আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটা করে ঘোষণা দিয়ে ডেভিল, অর্থাৎ শয়তান খুঁজতে বা ধরতে নেমেছে। গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের হামলার পর এ অভিযান অনেকের মনে স্বস্তি তৈরি করেছে; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে এর বহিঃপ্রকাশও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটা করে অভিযানের কথা ঘোষণা করার পর আমার মনে পড়ে গেল ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানটির কথা। স্লোগানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের জাতির ইতিহাসের এক অন্ধকার সময়ের কথা।

ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ৫ ফেব্রুয়ারি ও এর পরে অনেক ঘটনা ঘটে গেল বাংলাদেশে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘোষণা দিয়ে। শুধু তা–ই নয়, সারা দেশে অন্তত ৩৫টি জেলায় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে কিংবা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর হলো গাজীপুরের ঘটনা।

তিন–চারটি দিন বাংলাদেশ গেল নৈরাজ্যকর একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। উত্তেজনার পারদ নিচে নেমে আসার পর এবার সময় হয়েছে নিরাবেগ হিসাব-নিকাশের। খতিয়ে দেখা দরকার যা ঘটল (কিংবা ঘটতে দেওয়া হলো), যেভাবে ঘটল এবং এর ভবিষ্যৎ প্রভাবইবা কী।

শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে নিশ্চয়ই, কিন্তু এসব কি পাঁচ আগস্টের ক্ষোভ-ক্রোধের তুলনায় বেশি? নিদেনপক্ষে কাছাকাছিও? শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে যাওয়ার পর জনগণের তীব্রতম ক্রোধের সময়ও যে বাড়িগুলো হামলা-ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের শিকার হয়নি, সেই বাড়িগুলো কেন ছয় মাস পর তুলনামূলকভাবে অনেক কম ক্ষোভের মুখেই হামলা–ভাঙচুরের শিকার হলো? যৌক্তিকভাবেই অনুমান করা যায়, এর পেছনে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, ইন্ধন ছিল। তাহলে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন আগাম এই ঘটনাগুলো অনুমান করতে পারেনি?

এমন সময়ে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরের ওপর হামলা–ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হলো, যখন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সেনাবাহিনী মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব পালন করছে। ফলে ৫ ফেব্রুয়ারি–পরবর্তী তিন-চার দিনে যা ঘটল, তা বিরাট প্রশ্ন তৈরি করেছে। এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার প্রতি কতটা বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে, সেটা কি অনুধাবন করে সরকার?

পতিত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়তা নিয়ে জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্রোধ, ক্ষোভের যৌক্তিক কারণ আছে। কথা ছিল দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ক্রমাগতভাবে, বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে ভয়ংকরতম মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাওয়া শেখ হাসিনা আমাদের হেফাজতে থেকে বিচারের মুখোমুখি হবেন। কৌশলগত কারণে ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে, এমন সম্ভাবনাকে শূন্যের কোঠায় ধরলেও শেখ হাসিনা অন্তত চুপ থাকবেন, এটা প্রত্যাশা করেছিল এ দেশের মানুষ।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পূর্তির আগেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘দুই দেশের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাংলাদেশ (সরকার) তাকে (শেখ হাসিনা) ফেরত না নেওয়া পর্যন্ত ভারত যদি তাকে রাখতে চায়, তবে শর্ত হলো তাকে চুপ থাকতে হবে।’ কিন্তু সেটা করা দূরে থাক, শেখ হাসিনা ভারতে বসে প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের ভয়ংকর সব হুমকি দিতে থাকলেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তার দলের লোকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে লাগলেন।

শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে নিশ্চয়ই, কিন্তু এসব কি পাঁচ আগস্টের ক্ষোভ-ক্রোধের তুলনায় বেশি? নিদেনপক্ষে কাছাকাছিও? শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে যাওয়ার পর জনগণের তীব্রতম ক্রোধের সময়ও যে বাড়িগুলো হামলা-ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের শিকার হয়নি, সেই বাড়িগুলো কেন ছয় মাস পর তুলনামূলকভাবে অনেক কম ক্ষোভের মুখেই হামলা–ভাঙচুরের শিকার হলো?

যৌক্তিকভাবেই অনুমান করা যায়, এর পেছনে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, ইন্ধন ছিল। তাহলে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন আগাম এই ঘটনাগুলো অনুমান করতে পারেনি? বিশেষ করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর হামলার শিকার হওয়ার পর যখন অনেকেই সারা দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলার আহ্বান জানিয়েছিলেন, তখনো কেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এসব মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে?

নানা ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের দুর্বলতা এখন সর্বজনস্বীকৃত ব্যাপার। রাস্তা অবরোধ করে দাবিদাওয়া জানানোর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে ফৌজদারি অপরাধ পর্যন্ত সরকারের সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে বাংলাদেশে ইসলামি উগ্রবাদীদের দখলে চলে যাচ্ছে—এমন বয়ান প্রতিষ্ঠিত করার ভিত্তি তৈরি করার মতো ঘটনা ঘটছে অনেক।

দিনের পর দিন একটি গোষ্ঠী মাজার ভেঙেছে। ২৬ জানুয়ারি বিশ্ব সুফি সংস্থা ৮০টি মাজার ও দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ করেছে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটেছে সরকার দায়িত্ব দেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। বাকি ঘটনাগুলো ঘটেছে এর পরে। এমনকি গত জানুয়ারিতে এসেও কয়েকটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাউল গান, মেলা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হয়েছে নারীদের ফুটবল খেলা, এমনকি অভিনেত্রী কর্তৃক দোকান বা শোরুম উদ্বোধন। এটি স্পষ্ট, কোনো সুযোগসন্ধানী মহল এখানে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ কী, আমরা জানি না।

সাম্প্রতিক সময়ে যা যা ঘটল, সেটাকে অনেকেই যুক্ত করতে চাইছেন ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় হতে যাওয়া ট্রাম্প-মোদি বৈঠকের সঙ্গে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ যে একটা ইস্যু হিসেবে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত, সেটা খানিকটা ‘কূটনৈতিক অনিশ্চয়তা’ যোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।

৫ আগস্টের পর ‘বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ক্ষমতা দখল, সংখ্যালঘুরা হুমকির মুখে থাকা এবং বাংলাদেশে একটা নৈরাজ্য বিরাজ করার’ ভারতীয় যে বয়ান, সেটাকে সমর্থন করার জন্য বেশ কিছু ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে তারা পেয়েছে তো বটেই।

দেশের বিদ্যমান অবস্থায় বিদেশি শক্তিগুলোর দিক থেকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আমাদের আসবে, সেই বিবেচনার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমাদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াচ্ছে সেটা। একটা দুর্বল ও অকার্যকর সরকার নানা রকম কায়েমি স্বার্থবাদী গ্রুপকে নানা অপকর্মে উৎসাহিত করে। এটা আমাদের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বড় শঙ্কা তৈরি করছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ বাহিনী ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ঘোষণা করেছে। পুলিশের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত এ অভিযানে গ্রেপ্তার সহস্রাধিক। আমরা প্রশ্ন করতেই পারি, সমাজে যখন এত বেশি ‘শয়তান’ আছে যে তাদের রীতিমতো ঘটা করে, ঘোষণা দিয়ে খুঁজে ধরতে হবে, তখন এতগুলো মাস স্বাভাবিক অভিযানে শয়তানদের খুঁজে আটক করার ক্ষেত্রে কেন নির্লিপ্ত ছিল সরকার? বিশেষ নামের বিশেষ ঘোষণা কি এটা প্রমাণ করে না, এত দিন স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রম ঠিকঠাকভাবে চলেনি?

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযান নিয়ে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। ২০১৯ সালের শেষ দিকে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান দিয়ে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে র‍্যাব। সেটা আসলে শুরু, এরপর বীভৎস ঘটনা ঘটে কক্সবাজার, টেকনাফসহ গোটা দেশে। মাদক, বিশেষ করে ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করে র‍্যাব।

সে অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী অভিযোগে কক্সবাজার এলাকায় ২০০ জনের বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো.

রাশেদ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার কারণে একমুহূর্তে তখনকার মতো সব হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হয়ে গেলে ওই তালিকা অনেক বড় হতো নিশ্চয়ই।

বর্তমান সরকারের সময় কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটবে না, এমন বিশ্বাস সম্ভবত আমরা রাখতেই পারি। কিন্তু দীর্ঘদিনের চর্চার ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কৃতিতে পরিণত হওয়া হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যু, নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের মতো ঘটনাগুলো ঘটতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোড়ন তোলে। যদিও গত পাঁচ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে অন্তত ১৭ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন (মানবাধিকার সংগঠন ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’–এর তথ্য)। বলা বাহুল্য, এসব ঘটেছে নির্যাতনের ফলে। অথচ ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী নির্যাতনের সংজ্ঞা হলো, ‘নির্যাতন’ অর্থ কষ্ট হয়, এমন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

বিশেষ অভিযানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা হয়ে উঠুক সরকারের প্রতিদিনকার অগ্রাধিকার। সরকারের মনে রাখা উচিত, সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার যুক্তি হিসেবে অনভিজ্ঞতাকে সামনে আনা ১–২ মাস বয়সী সরকারের ক্ষেত্রে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হলেও ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর সেটাকে জনগণের গ্রহণ না করারই কথা।

জাহেদ উর রহমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ ষ কর ঘটন গ ল সরক র র জনগণ র আম দ র য গ কর র সময আগস ট ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু 
  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল
  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’