মানুষের প্রতিদিনের জীবন আসলে একেকটি নতুন সূচনা। কোরআন ও হাদিসে সকালকে বলা হয়েছে বরকতের সময়—যে সময় মানুষ যদি আল্লাহর স্মরণে, শৃঙ্খলায় ও ইতিবাচক কাজ দিয়ে শুরু করে, তার গোটা দিন হয়ে ওঠে সফল ও শান্তিময়। নবীজির (স.) জীবনে সকাল ছিল সবচেয়ে সুশৃঙ্খল সময়; তিনি এই সময়ে ইবাদত, দোয়া, কাজ ও মনন—সবকিছুকে সঠিক ভারসাম্যে রাখতেন।

১.

ফজরের নামাজ ও কোরআন তিলাওয়াত

রাসুল (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সে যেন পুরো রাত ইবাদত করেছে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৫৭)

সকালে ফজরের পর কোরআন তিলাওয়াত করা নবীজির (স.) অন্যতম অভ্যাস ছিল। কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছে, “ফজরের কোরআন তিলাওয়াতের সাক্ষী থাকে।” (সুরা ইসরা, আয়াত: ৭৮)

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে, ফজরের সময় শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসে, যা মানসিক সতেজতা ও মনোযোগ বাড়ায়। ভোরে ধ্যান, কোরআন তিলাওয়াত বা পাঠ মানুষকে মানসিকভাবে শান্ত রাখে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল–এর ২০১৮ সালের গবেষণায় বলা হয়েছে যে, সকালবেলার আধ্যাত্মিক অনুশীলন মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ভারসাম্য বজায় রাখে এবং উদ্বেগ কমায়।

২. ফজরের পর আল্লাহর জিকির

নবীজির (স.) অভ্যাস ছিল ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করা।

তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, তারপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির করে, এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।” (তিরমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

এই সময়টিতে “আস্তাগফিরুল্লাহ”, “সুবহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার” ইত্যাদি জিকির করলে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে।

মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, এই ধরনের পুনরাবৃত্ত ধ্যানমূলক জিকির কর্টিসল হরমোন কমিয়ে দেয়, যা মানসিক চাপ হ্রাস করে।

৩. সকালেই রিজিকের জন্য বের হওয়া

রাসুল (স.) বলেছেন, “হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালে বরকত দাও।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৬)

তিনি নিজেও সকাল সকাল কাজ শুরু করতেন। ব্যবসা, সফর বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব—সবকিছুই সকালেই শুরু করতেন।

সকালে শরীরের সব অঙ্গের হরমোন সক্রিয় থাকে, যা উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং মনোযোগ তীক্ষ্ণ করে।

৪. পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা

নবী (স.) সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ওজু করতেন, মুখ পরিষ্কার করতেন এবং মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। তিনি বলেছেন, “মিসওয়াক মুখের পরিচ্ছন্নতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৯)

সকালে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার রাখা মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়া ৮০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়, যা হজম ও মানসিক সতেজতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। 

৫. পরিবারকে সালাম ও দোয়া

নবী (স.) সকালবেলা পরিবারের সদস্যদের সালাম দিতেন ও তাদের জন্য দোয়া করতেন।

তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি বাড়িতে প্রবেশ করে সালাম দেয়, তার ও তার পরিবারের জন্য বরকত হয়।” (তিরমিজি, হাদিস: ২৬৯৮)

মনোবিজ্ঞান বলে, সকালে পারিবারিক যোগাযোগ ইতিবাচক শক্তি সঞ্চার করে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, সকালে পারিবারিক শুভেচ্ছা বিনিময় করলে দিনের মধ্যে মানসিক স্থিতি ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

৬. হালকা ব্যায়াম ও শরীরচর্চা

নবী (স.) শরীরচর্চাকে পছন্দ করতেন। সাহাবিরা সকালবেলায় দৌড়ানো, সাঁতার ও তিরন্দাজি অনুশীলন করতেন।

তিনি বলেছেন, “বলবান মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)

৭. সকালবেলা সদকা বা কল্যাণমূলক কাজ

নবী (স.) বলেছেন—

“প্রতিদিন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রত্যেক অঙ্গের জন্য সদকা করা কর্তব্য।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০০৯)

অর্থাৎ, সকালে একটি সৎকাজ—হোক তা দান, হাসি বা সাহায্য—দিনটিকে বরকতময় করে তোলে।

সকালে দান বা ইতিবাচক কাজ করলে ডোপামিন বৃদ্ধি পায়, যা দিনব্যাপী সুখানুভূতি ধরে রাখে।

সকালের সময়কে ইসলাম শুধু ইবাদতের নয়, বরং জীবনের পুনর্নবীকরণের সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফজর, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, তাওয়াক্কুল, পরিচ্ছন্নতা, কাজ ও সদকা—এসবের সমন্বয়ে সকাল হয়ে ওঠে বরকতময়, উৎপাদনশীল ও মানসিকভাবে দৃঢ়।

আরও পড়ুনসকাল-সন্ধ্যার আমল: জীবনে নিরাপত্তার ঢাল০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফজর র ন ম জ ক রআন ত ল জ ক র কর র জন য বল ছ ন আল ল হ করত ন র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’

পবিত্র কোরআনে রয়েছে হজরত লুকমান তাঁর সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, “হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করবে, ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে এবং আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে, এটাইতো দৃঢ় সংকল্পের কাজ।” (সুরা লুকমান, আয়াত: ৩১)

নামাজ ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি, যা মুসলিম জীবনের ভিত্তি। এটি বান্দার সঙ্গে তার প্রতিপালকের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি করে। নামাজ শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি হৃদয়ের শান্তি, আত্মার প্রশান্তি এবং জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তির উৎস।

পূর্ববর্তী নবীগণ যখনই কোনো বিপদে পড়তেন, তখন নামাজের আশ্রয় নিতেন।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬৩৩৫

তবুও অনেকে নামাজের প্রতি অবহেলা করে, হয় সম্পূর্ণ ত্যাগ করে, হয় কিছু নামাজ আদায় করে বাকিগুলো ছেড়ে দেয়, অথবা শুধু রমজানে নামাজ পড়ে।

নামাজের প্রতি অবহেলা

কল্পনা করুন, একজন মানুষ তীব্র গরমে শরীর সুস্থ রাখার জন্য হাঁটছেন। তিনি মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন, আজান ও ইকামতের ধ্বনি শুনছেন, কিন্তু তিনি থামছেন না। মনে হচ্ছে, মুয়াজ্জিনের ডাক যেন তার জন্য নয়। তিনি গরমে হাঁটতে পারেন, কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদে পাঁচ মিনিটের নামাজ আদায় করা তার জন্য কঠিন।

কেন এমন হয়? সম্ভবত তিনি এখনো নামাজের প্রকৃত মর্যাদা উপলব্ধি করেননি। তিনি দেখেন, মানুষ তাদের জীবিকার কাজ ছেড়ে মসজিদে ছুটে যাচ্ছেন, আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছেন, তাদের দুশ্চিন্তা ও কষ্ট তাঁর কাছে পেশ করছেন। নামাজ তাদের দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে আল্লাহর রহমতের বিশালতার দিকে নিয়ে যায়। তবুও কিছু মানুষ নামাজের মাধুর্য উপভোগ করতে ব্যর্থ হন, যার ফলে তারা এতে অবহেলা করেন।

নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। এটি এমন একটি ইবাদত, যার অভাবে ঈমানের ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। এটি বান্দার সঙ্গে তার রবের সম্পর্কের সেতু, যেখানে সে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, ভয় ও আশা প্রকাশ করে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, পূর্ববর্তী নবীগণ যখনই কোনো বিপদে পড়তেন, তখন নামাজের আশ্রয় নিতেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬৩৩৫)

নামাজ বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য দান করে, যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সিজদা করো এবং নৈকট্য অর্জন করো।’ (সুরা আলাক, আয়াত: ১৯)

আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫নামাজের উপকার

নামাজের উপকার অসংখ্য। এটি কেবল ধর্মীয় দায়িত্ব পালন নয়, বরং বান্দার জীবনকে সমৃদ্ধ করে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো:

১. হৃদয়ে প্রশান্তি: নামাজ বান্দার হৃদয়ে শান্তি নিয়ে আসে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)। যিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন, তিনি জীবনের সংকট মোকাবিলায় ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সঙ্গে এগিয়ে যান। তিনি জানেন, আল্লাহ তার জন্য কষ্ট থেকে মুক্তির পথ বের করে দেবেন।

২. মানসিক স্থিতিশীলতা: নামাজী ব্যক্তি ছোটখাটো বিষয়ে অধৈর্য হন না। তিনি শান্ত মনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেন এবং আল্লাহর হেদায়াত তার সঙ্গী হয়।

৩. জীবনের শৃঙ্খলা: নামাজ জীবনে শৃঙ্খলা আনে। নামাজের নির্দিষ্ট সময় মানুষকে সময়ানুবর্তিতা ও দায়িত্বশীলতা শেখায়। এটি বান্দার ইমানি শক্তি, আত্মিক উন্নতি ও শারীরিক সুস্থতার উৎস।

৪. নৈতিক উৎকর্ষ: নামাজ বান্দার চরিত্র ও আচরণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যিনি নামাজে নিয়মিত, তার মধ্যে সততা, আমানতদারি ও উত্তম আচরণ প্রকাশ পায়।

৫. আল্লাহর বরকত ও রিজিক: নামাজ আল্লাহর বরকত ও রিজিকের দ্বার খুলে দেয়। এটি বান্দাকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে শেখায় এবং তার জীবনে শান্তি ও সাফল্য নিয়ে আসে।

মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন, আজান ও ইকামতের ধ্বনি শুনছেন, কিন্তু তিনি থামছেন না। তিনি গরমে হাঁটতে পারেন, কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদে পাঁচ মিনিটের নামাজ আদায় করা তার জন্য কঠিন।নামাজে অবহেলাকারীদের জন্য পরামর্শ

নামাজে অবহেলাকারীদের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা এই ইবাদতের প্রতি ফিরে আসতে পারেন:

১. নামাজের মর্যাদা উপলব্ধি করা: নামাজ ইবাদতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি পরিত্যাগ করলে অন্যান্য ইবাদতেও ঘাটতি দেখা দেয়। নিয়মিত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা তার ইমান ও তাকওয়াকে শক্তিশালী করে।

২. নামাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া: জীবনের সব কাজ নামাজের সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে সাজানো উচিত। নামাজকে ইমানি ও আত্মিক শক্তি সঞ্চয়ের সময় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

৩. জামাতে নামাজ আদায়: জামাতে নামাজ আদায় করা ইমানকে আরও দৃঢ় করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি মেহমানখানা প্রস্তুত করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৯)

৪. নিজের সঙ্গে লড়াই: নামাজে অবহেলা পরিত্যাগ করা জীবনের একটি বড় জয়। এটি বান্দাকে শৃঙ্খলা, সাফল্য ও রিজিকের নতুন দ্বার উন্মোচন করে।

৫. নামাজের আনন্দ উপভোগ: যে ব্যক্তি কোনো কাজে আনন্দ পায়, সে তা করতে ক্লান্তি বোধ করে না। নামাজের মাধ্যমে যে আনন্দ ও শান্তি পাওয়া যায়, তা অনুভব করলে কেউ আর এতে অবহেলা করবে না।

৬. কাজের ব্যস্ততার অজুহাত পরিহার: অনেকে বলেন, কাজও একটি ইবাদত। কিন্তু একটি ইবাদত কখনো অন্য ইবাদতের বিকল্প হতে পারে না। যেমন রোজা জাকাতের বিকল্প হতে পারে না, তেমনি কাজ নামাজের বিকল্প হতে পারে না। প্রতিটি ইবাদতের নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে, যা বান্দার আত্মিক ও নৈতিক উন্নতি সাধন করে।

৭. কিয়ামতের দিনের কথা ভাবা: কিয়ামতের দিন আল্লাহ আমাদের প্রথমে নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। আমরা কী উত্তর দেব? ‘আমরা ব্যস্ত ছিলাম, সন্তানদের জন্য রিজিক সংগ্রহ করছিলাম, বিশ্রাম নিচ্ছিলাম’ — এই অজুহাত কি গ্রহণযোগ্য হবে? নেয়ামতের শুকরিয়া না করে কি তা রক্ষা করা যায়? নামাজ বরকতের উৎস, যা জীবনে শান্তি ও সাফল্য নিয়ে আসে।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫যারা অবহেলাকারীদের ভালো চান, তাদের জন্য পরামর্শ

যারা নামাজে অবহেলাকারীদের ভালো চান, তাদের জন্য কিছু পরামর্শ:

১. ভয় দেখানোর পরিবর্তে উৎসাহিত করা: নামাজ ত্যাগকারীদের জাহান্নাম বা কুফরির ভয় দেখানো কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও অনেকে ভেবে নেন, তাদের হৃদয়ের পবিত্রতাই জান্নাতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট। তাই তাদের বোঝানো উচিত যে নামাজ বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক স্থাপন করে, তার চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাকে তাকওয়া ও নুর দান করে।

২. নামাজের প্রভাব বোঝানো: নামাজের মাধ্যমে ইমান নবায়ন করা হয়, আল্লাহর প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মে এবং ভালো কাজের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। এই বিষয়গুলো তাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। নামাজের সময় মন ও হৃদয়কে দুনিয়ার চিন্তা থেকে মুক্ত করে আল্লাহর মহত্ত্ব অনুভব করতে হবে।

তোমার পরিবারকে নামাজের আদেশ দাও এবং তাতে ধৈর্য ধরো।সুরা তাহা, আয়াত: ১৩২

৩. ধৈর্যের সঙ্গে নামাজের প্রতি আহ্বান: আল্লাহ বলেন, ‘তোমার পরিবারকে নামাজের আদেশ দাও এবং তাতে ধৈর্য ধরো।’ (সুরা তাহা, আয়াত: ১৩২)

নামাজের প্রতি আহ্বান রাগ বা শাস্তির মাধ্যমে নয়, বরং ধৈর্য ও ভালোবাসার সঙ্গে করতে হবে।

৪. উপযুক্ত সময় ও ভাষা বেছে নেওয়া: নামাজের জন্য আহ্বান করার সময় এমন মুহূর্ত বেছে নিতে হবে যখন ব্যক্তি মানসিকভাবে প্রস্তুত এবং পরিবেশ ভালোবাসাপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, একজন মা তার মেয়েকে ওজুর পর বলেছিলেন, ‘দেখো, তোমার মুখ কীভাবে স্নিগ্ধতায় ভরে গেছে!’

এমন ভালোবাসাপূর্ণ কথা মানুষের হৃদয়কে নরম করে।

৫. সৎ সঙ্গের প্রভাব: সৎ সঙ্গ নামাজে ফিরে আসতে সাহায্য করে। এমন বন্ধুদের সঙ্গ দেওয়া উচিত, যারা নামাজের প্রতি অনুরাগী এবং মসজিদে যাওয়ার প্রতি উৎসাহী। এমন মসজিদ বেছে নেওয়া উচিত যেখানে ইমামের তিলাওয়াত ও খুশু মুসল্লিদের হৃদয়ে প্রভাব ফেলে।

৬. কিশোর মনস্তত্ত্বের প্রতি লক্ষ্য রাখা: কিশোর বয়সে মানুষ প্রায়ই বিদ্রোহী মনোভাব প্রকাশ করে। তাদের জন্য জোর করে নামাজ পড়ানোর পরিবর্তে ধৈর্য ও বোঝাপড়ার সঙ্গে নামাজের সৌন্দর্য বোঝানো উচিত। জোরপূর্বক নামাজ পড়ালে তা ইখলাসবিহীন হতে পারে।

৭. ছোটবেলা থেকে জামাতে নামাজের অভ্যাস: শৈশব থেকে জামাতে নামাজের অভ্যাস গড়ে তুললে বান্দার হৃদয় মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে যায় এবং ফিরে আসে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি মেহমানখানা প্রস্তুত করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৯)

৮. দোয়ার মাধ্যমে হেদায়াত কামনা: আল্লাহর কাছে অবিরাম দোয়া করতে হবে যেন তিনি নামাজে অবহেলাকারীদের হেদায়াত দেন। ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমার রব, আমাকে এবং আমার সন্তানদের নামাজ কায়েমকারী করো। হে আমার রব, আমার দোয়া কবুল করো।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪০)

নামাজ: সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

নামাজ বান্দার জীবনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। এটি কেবল একটি ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম, যা জীবনকে অর্থবহ ও পরিপূর্ণ করে। নামাজ পরিত্যাগ করা ইমানের দুর্বলতা ও আত্মিক শূন্যতার কারণ হয়। অপরদিকে, নিয়মিত নামাজ আদায় বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য, শান্তি ও বরকতের পথে নিয়ে যায়।

প্রত্যেক বাবার উচিত, শৈশব থেকেই তার সন্তানকে উপদেশ দিতে থাকা, হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো, কারণ এটি তোমার দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্যের চাবিকাঠি।

আরও পড়ুননামাজ যেভাবে শারীরিক–মানসিক সুস্থতা বাড়ায়১৪ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিডিয়া ছেড়ে দেয়ায় আমার আয়ে বরকত বেড়েছে: সানাই
  • ‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’