গাজীপুরের শ্রীপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা রাতুল (২৩) ও তৌহিদুল ইসলাম সজল (২৬) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে রাতুলকে এবং কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজনগর কাচারি মাঠ এলাকা থেকে সজলকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আবদুল বারিক ও কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আলাউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

পাথর লুটের ঘটনায় মামলা, আসামি ২ হাজার 

মানিকগঞ্জে সাবেক এমপি মমতাজের পিএসসহ গ্রেপ্তার ৬

রাতুল গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া (হাজী বাড়ি) গ্রামের আনিছুর রহমান ওরফে রশীদ মাস্টারের ছেলে। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের শ্রীপুর উপজেলা কমিটির নেতা। সজল কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার সানাউল্লাহ সরকারের ছেলে এবং সংগঠনটির কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।

স্থানীয়রা জানান, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাতুল তার বাড়িতে কাঙালিভোজের আয়োজন করেন। সেখানে কর্মীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীর জন্য খিচুড়ি রান্না হচ্ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।

শ্রীপুর থানার ওসি মুহম্মদ আবদুল বারিক জানান, গত ১১ আগস্ট রাতে গাজীপুর ইউনিয়নের আজুগিরচালা এলাকায় মশাল মিছিলের প্রস্তুতিকালে ককটেল, পেট্রোল ও নাশকতার সামগ্রীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় রাতুল আসামি। সেদিন পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। গোপন সংবাদে তার অবস্থান জানার পর শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ থাকায় সজল দীর্ঘ দিন ধরেই পুলিশের খোঁজে ছিলেন। গোপনে খবর পেয়ে শুক্রবার দক্ষিণ রাজনগর কাচারি মাঠ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

ঢাকা/রফিক/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

এখানে ৩০০ বছর ধরে দেবী আসেন ‘লাল দুর্গা’ রূপে

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পাঁচগাঁও। ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাধ্বনি, ধূপের গন্ধ আর আলোঝলমলে মণ্ডপ—সব মিলিয়ে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের উচ্ছ্বাস। তবে পাঁচগাঁওয়ের পূজা অন্যদের থেকে আলাদা। এখানে দেবী দুর্গা আসেন ‘লাল দুর্গা’ রূপে। এখানে ৩০০ বছর ধরে চলছে পূজা।

রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, আলোয় ঝলমল করছে পাঁচগাঁও দুর্গামণ্ডপ। রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক থেকে মন্দিরমুখী পথজুড়ে বসেছে অস্থায়ী দোকান। তিলুয়া, বাতাসা, খাজা, জিলাপি, ফুচকা থেকে শুরু করে খেলনা, প্রসাধনী ও পূজার সামগ্রী—সবই পাওয়া যাচ্ছে। ষষ্ঠীর দিন হওয়ায় ভিড় তুলনামূলক কম হলেও সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে হাজারো ভক্তের পদচারণে গ্রাম মুখর হয়ে উঠে—এমনটাই জানান স্থানীয় লোকজন।

পাঁচগাঁও দুর্গাপূজার পরিচালক সঞ্জয় দাস বলেন, তিনি পূজা পরিচালনাকারীদের ষষ্ঠ পুরুষ। প্রায় ৩০০ বছর ধরে তাদের পরিবারে এই লাল রঙের প্রতিমার পূজা হয়ে আসছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের বছরে পূজা হয়নি। এটি মূলত পারিবারিক পূজা হলেও দেবীর জাগ্রত উপস্থিতির বিশ্বাসে প্রতিবছর হাজারো মানুষ এখানে ভিড় করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এই পূজার সূচনা করেন সর্বানন্দ দাস নামের এক সাধক। তিনি আসামের শিবসাগরে চাকরিরত অবস্থায় কামাক্ষ্যায় পূজা দিতে গিয়ে অলৌকিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পূজার সময় এক পাঁচ বছরের মেয়ের শরীর লাল হয়ে ওঠে। তখন সর্বানন্দ দাস বুঝতে পারেন, দেবী স্বয়ং অবতীর্ণ হয়েছেন। দেবী তাঁকে বর দিতে চাইলে তিনি প্রার্থনা করেন—প্রতিবছর তাঁর জন্মস্থান পাঁচগাঁওয়ে দেবী অধিষ্ঠান করবেন। দেবী নির্দেশ দেন, এখানকার প্রতিমা হবে লাল বর্ণের। সেই থেকে চলে আসছে লাল দুর্গার পূজা।

পূজার আয়োজকেরা জানিয়েছেন, দেশে পাঁচগাঁওয়ের দুর্গাবাড়িতেই দেবী দুর্গার রং লাল, আর কোথাও লাল বর্ণের দেবী নেই। তবে ভারতের আসাম ও কামাখ্যায় লাল বর্ণের প্রতিমা আছে। পাঁচগাঁওয়ে ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন এই লাল বর্ণের দেবী। পূজার এই সময়টি হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী তাঁদের নানা মানত নিয়ে এখানে ভিড় করেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালান।

পূজার সপ্তমী ও নবমীতে পাঁঠা, মহিষ, হাঁস ও কবুতর দেবীর নামে এখানে বলি দেন অনেকে। এখানকার দেবী জাগ্রত হওয়ায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে দেবী-দর্শনে সপরিবার আসেন অনেকেই। অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের কাছে শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচগাঁওয়ের দেবী-দর্শন অনেকটাই নিয়মিত। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও এই উৎসবস্থলে ছুটে আসেন, ঘুরে বেড়ান। মেলায় কেনাকাটা করেন। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে চার-পাঁচ দিন পাঁচগাঁও যেন ঘুমায় না। গ্রামের বাতাসে বাজে একটাই সুর—‘দুর্গা এল, দুর্গা এল’।

সঞ্জয় দাস প্রথম আলোকে বলেন, পূজা উদ্‌যাপনে শতভাগ নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহযোগিতা আছে। কোনো সমস্যা নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এখানে ৩০০ বছর ধরে দেবী আসেন ‘লাল দুর্গা’ রূপে