বাংলাদেশকে একমাত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে: রিজভী
Published: 16th, August 2025 GMT
বাংলাদেশকে আবারও একমাত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির এই নেতা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনে দলীয় নিয়োগের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংগ্রামের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে আইনের শাসন থাকবে এবং ভয়-ভীতির বাইরে মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের অমর কীর্তিগাথা স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দ, ঢাকা কলেজ এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
রিজভী বলেন, যে আত্মত্যাগের বিনিময়ে নতুন প্রজন্ম রক্ত দিয়েছে, সেই রক্তের দাম রাখতে হবে। পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে অসংখ্য শিক্ষার্থী জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের মিছিলে প্রাণ দিয়েছে। যে সময় সন্তানেরা বাবা-মায়ের কোলে থাকার কথা, হাতে বই আর টিফিন নিয়ে থাকার কথা, সেই সময়ে তারা বুক চিতিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে। তাই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব।
তবে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এখনো মিথ্যা মামলা, চাঁদাবাজির অভিযোগ ও দমননীতি চলছে; সরকারি দপ্তর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ এবং চাকরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা।
দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং ন্যায়বিচারের অভাব নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিজভী। তিনি বলেন, দেশের অসহায় মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আর রাস্তায় রাহাজানি-সন্ত্রাস যেন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি তাঁর কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বলেছেন—রোকন না হলে চাকরি থাকবে না। রিজভী প্রশ্ন তোলেন—এ জন্য কি তাহলে মুগ্ধ, আবু সাঈদরা শেখ হাসিনার পুলিশের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল?
২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের ‘ডামি নির্বাচন’ গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন রিজভী।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা বছরের পর বছর গণতন্ত্রের আন্দোলনকে দমন করতে গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। আন্দোলনকারীদের ‘জঙ্গি’ ও ‘অগ্নিসন্ত্রাসী’ বলে চিত্রিত করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী ও গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। অথচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁকে (শেখ হাসিনা) বলা হয়েছে ‘ফাইটার অব ডেমোক্রেসি’, ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’। অন্যদিকে শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবার ও ঘনিষ্ঠরা দেশের ব্যাংক খালি করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে।
আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে যারা শঙ্কা প্রকাশ করছে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ২ ঘণ্টা আগেসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। এ ছাড়া বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস অধ্যাপক সৈয়দ মাজহারুল হক সোহাগসহ গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের স্বজনেরা আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দের পক্ষ থেকে গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের স্বজনদের উপহার বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুনধর্মের নামে আরেকটা ফ্যাসিস্ট কড়া নাড়বে দরজায়, এটা হতে পারে না: রিজভী১৭ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হবিগঞ্জে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রদল নেতাসহ দুজন সেনাবাহিনীর হাতে আটক
চাঁদাবাজির অভিযোগে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব জামিল চৌধুরীসহ দুজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ শুক্রবার ভোরে তাঁদের নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে মাধবপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামে স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল গ্রামের অরূপ চৌধুরী (৩০) ও তাঁর স্ত্রী রাহেলা আখতার (২২)। বেড়ানো শেষে একই দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। উপজেলার গাজীপুর গ্রামের সেতুর কাছে আসার পর ছাত্রদলের নেতা জামিল চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ থেকে সাতজন ব্যক্তি তাঁদের গতি রোধ করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জামিল চৌধুরী অরূপ চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাঁদের পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান। একপর্যায়ে জামিল তাঁদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে অরূপ চৌধুরী মুঠোফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পান। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান এলাকাবাসী।
পুলিশ সূত্র জানায়, এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাধবপুরের শাহজীবাজার সেনা ক্যাম্পের একটি দল আজ শুক্রবার ভোরে মাধবপুর উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় জামিল চৌধুরীকে। পরে সেনাসদস্যরা পাশের বাঘাসুরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে জামিলের সহযোগী মোনায়েমকে (২৫) আটক করেন। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সেনাসদস্যরা আটক দুজনকে আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা রাস্তায় গতি রোধ করে মামলার ভয় দেখিয়ে এক দম্পতির কাছে চাঁদাবাজি করেন। পাশাপাশি তাঁদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ৯০ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে।