুত আছে। আমরা আশা করছি প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুন্দরবনপ্রেমী পর্যটকরা ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।”
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নাজমুল হোসেন বলেন, “আমরা বেশ কিছুদিন ধরে সুন্দরবন ভ্রমণের পরিকল্পনা করে রেখেছি। বন খোলার পর সুন্দরবনে ঘুরতে যাবো। নিরাপত্তা জোরদার থাকলে পর্যটকরা আরও বেশি আসবেন।”
শরণখোলা ট্যুর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির মুনসী বলেন, “বন খোলার পর হরিণ, জলজ ও বণ্য প্রাণির অবাধ বিচরণ, গাছের ডালে ডালে পাখপাখালির কিচিরমিচিরসহ রোমাঞ্চকর ভ্রমণে উন্মুখ হয়ে আছেন পর্যটকরা। শুধু বন্য বা জলজ প্রাণি নয়, সুন্দরী, গেওয়া, গোল সবকিছুতেই এক অন্যরকম সৌন্দর্য। ভাগ্য সহায় হলে মিলতে পারে রয়েল বেঙ্গলের দেখাও।”
বাগেরহাট পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম বলেন, “১ সেপ্টেম্বর থেকে বনজীবী ও পর্যটকরা যথাযথ নিয়মকানুন মেনে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। জেলেদের জন্য জেলেপাস এবং পর্যটকদের জন্য পারমিটের নিয়ম অব্যাহত থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে বন রক্ষী দল সর্বক্ষণ টহলে থাকবে।”
ঢাকা/শহিদুল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প ট ম বর স ন দরবন র জন য বনজ ব ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ