বায়তুল আমান ভবন ভাঙার পেছনে শামীম ওসমান
Published: 9th, February 2025 GMT
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের নির্যাতনের প্রতীক বিভিন্ন ভবনে ব্যাপক হামলা হয়েছে। তবে তখন বড় ধরনের কোনো হামলা হয়নি বায়তুল আমান ভবনে। ছয় মাস পর কেন ভেঙে ফেলা হলো এই ভবন– এ নিয়ে ভাবছেন অনেকেই। বলা হচ্ছে, ভবনটির পাশে ওসমান পরিবারের নির্যাতনের কেন্দ্র রাইফেল ক্লাব রেখে কেন হামলা হলো আমান ভবনে? গুঞ্জন ছড়িয়েছে– শামীম ওসমান দেশের বাইরে থেকে তাঁর অনুগতদের দিয়ে এ ভবন ভাঙচুর করিয়েছেন। এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছেন তিনি।
সরকার পতনের আগেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি এ কে এম সেলিম ওসমান, আওয়ামী লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান, সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের (প্রয়াত) ছেলে আজমেরী ওসমান এবং শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান প্রাণ বাঁচাতে সপরিবারে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যান। এ ছাড়া পালিয়ে যায় তাদের দোসর গত ১৬ বছর ধরে এলাকায় নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িতরা।
সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জামতলায় শামীম ওসমানের বাড়ি, উত্তর চাষাঢ়ায় তাঁর পৈতৃক বাড়ি হিরা মহল, চাষাঢ়া মোড়ে বায়তুল আমান, চাষাঢ়া মোড়ে রাইফেল ক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তবে শামীম ওসমানের দাদা খানসাহেব ওসমান আলীর ‘বায়তুল আমান’ অক্ষতই ছিল। বায়তুল আমানে লোকজন হামলা চালাতে গেলে সে সময় বাড়ির বাসিন্দারা জানান, শামীম ওসমান পরিবারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। এ ভবনের দেয়াল সে সময়ে ভাঙা হলেও বাড়ির বাসিন্দারা পরে দেয়াল মেরামত করেন ও বারান্দার অংশে রং করেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলার পর ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় চাষাঢ়ায় বায়তুল আমানে হামলা চালানো হয়। ভেকু নিয়ে বাড়ির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। সেখান থেকে হামলাকারীদের একটি অংশ উত্তর চাষাঢ়ায় গেলেও হিরা মহল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, ‘বায়তুল আমান গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর থেকেই আমরা শুনছি, এটি পাতানো খেলা। শামীম ওসমান দেশের বাইরে থেকে প্রচারণা চালাতে এই বাড়ি ভাঙিয়েছেন। অন্য দলের মধ্যেও যে তাঁর লোক আছে। বায়তুল আমান ভাঙলে তাঁর ক্ষতি কম। কারণ এটি তাঁর মালিকানাধীন বাড়ি নয়। তাঁর চাচার বাড়ি। বাড়ি ভাঙলেও এখান দিয়ে যেহেতু রাস্তা বড় করার সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে, তাই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তিন গুণ ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। সব মিলিয়ে একটি বিশাল প্রচারণা পেয়ে গেছেন শামীম ওসমান। তাঁর এ ধরনের স্টান্টবাজি নতুন নয়।’
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড সম্প্রসারণ করার জন্য সরকারিভাবে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল চাষাঢ়ার মোড়ে বায়তুল আমান ভবন এবং রাইফেল ক্লাব ভবন ভেঙে ফেলার বিষয়ে। বায়তুল আমানে শামীম ওসমানের সৎভাই ননী সারোয়ার ও মনি সারোয়ারের পরিবার বাস করত।
নারায়ণগঞ্জ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন বলেন, ওসমান পরিবার বিভিন্ন সময়ে প্রচার করেছে, বায়তুল আমান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত। এসব দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। ওসমান পরিবারের প্রতি নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থেকেই বায়তুল আমানে হামলা হয়েছে। শামীম ওসমান কলকাঠি নেড়ে বায়তুল আমান গুঁড়িয়ে দিয়েছেন– এমন বক্তব্যও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘এখন বিভিন্ন খেলায় জড়িত নানা চক্র। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য বায়তুল আমান ও রাইফেল ক্লাব অপসারণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের, এটির বাস্তবায়ন সরকারিভাবেই এগোচ্ছিল।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক নিরব রায়হান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী কমিটির পক্ষ থেকে কেউ এই ভবন ভাঙেনি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ম ম ওসম ন র ন র য়ণগঞ জ ভবন ভ ঙ ওসম ন প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।