নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কী কথা বললেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদো
Published: 18th, October 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ওই ফোনালাপে তিনি ‘নিপীড়ক বাহিনী’র বিরুদ্ধে ইসরায়েলের লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন বলে দাবি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের।
ইসরায়েল মাচাদোর সঙ্গে নেতানিয়াহুর এ ফোনালাপকে গাজায় তাদের অভিযানের প্রতি তাঁর সমর্থন হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলা হয়, মাচাদো (গাজা) যুদ্ধে ইসরায়েলি নেতার সিদ্ধান্ত ও দৃঢ় পদক্ষেপের গভীর প্রশংসা করেছেন এবং গাজায় জিম্মি মুক্তি চুক্তিরও প্রশংসা করেছেন তিনি।
যদিও এক্সে নিজের পোস্টে মাচাদো ইসরায়েল বা গাজার প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
ভেনেজুয়েলার কর্তৃত্ববাদী শাসক নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শান্তিতে এ বছর নোবেল পুরস্কার জিতেছেন মাচাদো।
কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গত সপ্তাহে মাচাদোকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মাদুরোকে উৎখাতের চেষ্টায় সমর্থন পেতে মাচাদো অতীতে নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।নিজের ওই পোস্টে খুব সাবধানে শব্দচয়ন করেছেন মাচাদো। তিনি লিখেছেন, ‘ভেনেজুয়েলার মানুষ জানে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে কর্তৃত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য অপরিসীম সাহস, শক্তি ও নৈতিক মনোবল প্রয়োজন।’
আরও পড়ুনশান্তিতে নোবেল পেলেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মাচাদো১০ অক্টোবর ২০২৫মাচাদো আরও লিখেছেন, ‘যেভাবে আমরা ভেনেজুয়েলায় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করি, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশই ভয়ের সঙ্গে নয়; বরং মর্যাদা, ন্যায় ও আশায় পরিপূর্ণ একটি ভবিষ্যৎ গড়ার অধিকার রাখে।’
যেভাবে আমরা ভেনেজুয়েলায় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করি, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশই ভয়ের সঙ্গে নয়; বরং মর্যাদা, ন্যায় ও আশায় পরিপূর্ণ একটি ভবিষ্যৎ গড়ার অধিকার রাখে।—মারিয়া কোরিনা মাচাদো, শান্তিতে নোবেলজয়ীতবে মাচাদো সরাসরি ইরানের শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করেন। ইরানের শাসনব্যবস্থাকে তিনি ‘মাদুরোর শাসনের প্রধান সমর্থকদের একজন’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, তারা হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকেও সমর্থন করে।
মাচাদোকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
আরও পড়ুনএ–ই যদি হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা...১২ অক্টোবর ২০২৫
কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গত সপ্তাহে মাচাদোকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মাদুরোকে উৎখাতের চেষ্টায় সমর্থন পেতে মাচাদো অতীতে নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
গুস্তাভো পেত্রো ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কট্টর সমালোচক।
ইসরায়েলের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। মাদুরোর পূর্বসূরি ভেনেজুয়েলার সমাজতান্ত্রিক নেতা হুগো চাভেজ ২০০৮ সালের গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে ২০০৯ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
আরও পড়ুনচুক্তির পর সরকার টেকানো নিয়ে চাপে নেতানিয়াহু১১ অক্টোবর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব ল প রস ক র ইসর য় ল র র জন য কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: আলী রীয়াজ
একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
সেই অভীষ্ট জায়গা গণতন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রত্যাশা জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে, যেন আমরা বলতে পারি যে আমাদের অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হচ্ছে, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। আমাদের বহু স্রোত, আমরা সকলে এক জায়গায় যে আমরা যেকোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দাঁড়িয়ে থাকব।’
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন অধ্যাপক আলী-রীয়াজ। যিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশের নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব এবং অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য এটি হচ্ছে আমাদের দীর্ঘ পথের যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শের যে রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা তা, ৫৩ বছর ধরে বারবার হোঁচট খেয়েছে। এরপরও দেশের নাগরিকেরা গণতন্ত্র এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আজকে এই জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছে।
এই জুলাই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়, এটা নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ও রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সবার যে চেষ্টা, তা এক দিনে সাফল্য অর্জন করবে না এবং একটি দলিল কেবল সেই নিশ্চয়তা দেবে না বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে। দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিক দিশা নির্দেশক বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে।’