‘মব’ সংস্কৃতির কারণে শত্রুরা উপকৃত হচ্ছে: মাহফুজ আলম
Published: 11th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে এখন স্থিতিশীলতা দরকার বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মব (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যবিহীন এ মব সংস্কৃতির কারণে উপকৃত হচ্ছে আমাদের শত্রুরা।’
মঙ্গলবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে এসব কথা বলেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘তৌহিদি জনতা নামে আপনারা যারা নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের আমি হুমকি দিইনি, সতর্ক করেছি। কেন করেছি? গত পনেরো বছর নিপীড়ন সহ্য করে এবং অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখে সকল নাগরিকদের মতোই আপনারা একটি জাতীয় সম্ভাবনা হাজির করেছেন, কিন্তু মব সংস্কৃতির কারণে তা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমার আপনাদের প্রতি ঘৃণা নেই, বরং বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের মতোই আপনাদের প্রতি দরদ আছে। আলেমদের প্রতি সম্মান আছে। আমি নিজে বিশ্বাসী, মুসলিম হিসাবে তৌহিদবাদী, কিন্তু কেউ তৌহিদের নামে উগ্রতা দেখালে সেটার আসন্ন পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করাও সহনাগরিক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসাবে আমার কর্তব্য মনে করেছি।’
ফেসবুকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে এখন স্থিতিশীলতা দরকার। বিপ্লবী জনতা আর খণ্ড খণ্ড মব আলাদা জিনিস। লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যবিহীন এ মব সংস্কৃতির কারণে উপকৃত হচ্ছে আমাদের শত্রুরা। রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের কঠোর হতে হবে।’
‘এ কঠোরতার হুঁশিয়ারি অপরাধীদের জন্য, যারা তৌহিদের কথা বলে নিপীড়ন করছে, নৈরাজ্য করছে’ বলে উল্লেখ করেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আগে যেভাবে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মুসলিমদের নিপীড়ন করা হতো, যার শিকার আমিও হয়েছি, তা কোনোমতেই আর পুনরাবৃত্তি হবে না।’
মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘আলেম উলেমা, মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ১৫ বছর নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এবারের অভ্যুত্থানেও রক্ত দিয়েছেন, কিন্তু যে স্বাধীনতা এত রক্তাক্ত, সে স্বাধীনতা রক্ষায় প্রজ্ঞা না দেখালে যে জুলুম নেমে আসবে—এ সতর্কতা উচ্চারণ যদি ভুল হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি জালিম বা মজলুম—দুইটা হওয়া থেকেই আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘ব্যক্তি আক্রমণ, ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে আক্রমণ বা সন্দেহ তৈরি, পরিবারের সদস্যদের হুমকি বা বেইজ্জতি ইত্যাদি কাজগুলো নবীজির অনুসারী হিসাবে সবার পরিত্যাগ করা উচিত। চলুন, বিভাজন আর ঘৃণা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রকে সবার করে গড়ে তুলি। পরস্পর সম্মান ও মর্যাদার সম্পর্কই নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি।’
মাহফুজ আলম আগেও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। গতকাল সোমবার রাতে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া আমরা এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করব। রাষ্ট্রকে অকার্যকর এবং ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হলে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।’
নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচার করা হয়। ওই ভাষণকে কেন্দ্র করে সেদিন থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গাজীপুরে হামলার শিকার হন শিক্ষার্থীরা।
এসব ঘটনা বন্ধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। এ নিয়ে নানা স্তরের মানুষের মধ্যে নানা রকম প্রশ্নও তৈরি হয়। পরে গত শনিবার থেকে শুরু হয় বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’। পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ অভিযান শুরুর পর শনিবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২ হাজার ২৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন‘মবে’র মহড়া এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করব: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।