মহাবিশ্বের অমীমাংসিত বিভিন্ন রহস্যের সমাধান করতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্ব দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে মহাবিশ্ব কেন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তা এখনো অজানা। পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ কিন্তু অমীমাংসিত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটি রহস্যময় অন্ধকার শক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করে থাকেন বিজ্ঞানীরা। তবে জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড স্পেস টেকনোলজি অ্যান্ড মাইক্রোগ্রাভিটি ও রোমানিয়ার ট্রান্সিলভেনিয়ান ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসোভের একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ অন্ধকার শক্তি ছাড়াই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এর ফলে অন্তত আংশিকভাবে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের কারণ জানা সম্ভব।

পদার্থবিজ্ঞানে মহাবিশ্বের বিবর্তন এখন পর্যন্ত আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব ও ফ্রিডম্যান সমীকরণ দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। মহাবিশ্বের পরিলক্ষিত সম্প্রসারণ ব্যাখ্যা করার জন্য সমীকরণে একটি অতিরিক্ত অন্ধকার শক্তি ম্যানুয়ালভাবে যোগ করতে হয়। আর তাই এই পদ্ধতির বিষয়ে অনেক বিজ্ঞানীই সন্তুষ্ট নন। তারা ভিন্ন এক জ্যামিতিক মডেল তৈরি করেছেন।

ফিনসলার গ্র্যাভিটি নামের নতুন মডেলটি সাধারণ আপেক্ষিকতার সম্প্রসারণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ফিনসলার মডেলটির মাধ্যমে গ্যাসের মহাকর্ষীয় বলের তথ্য আরও সঠিকভাবে জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন মডেলটির তথ্য জার্নাল অব কসমোলজি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোপার্টিকেল ফিজিকসে প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান ফাইফার জানান, নতুন জ্যামিতিক মডেল মহাবিশ্বের নিয়মকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সম্পূর্ণ নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এর ফলে আমরা অন্ধকার শক্তি ছাড়াই মহাবিশ্বের ত্বরান্বিত সম্প্রসারণ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হতে পারি।

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় যুদ্ধবিরতি নেতানিয়াহুর জন্য ডেকে এনেছে ৬টি বড় বিপদ

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় গত দুই বছরে অগণিত প্রাণহানি ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। তবু দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য এ উপত্যকায় শান্তি যেন অকালেই এসেছে। এমনটাই মনে হচ্ছে কিছু পর্যবেক্ষকের চোখে।

সমালোচকেরা বলছেন, এ যুদ্ধকে নেতানিয়াহু নিজ রাজনৈতিক অবস্থান ও এমনকি তাঁর স্বাধীনতার (বিভিন্ন মামলা থেকে মুক্তি) চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, এসব সমস্যার একটিও মুছে যায়নি।

যুদ্ধবিরতিকে নেতানিয়াহু বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আলন পিনকাসসহ অনেকের মতে, এ যুদ্ধবিরতি ছিল মূলত সাজানো নাটক; যা হোয়াইট হাউসের চাপে নেতানিয়াহু মানতে রাজি হয়েছেন। কারণ, ওয়াশিংটন গাজা যুদ্ধের আর্থিক ও কূটনৈতিক বোঝা বইতে আর রাজি ছিল না।

তাহলে প্রশ্ন উঠছে, যদি নেতানিয়াহু নতুন কোনো যুদ্ধ শুরু করতে না পারেন, তবে আগামী বছরের ইসরায়েলি নির্বাচনের আগে–পরে নেতানিয়াহুর সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে? আর সেগুলো কতটা ভয়ানক হতে পারে?

চলুন, একে একে দেখে নেওয়া যাক।

১. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতানিয়াহু কি আরও একা হয়ে পড়বেন

বর্তমানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যতটা নিঃসঙ্গ, অতীতে কখনো এতটা ছিল না। আর অনেকের কাছেই সেই নিঃসঙ্গতার প্রতীক এখন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

গত দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খাদ্য অবরোধে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। স্বল্প মেয়াদে, যদি না নেতানিয়াহু সরকার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের স্থায়ীভাবে গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বিশ্বের গণমাধ্যমে এ হত্যাযজ্ঞের চিত্র আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাবে। এটি ইসরায়েলের একঘরে অবস্থানকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করবে।

যুদ্ধবিরতিকে নেতানিয়াহু বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আলন পিনকাসসহ অনেকের মতে, এ যুদ্ধবিরতি ছিল মূলত সাজানো নাটক; যা হোয়াইট হাউসের চাপে নেতানিয়াহু মানতে রাজি হয়েছেন। কারণ, ওয়াশিংটন গাজা যুদ্ধের আর্থিক ও কূটনৈতিক বোঝা বইতে আর রাজি ছিল না।

তবে ইসরায়েলের জন্য ক্রমবর্ধমাণ এ কূটনৈতিক নিঃসঙ্গতা নতুন নয়। গত সেপ্টেম্বরেই নেতানিয়াহু যেন এ অবস্থাকে স্থায়ী করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন একটি ‘সুপার স্পার্টা’ তৈরির স্বপ্ন। সেটি প্রাচীন যুদ্ধবাজ গ্রিক নগররাষ্ট্র স্পার্টার আদলে এমন এক রাষ্ট্র, যা অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন, কূটনৈতিকভাবে আলাদা এবং যুদ্ধকেই জীবনধারা হিসেবে গ্রহণ করবে।

এ বক্তব্য ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবে নেননি। ঘোষণার পরই তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ধসে পড়ে এবং শেকেলের মান অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় কমে যায়। দেশের ২০০ বড় প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ‘ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম’ এক বাক্যে বলেছিল, ‘আমরা স্পার্টা নই।’

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দিচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালে অধিবেশনকক্ষ ছেড়ে যান অনেক দেশের প্রতিনিধি। এ সময় চারপাশে খালি আসন পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ