আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার, পরে নির্বাচন: জামায়াত আমির
Published: 14th, February 2025 GMT
প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই হবে, কিন্তু যেনতেনভাবে নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচনের মত নির্বাচন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তবে নির্বাচনের পূর্বে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। মৃত্যুবরণকারী ভোটারের নাম বাদ দিতে হবে। ভোটারের যোগ্য হয়েছে এমন সকলকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, পরে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া কালীকুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নরসিংদী জেলা জামায়াত আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা.
তিনি আরও বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা তথা ইউনিয়ন কার্যালয়গুলো পর্যন্ত তালা বদ্ধ করে রেখেছে। জামায়াত একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো- ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, কিন্তু নিবন্ধনটি আমরা এখনো ফিরে পাইনি। এখনো সেই নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশপ্রেম ও ফ্যাসিবাদের কাছে মাথানত না করার কারণে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের নিবন্ধনটি ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সাথে সাথে দিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল।
জামায়াত আমির বলেন, মিথ্যা মামলায় যত নেতৃবৃন্দকে আটক করা হয়েছিল, একে একে সকলেই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়- বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলামকে এখনো মুক্তি পাননি। জনতার দাবি তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা জনগণের সম্পদ লুটে গত সাড়ে ১৫ বছর আমাদের দেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে; তারা এ দেশকে নিজের দেশ মনে করে না। তারা রাজনীতি করে বাংলাদেশে, বউ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। কানাডায় তারা বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ তারা চুরি করে নিয়ে গেছে, অথচ তারা অন্যদেরকে চোর বলতো। শেখ হাসিনা সকল চোরদের মা, এবার মাও পালিয়েছে, চোরেরাও পালিয়েছে।
শেখ হাসিনার সময়ের বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হাসিনার সময়ে বিচারকরা আদালতে বসে বিচারের নামে একেকজনের বিরুদ্ধে হত্যা রায় দিয়ে, রাতে গিয়ে টেলিভিশনের টকশোতে বসে গর্ব করে বলতো ‘আজকে নিজামীকে, কালকে গোলাম আজমকে, পরশুদিন সাঈদিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে এসেছি। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলতো, আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। বিচারকের চেয়ারে বসে যারা রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে জাতির কলঙ্ক। সে বিচারক হতে পারে না। তিনি নরসিংদীর জনগণের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে নরসিংদীতে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান।
নরসিংদী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মো. মোছলেহুদ্দীনের সভাপতিত্বে ও নরসিংদী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আ ফ ম আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আবদুল জব্বার, মাওলানা আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, মুফতি রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মকবুল হোসেন, আজম রুহুল কুদ্দুস, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, মাওলানা মমিনুল হক, হাফেজ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র নরস দ ইসল ম র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক
পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ‘কবর’ কবিতা বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। ১৯২৫ সালে লেখা অমর এ কবিতার শতবর্ষ এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ‘কবর’ কবিতা তৎকালীন সময়ের সমাজের চিত্রকে তুলে ধরেছে।
‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘শতবর্ষে কবর’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে এ কথা বলেন বক্তারা। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
‘শতবর্ষে কবর’ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন মফিজ ইমাম মিলন। ৪৮ জন লেখকের লেখা নিয়ে প্রকাশিত এই গ্রন্থ প্রকাশ করেছে নয়নজুলি প্রকাশনাী।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের বক্তব্যে উঠে আসে জসীমউদ্দীনের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার নানান প্রসঙ্গ। কবিতাটি ১৯২৫ সালে ‘গ্রাম্য কবিতা’ পরিচয়ে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কল্লোল পত্রিকার তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যায়।
আলোচকেরা বলেন, ‘কবর’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল। কবিতাটি দীনেশচন্দ্র সেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এমনকি ‘কবর’ পড়ে দীনেশচন্দ্র সেন ‘অ্যান ইয়াং মোহামেডান পোয়েট’ শিরোনামে একটি আলোচনাও লিখেছিলেন ফরওয়ার্ড পত্রিকায়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আববার বলেন, ‘কবর’ কবিতার শত বছর পূর্তির ঘটনা একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কবিতাটির শতবর্ষ নিয়ে বই প্রকাশ ব্যতিক্রমী প্রয়াস।
এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি শহরে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের মতো সংগঠন থাকা উচিত। একটা বৃহত্তর পরিবারের মতো কাজ করে তারা। তিনি বলেন, এ ধরনের নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রের বাইরে থেকে দেশ ও সমাজ সম্পর্কে ভাবে। এটা বিশাল শক্তি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জালাল আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাশদী, পক্ষিবিশারদ ইনাম আল হক, কথাসাহিত্যিক ফারুক মঈন উদ্দীন। গবেষক, সাংবাদিক ও ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন নয়নজুলি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী খান, অধ্যাপক এম এ সামাদ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায়, ডেইলি স্টারের সাহিত্য সম্পাদক ইমরান মাহফুজ প্রমুখ।
‘শতবর্ষে কবর’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান শুরু হয় ‘কবর’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। স্বাগত বক্তব্য দেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আলতাফ হোসেন।