চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানিবন্দি এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা
Published: 16th, August 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সপ্তাহখানেকরও বেশি সময় ধরে জলাবদ্ধতা ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগের পাশাপশি জ্বর-সর্দি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় ওইসব এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ১০-১২দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর ও শিবগঞ্জ এই দুটি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওইসব এলাকার মানুষের বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত।
পানির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর, শিবগঞ্জের পাঁকা ও দুর্ভলপুর ইউনিয়নের মানুষ। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানির অভাব, গোখাদ্যসহ চতুর্মুখী সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে পানিবন্দি মানুষ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। কিন্তু নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এখন পর্যন্ত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো টিমই গঠন করা হয়নি। তবে শিবগঞ্জ উপজেলার প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে দুদিন পাঁকা-উজিরপুর ও দুলর্ভপুর ইউনিয়নের পানিবন্দি চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় এবং হেপাটাইটিস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে এ রোগগুলো মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। কাটা-ছেঁড়া বা আঘাতের জায়গা পানিতে ভিজে থাকলে সেখানে সংক্রমণ দেখা দেয়, যা সময়মতো চিকিৎসা না পেলে গ্যাংগ্রিনের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
যথাযথ চিকিৎসার অভাবে অনেকের মধ্যে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট এবং কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা থেকে স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শিবির স্থাপন, ভ্রাম্যমাণ মেডিকেলের মাধ্যমে জরুরি ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নারায়ণপুর ইউনিয়নের জমিস উদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘আমরা অবহেলিত জনপদের মানুষ। এদিকে একবার কেউ এলে পরেরবার আর আসতে চান না। আমাদের ইউনিয়নটির বেশিরভাগ অংশ পানিবন্দি। আমাদের দুর্যোগ-দুর্ভোগের জন্য এবারে কোন চিকিৎসা সেবা পেলাম না। এখনতো প্রায় প্রত্যেক ঘরেঘরে জ্বর-সর্দি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মানুষও কম নেই। এরপরেও চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কেউ এলো না।’’
শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের বাসন্দিা জুয়েল রানা বলেন, “পানিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব। এছাড়া সাত দিনের বেশি সময় ধরে বাড়ির ভিতরসহ চারপাশে পানি থাকায় বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন মানুষজন। চুলকানি থেকে শুরু করে ডায়রিয়াও হচ্ছে অনেকের। সুষম খাবারের পাশাপাশি এখন পানিবন্দি মানুষের বেশি প্রয়োজন চিকিৎসা সেবা। আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রতিবছরই পদ্মা নদীর তীরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় ঠিকই কিন্তু কোন পূর্বাভাস আমাদের কাছে পৌঁছে না। যে কারণে আমরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারি না। নির্দিষ্টস্থানে চিকিৎসা শিবির স্থাপন অথবা ভ্রাম্যমাণ মেডিকেলের মাধ্যমে জরুরি ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে বৃহস্পতিবার পাঁকা, উজিরপুর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আমরা নিজ উদ্যোগেই এ কার্যক্রম করেছি কিন্তু পানিবন্দি মানুষের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। আমরা সিভিল সার্জন, বিভাগীয় কর্মকর্তাদের এই সঙ্কটের কথা জানিয়েছি। ওইসব এলাকার আরো পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। যা বলে বোঝানো যাবে না।”
পানিবন্দি মানুষের চিকিৎসাসেবার বিষয়ে জানতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সির্ভিল সার্জন ডা.
ঢাকা/শিয়াম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ র প ন বন দ শ বগঞ জ বগঞ জ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানিবন্দি এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সপ্তাহখানেকরও বেশি সময় ধরে জলাবদ্ধতা ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগের পাশাপশি জ্বর-সর্দি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় ওইসব এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ১০-১২দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর ও শিবগঞ্জ এই দুটি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওইসব এলাকার মানুষের বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত।
পানির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর, শিবগঞ্জের পাঁকা ও দুর্ভলপুর ইউনিয়নের মানুষ। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানির অভাব, গোখাদ্যসহ চতুর্মুখী সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে পানিবন্দি মানুষ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। কিন্তু নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এখন পর্যন্ত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো টিমই গঠন করা হয়নি। তবে শিবগঞ্জ উপজেলার প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে দুদিন পাঁকা-উজিরপুর ও দুলর্ভপুর ইউনিয়নের পানিবন্দি চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় এবং হেপাটাইটিস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে এ রোগগুলো মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। কাটা-ছেঁড়া বা আঘাতের জায়গা পানিতে ভিজে থাকলে সেখানে সংক্রমণ দেখা দেয়, যা সময়মতো চিকিৎসা না পেলে গ্যাংগ্রিনের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
যথাযথ চিকিৎসার অভাবে অনেকের মধ্যে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট এবং কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা থেকে স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শিবির স্থাপন, ভ্রাম্যমাণ মেডিকেলের মাধ্যমে জরুরি ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নারায়ণপুর ইউনিয়নের জমিস উদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘আমরা অবহেলিত জনপদের মানুষ। এদিকে একবার কেউ এলে পরেরবার আর আসতে চান না। আমাদের ইউনিয়নটির বেশিরভাগ অংশ পানিবন্দি। আমাদের দুর্যোগ-দুর্ভোগের জন্য এবারে কোন চিকিৎসা সেবা পেলাম না। এখনতো প্রায় প্রত্যেক ঘরেঘরে জ্বর-সর্দি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মানুষও কম নেই। এরপরেও চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কেউ এলো না।’’
শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের বাসন্দিা জুয়েল রানা বলেন, “পানিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব। এছাড়া সাত দিনের বেশি সময় ধরে বাড়ির ভিতরসহ চারপাশে পানি থাকায় বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন মানুষজন। চুলকানি থেকে শুরু করে ডায়রিয়াও হচ্ছে অনেকের। সুষম খাবারের পাশাপাশি এখন পানিবন্দি মানুষের বেশি প্রয়োজন চিকিৎসা সেবা। আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রতিবছরই পদ্মা নদীর তীরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় ঠিকই কিন্তু কোন পূর্বাভাস আমাদের কাছে পৌঁছে না। যে কারণে আমরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারি না। নির্দিষ্টস্থানে চিকিৎসা শিবির স্থাপন অথবা ভ্রাম্যমাণ মেডিকেলের মাধ্যমে জরুরি ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে বৃহস্পতিবার পাঁকা, উজিরপুর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আমরা নিজ উদ্যোগেই এ কার্যক্রম করেছি কিন্তু পানিবন্দি মানুষের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। আমরা সিভিল সার্জন, বিভাগীয় কর্মকর্তাদের এই সঙ্কটের কথা জানিয়েছি। ওইসব এলাকার আরো পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। যা বলে বোঝানো যাবে না।”
পানিবন্দি মানুষের চিকিৎসাসেবার বিষয়ে জানতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সির্ভিল সার্জন ডা. একেএম শাহাব উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/শিয়াম/এস