শৈত্যপ্রবাহ কমে তাপমাত্রা বাড়ল, কেন এমন হলো জানাল আবহাওয়া অফিস
Published: 12th, January 2025 GMT
দেশের কয়েকটি স্থানে তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে মৃদু ধরনের যে শৈত্যপ্রবাহ ছিল, তা কমে এসেছে। আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ থেকে ১০–এর মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। গতকাল শনিবারও দেশের পাঁচ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামীকাল সোমবার তাপমাত্রা আরও খানিকটা বাড়তে পারে। তাপমাত্রা আবার কমতে পারে আগামী মঙ্গল বা বুধবার থেকে। তবে তখনো তাপমাত্রা খুব বেশি কমবে না বলেই আবহাওয়াবিদদের ধারণা।
আজ সকাল সোয়া ৯টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও যশোরে, ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সেই তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ রাজধানীতেও তাপমাত্রা বেড়েছে। আজ সকালে রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল তা ছিল ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ মাসে এখন পর্যন্ত তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়নি। মাত্র এক দিন তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল। যাকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। পরদিনই অবশ্য তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এবার এখন পর্যন্ত তাপমাত্রা খুব কম না হওয়া বা শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘায়িত না হওয়ার পেছনে আরব সাগরে ক্রিয়াশীল লঘুচাপের কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো.
আগামী মঙ্গল বা বুধবার থেকে তাপমাত্রা খানিকটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ। তিনি বলেন, তবে তখনো তাপমাত্রা খুব বেশি কমবে না। ওই সময় তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা কম।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল