জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রেড জুলাইয়ের ও জাস্টিস ফর জুলাই-এর আয়োজনে জুলাই স্মরণে “লাল সন্ধ্যা” শীর্ষক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ‘জুলাই স্মরণে লাল সন্ধ্যা’ শিরোনামে রেড জুলাই এবং জাস্টিস ফর জুলাইয়ের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘কল ফ্রম প্যারাডাইজ, জাহাঙ্গীরনগর টু ঢাকা’ শীর্ষক একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া সংগীত পরিবেশনে অংশ নেয় ইকরা শিল্পীগোষ্ঠী এবং ‘পাপেট বিপ্লব ও পরবর্তী বাস্তবতা’ শীর্ষক নাটক প্রদর্শন করেছে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার-টি.

এস.সি। এছাড়া ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।

 

এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু জুলাই আন্দোলন নয়, বরং বাংলাদেশের সব গণআন্দোলনের অগ্রসৈনিক। যুগের পর যুগ যা আমরা করতে পারিনি, আমাদের ছোট ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্রআন্দোলনের মাধ্যমে তা করে দেখিয়েছে। এ ধরনের মহৎ আন্দোলন পৃথিবীতে বিরল।” 

তিনি আরো বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ ও আহতদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আপোস করার সুযোগ নেই। যাদের হাতে এই আন্দোলনের রক্ত, যারা অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে গুম, খুন, নির্যাতন করেছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সেই দোসরদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তাদের বিচারের আওতায় আনতে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই জেনারেশনের পরবর্তী যেকোনো জেনারেশনেও আওয়ামী লীগকে কেউ ক্ষমা করবে না।” 

অনুষ্ঠানে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর মাটি, ইট আর শিক্ষার্থীদের হৃদয় রক্তের মতোই লাল। প্রতিটি দশকে আমরা রক্ত দিয়ে নতুন দশকের আয়ু কিনেছি।”

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠান আমাদের ঐক্যের শক্তি স্মরণ করিয়ে দেয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে জাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোকে আমরা আহ্বান জানাই, তারা যেন জাকসু নির্বাচনকে সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করে। এ প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা আজ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করার পথে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। তবে, এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, যেগুলো মোকাবিলা করতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরিহার্য।” 

শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন এই আয়োজন সফল করার জন্য রেড জুলাই, জাস্টিস ফর জুলাইসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, পিআইবি-এর পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

ঢাকা/আহসান/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি

বিগত শতকের ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫, এই দুই দশক ছিল দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের খুবই তাৎপর্যময় ঘটনাবহুল সময়। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও এই কালপর্বে সমাজতন্ত্রের পতনসহ এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা মানুষের বিশ্বাস, আদর্শ, চিন্তা, অভিব্যক্তি ও জীবনাচরণে নানাভাবে প্রভাব রেখেছে। শিল্পীদের ভাবনায় সমকাল কেমনভাবে তার সৃজনকলায় উদ্ভাসিত হয়েছিল, তার একঝলক দেখে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো কলাকেন্দ্রে।

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ৯/৪ নম্বর বাড়ির কলাকেন্দ্রে শুরু হলো ‘ফিরে দেখা’ নামে ১৪ শিল্পীর যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।

এই প্রদর্শনীতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্বে যাঁরা চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরা পরবর্তীকালে ‘ঢাকা পেইন্টার্স’, ‘সময় গ্রুপ’সহ বেশ কিছু গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকেই কাজী রাকিব, দীপা হক, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, নিসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, সাইদুল হক জুইস, ফারেহা জেবা, রতন মজুমদার, হাবিবুর রহমান, রুহুল আমিন কাজল, লালা রুখ সেলিম, তৌফিকুর রহমান ও ওয়াকিলুর রহমানের প্রায় ৬০টি শিল্পকর্ম নিয়ে এই ‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনী।

শিল্পীরা মূলত আশি ও নব্বই দশকে যেসব কাজ করেছিলেন, তার কিছু কিছু নমুনা রয়েছে এখানে। অধিকাংশ কাজই শিল্পীদের ব্যক্তিগত সংগ্রহের। ছাপচিত্র, জলরং, ড্রয়িং, মিশ্রমাধ্যম, অ্যাক্রিলিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমের চিত্রকলা ও ভাস্কর্য রয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে।

কলাকেন্দ্রের প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রচলিত অর্থে কোনো প্রধান বা বিশেষ অতিথি থাকেন না। প্রদর্শনীর কাজ নিয়ে এক বা একাধিক আলোচক আলোচনা করেন। সূচনা বক্তব্যে কলাকেন্দ্রের পরিচালক শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে দুই দশকজুড়ে সমাজ ও সমকালীন ভাবনা ও মনোভাব শিল্পীদের কাজে যেভাবে প্রকাশ পেয়েছিল, তার একটি খণ্ডচিত্র এই প্রদর্শনীতে পাওয়া যাবে।

‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনীটির মূল আলোচক ছিলেন অধ্যাপক আবুল মনসুর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিগত সময়ের শিল্পীদের কাজ দেখা ও পর্যালোচনার সুযোগ কম। সরকারিভাবেও তেমন উদ্যোগ নেই। ফলে নতুন প্রজন্ম বিগত শিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে জানতেই পারে না। দেশের ইতিহাসে ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ এক বিশেষ অধ্যায়। এ সময় রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের প্রভাব শিল্পকলায় প্রতিফলিত হয়েছিল। সে সময়ের তরুণ শিল্পীরা বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিবর্তন, ইতিহাস ঐতিহ্য, আপন সংস্কৃতিকে তাঁদের নিজেদের মতো করে ধারণ করেছিলেন। তাঁরা যে শিল্পভাষা, ভাবনা, উপকরণ, উপস্থাপনা নিয়ে কাজ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা আমাদের চিত্রকলায় এক নতুন গতিমুখ তৈরি করেছে। সেই তরুণদের অনেকেই তাঁদের কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। নিজের কাজে অনেক পরিণত হয়েছেন। খ্যাতি অর্জন করে বর্তমানে দেশের অন্যতম শিল্পী হয়ে উঠেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের নানাভাবে পথ দেখিয়েছেন।’

শিল্পের আয়নায় অতীতকে দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকেরা এই প্রদর্শনীতে এলে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত
  • নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু: ৩ দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলনের ব
  • খুলনায় ২২ বোতল মাদকসহ যুবক আটক
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি প্রোগ্রামে ডিপ্লোমা, অনলাইন ও অফলাইনে আবেদন ফি ১০০০
  • অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
  • ১০০ কোটির সম্পদ, স্বামীর প্রতারণা, ৪৭ বছর বয়সেই মারা যান এই নায়িকা
  • তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত
  • শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
  • রূপগঞ্জে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে লিফলেট বিতরণ