রংপুরের তারাগঞ্জে কবরের মাটি তোলাকে কেন্দ্র করে বিরোধে প্রতিপক্ষের মারধরে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকাল আটটার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খালেকুজ্জামান নামের ওই ব্যক্তি। এর আগে গতকাল শুক্রবার ভোরে তিনি মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

আজ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের কিসামত মেনানগর বড়বাড়ি গ্রামে খালেকুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর স্ত্রী আহাজারি করছেন। বলছেন, ‘মোর স্বামী তো মারামারি থামাইতে গেছিল, কারও গায়ে হাত তোলে নাই। কিন্তু ওমরা খুন্তি দিয়া মাথা ফাটায়, মগজ বের কইরা ওক (স্বামী) মাইরা ফেলল। এলা মোর কী হইব? বাচ্চা দুইটা কাক আব্বু কইয়া ডাকব? ওমরা যে এতিম হইয়া গেল। হামাক দেখার কায়ও রইল না।’

মামলা, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের কিসামত মেনানগর বড়বাড়ি গ্রামের আবদুল জব্বারের সঙ্গে খালেকুজ্জামানের ভাইদের দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। গতকাল ফজরের নামাজ শেষে নিহত খালেকুজ্জামানের ভাই আবদুল ছালেক বাড়ির পাশে তাঁদের দাদির কবর জিয়ারত করতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, কবরের মাটি তুলে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে আবদুল জব্বারের ছেলে বাবু মিয়ার কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বাবু মিয়া, তাঁর ভাই লেবু মিয়া, দুলাল মিয়া ও চান মিয়া মিলে আবদুল ছালেককে মারধর করেন। খবর পেয়ে ছুটে যান আবদুল ছালেকের ভাই খালেকুজ্জামান ও মাহবুবুর রহমান। এরপর তাঁরাও হামলার শিকার হন। এ সময় খালেকুজ্জামানের মাথায় খুন্তি দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল আটটার দিকে খালেকুজ্জামান মারা যান।

খালেকুজ্জামানের মা ছালেমা বেগমও কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশীরা পানি ঢেলে তাঁর জ্ঞান ফেরান। পরে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর ছেলেটার দোষ কী? কেন দাঙ্গি মাইরা ফেলল? যেই মোর বেটাক মারছে, তার বিচার চাই।’

স্থানীয় লোকজন জানান, খালেকুজ্জামানের সহায়-সম্বল বলতে ৩০ শতক জমি ছাড়া কিছুই ছিল না। দিনমজুরের কাজ করে স্ত্রী, দুই সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবার এখন দিশাহারা।

নিহত ব্যক্তির ভাতিজা জান্নাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নির্দোষ চাচারে মাইরা ফেলছে। আমার বাবাও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তেছে। আমরারে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দিছে। আমরা খুনির বিচার চাই, আমার চাচার হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ ফারুক বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। লাশ ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও টেলিকম কর্মকর্তা বঙ্কিম ব্রহ্মভট্টের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ওই জালিয়াতির তিনিই মূল পরিকল্পনাকারী বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এই কেলেঙ্কারির কারণে ব্ল্যাকরকের ঋণ শাখা এবং আরও কয়েকটি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী সংস্থার ৫০ কোটি কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এটিকে ‘বিস্ময়কর’ আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

কে এই বঙ্কিম ব্রহ্মভট্ট

ব্রহ্মভট্ট বৈশ্বিক টেলিকম-পরিষেবা শিল্পে অপেক্ষাকৃত অপরিচিত দুটি সংস্থা—ব্রডব্যান্ড টেলিকম ও ব্রিজভয়েসের সঙ্গে যুক্ত। দুটি সংস্থাই ব্যাঙ্কাই গ্রুপের অধীনে কাজ করে।

২০২৫ সালের জুলাই মাসে ব্যাঙ্কাই গ্রুপ এক্স (পূর্বের টুইটার)-এর একটি পোস্টে ব্রহ্মভট্টকে প্রেসিডেন্ট এবং সিইও হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।

এক্সে দেওয়া ব্যাঙ্কাই গ্রুপের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে—‘টেলিকমিউনিকেশন শিল্পে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নেতা, যারা টেলকো, অপারেটর এবং আরও অনেকের সঙ্গে টেলিকম প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ার ব্যবসায়িক সৌহার্দ্যকে লালন করে।’

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অনুসারে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বের টেলিকম অপারেটরদের অবকাঠামো ও সংযোগের সরঞ্জাম সরবরাহ করে।

মনে হচ্ছে, ব্রহ্মভট্টের লিঙ্কডইন প্রোফাইলটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক মাস আগেও ব্রহ্মভট্ট নিউইয়র্কের গার্ডেন সিটিতে অফিস চালাতেন।

জালিয়াতির ধরন

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ বকেয়া রয়েছে। ব্ল্যাকরকের এইচপিএস ইনভেস্টমেন্ট পার্টনার্সের নেতৃত্বে ঋণদাতারা তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়া চালান ও ভুয়া পাওনা অ্যাকাউন্ট তৈরি করার অভিযোগ এনেছেন। বড় অঙ্কের ঋণের জন্য জামানত হিসেবে ওইসব অ্যাকাউন্ট বানানো হয়েছিল।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল যখন ভারত ও মরিশাসে স্থানান্তর করা হয়েছিল, তখন তাদের নেটওয়ার্ক কাগজে-কলমে আর্থিক শক্তির একটি মায়াজাল তৈরি করা হয়েছিল।

তবে ব্রহ্মভট্টের আইনজীবী এই জালিয়াতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ঋণদাতারা দাবি করেছেন, ব্রহ্মভট্ট কারিওক্স ক্যাপিটাল ও বিবি ক্যাপিটাল এসপিভির মতো আর্থিক সংস্থার এক জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, যা ব্ল্যাকরকের মতো কয়েকটি বেসরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রহ্মভট্ট ভুয়া গ্রাহক চালান তৈরি করেন এবং সেই জাল কাগজপত্র দিয়ে জামানত তৈরি করে তার বিপরীতে ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, পরে তিনি ভারত ও মরিশাসে সম্পদ স্থানান্তর করেন। এখন তাঁর দুটি কোম্পানি এবং ব্রহ্মভট্ট নিজে দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করেছেন।

গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্রহ্মভট্টের আইনজীবী কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, জালিয়াতির সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ