আওয়ামী লীগ সরকার যে ফ্যাসিস্ট ছিল, তার বড় প্রমাণ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার বিচার না করা। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে। বিচার না করলে কেউ পার পাবেন না। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরবর্তী তারিখে (২ মার্চ) প্রতিবেদন জমা না হলে রাজপথে আন্দোলনে নামা হবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ডিআরইউ।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ সেই খুনের ১৩ বছর পূর্ণ হলো।

সমাবেশে ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিস্ট দল ছিল, তার প্রমাণ সাগর-রুনি হত্যার বিচার না করা এবং কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের নাম প্রকাশ না করা। পাশাপাশি তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় নাম প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরবর্তী তারিখ ২ মার্চ। আবু সালেহ আকন বলেন, ওই তারিখেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া না হলে তাঁরা একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করবেন। ওই কমিটির মাধ্যমে আবারও তাঁরা রাজপথে আন্দোলনে নামবেন। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আগামীকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পরও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে কেন সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে, এ প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, ২ মার্চের পরও সময়ক্ষেপণ করা হলে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেবেন।

ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, সাগর-রুনিকে যে বাড়িতে হত্যা করা হয়েছিল, ওই বাড়িটি সিসিটিভির আওতায় ছিল। কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এটা পুলিশের জানার কথা। তিনি আরও বলেন, কারও বেডরুমে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের নয়—সংসদে দাঁড়িয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেওয়ার পর বোঝা গেছে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়া যাবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এই হত্যার বিচার হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আরও পড়ুনসাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর: ৬ বছর মামলার কার্যত কোনো তদন্ত হয়নি ১০ ঘণ্টা আগে

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে গত ছয় মাসে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু ঘটেছে কি না, এমন প্রশ্ন রেখে সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস হোসেন বলেন, তদন্তের দায়িত্ব যাদের হাতে ছিল, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অন্তত অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বিচার না করার পেছনে যারা দায়ী, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে মত দেন তিনি।

ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক নেতা মানোয়ারুল ইসলাম, রাজু আহমেদ, সালেহ বিপ্লব, গাজী আনোয়ার, বাবুল তালুকদার, এম এম বাদশা, আজমল হক হেলালী প্রমুখ।

সংহতি জানিয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এ এম এম আনিসুল আউয়াল।

আরও পড়ুনসাগর-রুনি হত্যা: ১৩ বছরে হত্যা মামলার তদন্ত পিছিয়েছে ১১৫ বার৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র তদন ত প

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের বিনামূল্যে সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পেশাগত মানসিক চাপ মোকাবিলায় সাংবাদিকদের জন্য বিনামূল্যে নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করলো ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। 

‘খোলা জানালা’ নামে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন হয় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ডিআরইউ’র শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে।

ডিআরইউ সদস্য সাংবাদিকরা এখন থেকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্টের মাধ্যমে পেশাদার, গোপনীয় ও সম্মানজনক পরিবেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’র প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞরা এই সেবা প্রদান করবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন, সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘অনেক শিশু মাইলস্টোনের পর অস্বাভাবিক আচরণ করছে। সাংবাদিকরাও প্রতিনিয়ত ট্রমায় ভোগেন। আমাদের এইসব জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে হবে। সত্য প্রকাশ ও সহানুভূতির জায়গা তৈরি করতে হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘কাঙ্ক্ষিত দেশ গড়তে সাংবাদিকদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই উদ্যোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাশে থাকবে।’’

ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের হাঁসের মতো সব দুঃখ-ভয় ঝেড়ে ফেলতে হবে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বিশ্বাসী হতে হবে। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর ও সহানুভূতিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।’’

সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, ‘‘বছরব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে আমরা এই কার্যক্রম চালু করেছি। এর আগে ডিআরইউ সদস্যদের হেপাটাইটিস-বি টিকা, কোভিড-১৯ বুথ, ডায়াবেটিস, কিডনি, গাইনী, লিভার, ডেন্টালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প পরিচালনা করেছি।’’

তিনি আরও জানান, সামনে হেলথ কর্নার, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, নারী সদস্য ও শিশুদের জরায়ু ও নিউমোনিয়ার টিকা প্রদানের পরিকল্পনাও রয়েছে।

উদ্যোগটির আহ্বায়ক নাদিয়া শারমিন বলেন, “আমরা সাংবাদিকরা অন্যের কণ্ঠস্বর হই, কিন্তু নিজেদের মানসিক যুদ্ধের কথা চাপা পড়ে যায়। ‘খোলা জানালা’ সেই অন্ধকার দূর করার একটি সাহসী পদক্ষেপ।”

ঢাকা/এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমনের জানাজা অনুষ্ঠিত
  • ডিআরইউর সদস্যদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেবে ‘খোলা জানালা’
  • প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের বিনামূল্যে সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট