ঠাকুরগাঁওয়ে শুক নদীর অভয়াশ্রমে মাছ ধরা উৎসব
Published: 18th, October 2025 GMT
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বুড়ি বাঁধ অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ ধরা উৎসবে মেতেছে হাজারো সৌখিন মাছ শিকারী। অনেকে শুধু দেখতে ও মাছ কিনতে গিয়েছেন সেখানে।
শুক নদীর তীরে সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত বুড়ি বাঁধটি। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে বাঁধের গেট খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই শুরু হয় মাছ ধরা উৎসব।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সারাদিন জাল, পলো আর মাছ রাখার পাত্র খলই নিয়ে আগের রাত থেকেই বাঁধ এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন শত শত মানুষ। কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় করে মাছ ধরছেন। এ যেন এক প্রতিযোগিতা। আর বাঁধে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা।
মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে নদীর তীরে। কেবল পুরুষই নয়, নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারো হাতে খেওয়া জাল, কারো হাতে লাফি জাল, কারো হাতে পলো। অনেকেই কোনো সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে।
মাছ ধরা উৎসবকে ঘিরে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। বাইরে থেকে আসা মানুষের মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখার জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গ্যারেজও।
মাছ ধরতে আসা সকলেরই অভিযোগ, তারা মাছ পাচ্ছেন না। রাত থেকে জাল ফেলেও কাঙ্খিত মাছ মিলছে না। দেশীয় প্রজাতির মাছ এক প্রকার বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক বছর আগেও এই বাঁধে প্রচুর দেশীয় মাছ ধরা পড়তো কিন্তু এখন মাছ নেই। কারেন্ট জাল, রিং জালসহ বিভিন্ন কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে মনে করেন মাছ ধরতে আসা অনেকে।
অপরদিকে শহর থেকে দেশীয় মাছ কিনতে যাওয়া ক্রেতারা অভিযোগ করেন মাছের দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তেমন পাওয়া যায় না এখানে। যা পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম অনেক। পুঁটি মাছ ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতাই মাছ কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে খড়া মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
ঢাকা/হিমেল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ছ ধরত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইনানীতে ‘ফাইভ স্টার’ খাবার এখন সাধারণ মানুষের নাগালে
সন্ধ্যা নামতেই কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকতের আকাশে ঝুলে পড়ে রঙিন আলো। দূরে ঢেউয়ের গর্জন, কাছে ভেসে আসে বারবিকিউয়ের ধোঁয়া। একপাশে কেউ চা হাতে গল্পে মশগুল, অন্যপাশে শিশুরা মকটেইলের গ্লাসে ফেনা উড়িয়ে হাসছে।
এমন মনোরম পরিবেশে সি পার্ল বিচ রিসোর্টে শুরু হয়েছে তিন মাসব্যাপী বর্ণিল ফুড ফেস্টিভ্যাল। যেখানে খাবার আর আনন্দ মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অপূর্ব উৎসবের আবহ। আর ‘ফাইভ স্টার’ মানের খাবারগুলো খেতে পারবেন সাধারণ মানুষও।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইনানী সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র সামনে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন মাঠে বসেছে ঐতিহ্যবাহী কাঠ আর খড়ের ছাউনি ১২-১৫টি স্টল।
পর্যটক, স্থানীয় ও অতিথিদের জন্য এখানে সাজানো হয়েছে দেশি-বিদেশি নানা মুখরোচক খাবারের সমাহার। এক স্থানে সমুদ্রের হাওয়া আর খাবারের গন্ধে তৈরি হয়েছে এক অন্যরকম আবেশ। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে এই ফুড ফেস্টিভ্যাল।
মেন্যুতে রয়েছে ফাস্টফুড, আইসক্রিম ও ওয়াফলস, চা-কফি, জুস ও মকটেইল, চটপটি-ফুচকা, ডোনাট-নাগেটস, পিৎজা, মিষ্টান্ন, ফ্যামিলি ফ্রাই বাস্কেট, এগ-চিকেন-লিভার রোল, বিরিয়ানি, নুডুলসসহ নানা পিঠা-পায়েস ও ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবার।
ওই রিসোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্র্যান্ড ম্যানেজার মোহাম্মদ আবরার রাজ্জাক বলেন, “এটি শুধুই স্ট্রিটফুড নয়, বরং ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন। আমরা চেষ্টা করেছি দেশীয় স্বাদকে আন্তর্জাতিক পরিবেশে তুলে ধরতে। ফুড ফেস্টিভ্যালের প্রতিটি স্টলে রাখা হয়েছে খাবারের মান ও পরিচ্ছন্নতার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা। দামও রাখা হয়েছে সবার নাগালে ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।”
তিনি আরো বলেন, “দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার এখানে রাখা হয়েছে, যেন পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদও উপভোগ করতে পারেন।”
ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাসুদুল হক বলেন, “আমরা শুধু খাবার বিক্রির আয়োজন করিনি বরং একটি অভিজ্ঞতা তৈরি করেছি। সি পার্লের এই ফুড ফেস্টিভ্যালে পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের জন্য রয়েছে এমন এক পরিবেশ যেখানে খাবার, সংগীত ও সাগরের হাওয়া মিলে তৈরি করে স্মরণীয় মুহূর্ত। আমাদের লক্ষ্য পর্যটকরা যেন এখানে এসে সমুদ্রের সৌন্দর্যের সঙ্গে নানান রকমের খাবার উপভোগ করতে পারেন।”
ফুড ফেস্টিভ্যালের পুরো এলাকা সাজানো হয়েছে থিমভিত্তিক আলোকসজ্জায়। সন্ধ্যা নামতেই সৈকতের ঢেউয়ের শব্দে যোগ হয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, মৃদু আলোর নিচে খাবারের গন্ধে ভরে যায় পরিবেশ। রিসোর্টের খোলা প্রান্তরে রাখা হয়েছে আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা, যেখানে বসে পর্যটকরা একসঙ্গে খাবার উপভোগ করছেন।
ঢাকা থেকে আগত দম্পতি মাসুম রানা ও মোবাশ্বেরা সালসাবিল বলেন, “আমরা ধানমন্ডি থেকে বেড়াতে এসেছি। ইনানীর সৈকতের এমন পরিবেশে ফুড ফেস্টিভ্যাল হবে ভাবতেই পারিনি। এখানকার খাবারের স্বাদ দারুণ, বিশেষ করে বিরিয়ানি আর মকটেইল। মনে হচ্ছে ঢাকার কোনো বড় রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি কিন্তু খোলা আকাশের নিচে সাগরের হাওয়ায়!”
রাজধানীর উত্তরা থেকে সন্তানসহ ঘুরতে আসা পরিবারের নুসরাত জাহান মিনু বলেন, “আমার ছোট বাচ্চারা আইসক্রিম আর ওয়াফলস খুব পছন্দ করেছে। জায়গাটা খুবই সুন্দর ও নিরাপদ। সিপার্লের আয়োজনটি পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জন্য একদম উপযুক্ত। দামও হাতের নাগালে, তাই ইচ্ছেমতো খাওয়া যায়।”
স্থানীয় ছেপটখালীর বাসিন্দা মো. শহিদুল আরাফাত বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ হয়েও এখানে এসে ফাইভ স্টার রিসোর্টের খাবার খেতে পারছি, এটা বড় আনন্দের বিষয়। ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় ভালো মানের খাবার পাওয়া যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আশা করি এমন আয়োজন নিয়মিত হবে।”
এ আয়োজনকে ঘিরে এরইমধ্যে কক্সবাজারের পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। অনেকেই বলছেন, এমন আয়োজন সৈকত শহরে খাবার সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
তিন মাসব্যাপী এই ফুড ফেস্টিভ্যাল কেবল এক উৎসব নয়, বরং কক্সবাজারে পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
ঢাকা/এস