Samakal:
2025-07-31@16:05:31 GMT

ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট

Published: 12th, January 2025 GMT

ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট

ঈশ্বরদীর মানিকনগর গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম সরদার। শুক্রবার বিকেলে ক্ষেতের ফুলকপি কেটে ফেলছিলেন তিনি। এ সবজির আবাদ করেছিলেন দুই বিঘা জমিতে। ফলনও ভালো হয়েছিল। উৎপাদিত সবজি বিক্রির পর পাকা ঘর করার ইচ্ছা ইচ্ছা ছিল তাঁর। তবে দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারে নেওয়ার খরচও উঠছে না। রাগে-ক্ষোভে ক্ষেতের ফুলকপি গাছসহ কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। এ কৃষকের ভাষ্য, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের একই অবস্থা।

পাবনার ঈশ্বরদী শীতকালীন সবজি উৎপাদনের জন্য বেশ পরিচিত। উপজেলায় অন্তত ২১ হাজার কৃষক সবজি উৎপাদনে যুক্ত। এর মধ্যে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক ১৫ জন। উৎপাদিত সবজি যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে চলতি মৌসুমে ভালো ফলন হলেও কৃষক রয়েছেন বিপদে, দাম পাচ্ছেন না। ফলে মনিরুলের মতো অনেকে ক্ষেতেই মিশিয়ে দিচ্ছেন বা গবাদি পশুকে খাওয়াচ্ছেন। ক্রেতা কম থাকায় জমিতে নষ্ট হচ্ছে অনেক সবজি। 

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। আর বাজারজাতকরণের জন্য বিপণন বিভাগ রয়েছে। তাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা নেই। এতে কৃষক কষ্ট করে ফসল ফলালেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শ্রমিকের মজুরি দিয়ে সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করলে খরচ ওঠে না।
কৃষি বিভাগ বলছে, সারাদেশে একযোগে শীতকালের সবজি উঠতে শুরু করায় দরপতন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ এবং বিপণন অধিদপ্তরের সমন্বয় না থাকায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে কৃষককে। ঈশ্বরদীর পাইকারি বাজারে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা মণ। মুলার কেজি ৫০ পয়সা। শিম ৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ১০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচের কেজি ২০ টাকা।
চার বিঘা জমিতে মুলার আবাদ করেছেন সাহাপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের কৃষক শাহিনুজ্জামান শাহিন। তবে বাজারে ক্রেতা না থাকায় ২০ টাকা মণ বা ৫০ পয়সা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এতে শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচও ওঠে না। এ কারণে সবজি তুলছেন না তিনি। আরেক কৃষক আমিরুল ইসলামের এক বিঘা ফুলকপির আবাদে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ। এ সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।

মুলাডুলির আমিনুর রহমান বাবুর শিমের ক্ষেত পরিচর্যায় প্রতিদিনই খরচ করতে হয়। এখন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা মণ। অথচ দিনে শ্রমিকের মজুরি ৬০০ টাকা। তিনিও ক্ষেত থকে সবজি তোলা বন্ধ রেখেছেন। জানা গেছে, উপজেলার সাহাপুর, সলিমপুর, মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, লক্ষ্মীকুণ্ডা ও পাকশী ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়। গত বছর ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১১ টন সবজি উৎপাদন হয়েছিল। এবার ৪০০ হেক্টরে বেগুন, ৯০০ হেক্টরে ফুলকপি, ২১৫ হেক্টরে বাঁধাকপি, ৩৮০ হেক্টরে ওলকপি, ৯২০ হেক্টরে গাজর, ৭০ হেক্টরে টমেটো, ১৫০ হেক্টরে লাউ, ১ হাজার ১৮০ হেক্টরে শিম, ১১০ হেক্টরে লালশাক, ৯০ হেক্টরে মটরশুঁটি, ৯৩৩ হেক্টরে মুলা, ১২০ হেক্টরে পালং শাক, ১১০ হেক্টরে পুঁইশাক এবং ১৫০ হেক্টরে ধনেপাতা আবাদ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, প্রতি হেক্টরে ২৫ টন লাউ, ২১ টন ফুলকপি, ৪০ টন বাঁধাকপি, ২০ টন ওলকপি, ৪০ টন গাজর, ৫৫ টন টমেটো, ৪৫ টন লাউ, ২২ টন শিম, ১২ টন লালশাক, ৯ টন মটরশুঁটি, ৩৫ টন মুলা, ১২ টন পালং শাক, ৩৫ টন পুঁইশাক ও ১০ টন ধনেপাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা।
সাহাপুর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম সরদার গত বছর তাঁর ৩ বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করেছিলেন। খরচ বাদে লাভ হয়েছিল ৪ লাখ টাকা। এবারও লাভের আশায় শীতকালীন সবজির আবাদ করেছেন ৪ বিঘা জমিতে। তবে এবার খরচও উঠবে না বলে জানান তিনি। মিরকামারি গ্রামের আব্দুল বারি ওরফে কপি বারীর ভাষ্য, এবার প্রায় ২১ হাজার ছোট ছোট কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
অরণকোলা মিয়াপাড়ার মাসুম মণ্ডল বলেন, মৌসুমের প্রথমে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। এখন দাম কমে যাওয়ায় ভরাডুবি হতে চলেছে তাদের। কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ৩৮ হাজার কৃষকের মধ্যে ২১ হাজারই সবজির আবাদ করেন। জাতীয় কৃষকের তালিকায় রয়েছেন প্রায় ৭০০ জন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঈশ্বরদীতে সব ধরনের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক দরপতন ঘটেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রহল্লাহ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা কৃষি উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ও প্রতিবেদন জেলা বিপণন অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করি।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ওই বৈঠক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সেনা সদরের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ওই মামলার তদন্ত করছে। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।

এই মামলা তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। ‘তারা প্রিয় স্বদেশ’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’, ‘প্রজন্ম ৭১’, ‘শেখ হাসিনা’সহ বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সদস্য। একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে জানতে পেরেছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বসুন্ধরায় ওই গোপন সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি বাসা থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা-পুলিশ। ওই দিন একই এলাকার একটি বাসা থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিনকে (শম্পা) গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বামী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ১৩ জুলাই ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সোহেল রানা ও শম্পাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য যাচাই করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিককে হেফাজতে নেওয়া হয়।

মেজর সাদিক নামের একজন আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে—এমন সংবাদের বিষয়ে আজ সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত। তাঁর বিষয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলতে পারব।’

ওই ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এ রকম ঘটনা জানার পরে সেনাবাহিনীর হেফাজতেই তিনি আছেন। তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা এবং গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন বলেছেন, মেজর সাদিকের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংগঠিত করে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভাটারা থানা এলাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ৭ নম্বর রোডের কে বি কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেওয়া হয়। মেজর সাদিক সেদিন সরকার উৎখাতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

বসুন্ধরার ওই কনভেনশন হলের ব্যবস্থাপক মুজাহিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিবি সূত্র জানিয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবে সারা দিন কনভেনশন হলের সব সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখেছিলেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীসহ সমবেতদের নাশকতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরও অন্তত চারটি প্রশিক্ষণ হয়েছিল। তবে সবগুলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

মামলার তদন্ত সম্পৃক্ত ডিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা, উপস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য গ্রেপ্তার অন্যদেরও রিমান্ডে এনে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গোপন এই ষড়যন্ত্রে যাঁরা জড়িত ছিলেন, সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ