যেন‌তেন নয়, জাতীয় পার্টি দে‌শে অবাধ ও গ্রহণ‌যোগ‌্য নির্বাচন চায় জা‌নি‌য়ে দল‌টির চেয়ারম‌্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, “দে‌শে আইনশৃঙ্খলার যে প‌রি‌স্থি‌তি এই অবস্থায় কোনভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। আর গ্রহণ‌যোগ‌্য নির্বাচন না হ‌লে গণতন্ত্রও ফির‌বে না।”

শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় জাতীয় পার্টির মহাস‌চিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো.

মুজিবুল হক চুন্নু, কো— চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসি‌ডিয়াম সদস‌্য সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাজমা আকতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা উপ‌স্থি‌ত ছি‌লেন।

আরো পড়ুন:

জিএম কাদেরকে কাজী ফিরোজ: দল এরশাদের, আপনি বের করে দেওয়ার কে?

জাপাকে তিন কাজের পরামর্শ দিলেন জেপি মহাসচিব শেখ শহীদ

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমরাও নির্বাচন চাই কিন্তু নির্বাচ‌নের প‌রি‌বেশ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন কর‌তে হ‌লে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। নির্বাচনের আগে যেমন রাজনৈতিক ঐক্যমত জরুরি তেমনি জরুরি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতি সাধন।”

“এখনো দেশে মব সন্ত্রাস চলছে। প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছে না। এই অবস্থায় দেশে কোনভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।”

নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয় জা‌নি‌য়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, আমরাও সংস্কারের পক্ষে, কারণ পল্লীবন্ধু এরশাদই এদেশের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক।কিন্তু সংস্কার করতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা দরকার। এখন সেই সম‌ঝোতা নেই। তাছাড়া নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যায় না।”

সা‌বেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার দা‌বি ক‌রে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “আমরাও বিচারপতি খায়রুল হকের  বিচার চাই। কারণ তিনি ওপেন কোর্টে দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তার রায় নিজে পরিবর্তন করেছেন। সেজন্য অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তার নামে হত্যা মামলা দেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “অবশ্যই সরকারকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনভাবে যেন একতরফা বিচার না হয়।”

জাতীয় পা‌র্টি‌তে সংস্কার করা হ‌চ্ছে, গণতন্ত্র ফি‌রি‌য়ে আনা হ‌চ্ছে জা‌নি‌য়ে দল‌টির চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, “৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা জাতীয় পার্টিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ জীবন দিয়েছেন। তাদের জীবন আমরা বৃথা যেতে দেব না। আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। দেশের সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। প্রতিষ্ঠিত করব গণতন্ত্র। তবে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার আগে নিজের দলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে  নতুন  নেতৃত্ব এসেছে।” 

“এখন থেকে জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক উপায়ে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে  পরিচালিত হবে। আমরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিতর্কিত ধারা বাদ দিয়েছি। ইতোমধ্যে  আমাদের কমিটির পাশাপাশি আমরা নির্বাচন কমিশনের সেই গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছি।”

দল ছে‌ড়ে যাওয়া নেতা‌দের ফি‌রি‌য়ে এনে জাতীয় পা‌র্টি‌কে শ‌ক্তিশালী করা হ‌চ্ছে জা‌নি‌য়ে দল‌টির এই শীর্ষ‌নেতা ব‌লেন, “যারা আমা‌দের ছে‌ড়ে চ‌লে গি‌য়ে‌ছি‌লেন আমরা সবাইকে ফি‌রি‌য়ে আনার চেষ্টা কর‌ছি। সবাইকে নি‌য়ে এক‌টি শ‌ক্তিশালী জাতীয় পা‌র্টি গড়‌বে।  সবাইকে নি‌য়েই আমরা পথ চল‌তে চাই।”

এ সময় দ‌লের সি‌নিয়র নেতা জসিম উদ্দিন ভুইয়া, সরদার শাহ জাহান, হারুন আর রশিদ, নজরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম মিলন, ইয়াহিয়া চৌধুরী মো. ইয়াকুব হোসেন, শেখ আলমগীর হোসেন,  নীগার সুলতানা রানী, মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, নাসির উদ্দিন সরকার, গোলাম মোস্তফা, হাফেজ মাহমুদুর রহমান, সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী, শারমিন পারভীন লিজা, মিজানুর রহমান দুলাল, তাসলিমা আকবর রুনা, শারমিন আকতার আবুল কালাম আজাদ, এম হাসেম প্রমুখ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম ম গণতন ত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদের জায়গায় তারেক রহমান গণতন্ত্রের সূচনা করবেন: নজরুল ইসলাম

বাকশালের পরিবর্তে গণতন্ত্র এনেছিলেন জিয়াউর রহমান, সামরিক স্বৈরশাসনের গোরস্তানে গণতন্ত্র এনেছিলেন খালেদা জিয়া, আর ফ্যাসিবাদের জায়গায় তারেক রহমান গণতন্ত্রের সূচনা করবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ–মাহফিলে এ কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তাদের ক্ষমতায় আসতে আবার বহু বছর লেগেছে। মুসলিম লীগ আসতে পারেনি, আওয়ামী লীগের লেগেছিল ২১ বছর। আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি মাত্র ৯ বছরে আবার ক্ষমতায় এসেছিল। এই অর্জনের মূল কান্ডারি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। সামরিক স্বৈরশাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস তাঁর হাত ধরেই রচিত হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।

ফ্যাসিবাদের জায়গায় তারেক রহমান গণতন্ত্রের সূচনা করবেন বলে মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ জিয়ার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পাওয়া বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। বহু মানুষ ছেড়ে গেছে। কিন্তু দারুণ দুঃসময়ে দলের হাল ধরেছিলেন খালেদা জিয়া। সামরিক স্বৈরশাসনের গোরস্তানে গণতন্ত্রের এনেছিলেন তিনি। ফ্যাসিবাদের জায়গায় গণতন্ত্রের সূচনা করবেন তারেক রহমান। তাঁরা সেই শুভ দিনের প্রতীক্ষায় আছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যখন মানুষ সমালোচনা করত, তখনো জন্মদিন উদ্‌যাপনে উৎসাহ দেননি খালেদা জিয়া। কখনো খালেদা জিয়া জন্মদিন উদ্‌যাপন করা বা দাওয়াত দেওয়ার মতো কিছু করেননি। তাঁরা নিজেরা সেটা করেছেন। খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্যের জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, যত রক্ত ঝরুক, এখনো গণতন্ত্র হাতের নাগালের বাইরে। নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। কারও পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আরও পড়ুননির্বাচন হলে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া: আবদুল আউয়াল মিন্টু৩০ জুলাই ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের ১৫ দিন পর দেখা করার সুযোগ ছিল। দেখেছি, তিনি কী রকম মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। আমরা বাইরে থেকে চেষ্টা করেছি তাঁকে সহযোগিতা করার। পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু আমরা তাঁর দৃঢ় মনোবল দেখেছি। দেখেছি, পর্যায়ক্রমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। বুঝতে পেরেছি তাঁকে তখন বোধ হয় খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দেওয়া হতো।’

কারাগারে খালেদা জিয়ার ওপর অত্যাচার, নিপীড়নের জন্য দায়ীদের প্রত্যেকের বিচারের দাবি জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা দেখেছি কারাগারে কারা কারা তাঁকে নির্যাতিত, নিপীড়ন করেছেন। সর্বশেষ যখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়, তখন ওই কারাগার একবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। একটা পরিত্যক্ত এলাকায় পরিণত হয়েছিল। সেখানে খালেদা জিয়ার ঘরের মধ্যে ইঁদুর ও পোকামাকড় দৌড়াদৌড়ি করত।’ ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া প্রথমে নির্বাচনে যাবেন না বললেও পরে একটি দলের চাপ ও কর্মীদের কথা বিবেচনা করে নির্বাচনে গেছেন বলে জানান মির্জা আব্বাস।

আরও পড়ুনস্লোগাননির্ভর রাজনীতির যুগ শেষ: তারেক রহমান১২ আগস্ট ২০২৫

বিএনপির আয়োজনে এই দোয়া ও মিলাদ–মাহফিল সঞ্চালনা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের সদস্যসচিব আবুল হোসেন।

মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিশেষ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা।

আরও পড়ুনকেউ যেন বলতে না পারে, আমরা আওয়ামী লীগের মতো জোর করে নিয়ে গেছি: ভোট নিয়ে মির্জা ফখরুল১২ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে হবে: আযম খান
  • সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে বিতর্কিত হতে পারে: বদিউল আলম
  • বাংলাদেশকে একমাত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে: রিজভী
  • ‘দলগুলো হুন্ডা-গুণ্ডা আর টাকার খেলায় মেতে উঠলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না’
  • ফ্যাসিবাদের জায়গায় তারেক রহমান গণতন্ত্রের সূচনা করবেন: নজরুল ইসলাম
  • মুন্নী সাহা ও তাঁর স্বামীকে সম্পদের হিসাব দেওয়ার আদেশ দুদকের
  • আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: জি এম কাদের
  • তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির মতামত অগ্রহণযোগ্য
  • নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ‘গলায় গামছা ও মাজায় রশি’ লাগতে পারে: সিইসিকে ইসলামী আন্দোলন