নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। ভেঙে দেওয়া হয়েছে পার্লামেন্ট, ঘোষণা করা হয়েছে আগামী নির্বাচনের তারিখ।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কাঠমান্ডুর শীতল নিবাসে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রীকে। অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান এবং কূটনৈতিক মহলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর রাষ্ট্রপতির কার্যালয় শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন এবং আগামী ৫ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেছেন। নেপালে সর্বশেষ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২২ সালে। খবর এএফপির।
নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিক্ষোভের ধারা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের পথে সূচনা করেছে। যার হাল ধরেছেন ৭৩ বছর বয়সি সুশীলা কার্কি। তিনি পেশাগতভাবে কোনো রাজনীতিক নন। তিনি মূলত পরিচিত ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য। বিচারপতি হিসেবে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যা তাকে যেমন প্রশংসিত করেছে, তেমনি তার জন্য শত্রুও তৈরি করেছে।
একজন সৎ বিচারপতি হিসেবে কার্কির খ্যাতি তাকে এমন এক সময়ে রাজনৈতিক আলোর বৃত্তে নিয়ে এসেছে যখন দুর্নীতি ও শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে কাঁপছে নেপাল। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
কার্কির নিয়োগকে তুলনা করা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে, যিনি গত বছর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনার পতন ঘটায়।
২০০৯ সালে নেপালের সুপ্রিম কোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে তার বিচারিক জীবন শুরু হয়। এক বছর পর তিনি স্থায়ী বিচারপতি হন, আর ২০১৬ সালের জুলাইয়ে প্রধান বিচারপতির পদে উন্নীত হন।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র)-এর আইনপ্রণেতারা তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনেন। অভিযোগ ছিল, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানকে বরখাস্ত করার রায়ে পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন। এর ফলে তাকে অবিলম্বে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তবে উদ্যোগটি ব্যুমেরাং হয়ে যায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। নেপালের সুপ্রিম কোর্ট নিজেই হস্তক্ষেপ করে প্রক্রিয়া স্থগিত করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিশংসন প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয় এবং কার্কি পুনরায় পদে বহাল হন। তবে এর কিছুদিন পরই ২০১৭ সালের জুনে তিনি অবসরে যান।
প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক মামলার রায় দেন, যার মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়া প্রকাশ প্রসাদ গুপ্তকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা অন্যতম।
চলতি সপ্তাহে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫১ জন নিহত ও ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হন। এসব বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ওলি সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে, যা জনমনে ভিন্নমত দমনের প্রচেষ্টা হিসেবে ধরা হয়েছিল। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় কিন্তু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ওলি পদত্যাগ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২১ জন বিক্ষোভকারী, ৯ জন বন্দি, ৩ জন পুলিশ সদস্য এবং ১৮ জন অন্যান্য সাধারণ মানুষ ছিলেন। কাঠমান্ডুর হাসপাতালগুলো থেকে স্বজনরা এখন তাদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ষ ট রপত অন ষ ঠ স ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি