সবুজ দেওয়ান, বিশেষ শিশুদের বিকাশ নিয়ে কাজ করেন। বাসায় গিয়ে বিশেষ শিশুদের সাহায্য করেন বিনামূল্যে। ফেসবুকে বিশেষ শিশুদের ফ্রি ক্লাস নেন। তিনি একজন আরএনডিএ (র্যাপিড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট) টেস্টার। এই টেস্টের মাধ্যমে শূন্য থেকে ১৬ বয়স পর্যন্ত শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিক আছে কিনা– তা জানা যায়। সবুজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করেছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগে ‘অ্যাডভান্সড কোর্স অন ডিজঅ্যাবিলিটি, অটিজম অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন’ কোর্স করছেন। মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে থাকেন ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায়।
ছোটবেলা থেকেই বিশেষ শিশুদের প্রতি এক ধরনের মায়া কাজ করে সবুজের। এ কারণে তাদের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। ঢাকার একটি স্কুলে চিফ কমিউনিকেশন অ্যান্ড পার্টনারশিপ পদে কর্মরত ছিলেন কিছুদিন। সবুজ দেশের বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
খেলনা মস্তিষ্কের বিকাশে ভূমিকা রাখে। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে আমরা তেমন একটা ভাবি না। যেনতেন খেলনা শিশুর হাতে ধরিয়ে দিই; যাতে শিশু আনন্দ পেলেও কার্যত সেটি সুফল বয়ে আনে না। এ বিষয়ে সবুজ বলেন, ‘বিশেষ শিশুদের ক্ষেত্রে খেলনা হতে হবে তাদের শেখার একটি মাধ্যম। বাজারে পাওয়া যে কোনো খেলনা তাদের দিলে হবে না। এমন খেলনা দিতে হবে, যা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক হবে। একই খেলনা বারবার দেওয়া যাবে না। বয়স উপযোগী খেলনা দিতে হবে; যাকে আমরা ডেভেলপমেন্টাল টয়সও বলতে পারি।’
সবুজের ভুবনজুড়ে শুধু বিশেষ চাহিদার শিশুদের নিয়ে ভাবনা। তাদের যেন সঠিক বিকাশ হয়, সেজন্য তিনি ডেভেলপমেন্টাল ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করেন, যা বাচ্চাদের বুদ্ধিগত দিক উন্নত করতে সাহায্য করে। যেমন- সেলাই করা, ম্যাচ করা, পাজল মেলানো, সংখ্যা খুঁজে বের করা, ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড ইত্যাদি। বিশেষ শিশুর ডেভেলপমেন্ট ম্যাটেরিয়ালস কিন্তু বাসার নানা জিনিস থেকে তৈরি করা সম্ভব। যেমন- পানির বোতল, বিস্কুটের বোয়াম, চাল, আটা, ডাল, বালু, টুথপিক, পলিথিন ইত্যাদি দিয়ে এডুকেশনাল এবং ডেভেলপমেন্টাল খেলনা বানানো যায়।
বিশেষ শিশুর মা-বাবাদের সবুজ অনলাইনে খেলনা বানানো শেখান। কীভাবে কী দিয়ে খেলনা তৈরি করতে হবে, তা নিয়ে ভিডিও পোস্ট করেন। এখন মা-বাবাদের কোর্স করানোর কথাও ভাবছেন তিনি; যার নাম হবে ‘ম্যাটেরিয়ালস ফর চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট’।
শুধু দেশের বিশেষ শিশুরাই নয়; বিদেশের শিশুরাও তাঁর কাছে পড়া শিখছে। ভিডিও কলের মাধ্যমে চার শিশুকে পড়ান তিনি; যার মধ্যে তিনজনই লন্ডনে থাকে। অনেক সময় পড়াতে পড়াতে অনেক রাত হয়ে যায়। সবুজের সবচেয়ে আনন্দ হয়, যখন জানতে পারেন– বাচ্চাদের উন্নতি হচ্ছে। বাচ্চারা তাঁর বানানো ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করাতেই সবুজের ভালো লাগা।
সবুজ বলেন, ‘আমরা বাজারে যেই ক্লে বা আটার ডো পাই সেটি আমরা বাড়িতেই বানাতে পারি। আটা বা ময়দা দিয়ে যেভাবে রুটি বা পরোটা বানাই, সেভাবেই আমরা ক্লে বানাতে পারি। এই ক্লেতে একটু রং দিয়ে কালারফুল করতে পারি, যাতে দেখতে সুন্দর লাগে। তার পর আমরা তা বিভিন্ন আকার আকৃতি দিয়ে ভাগ করতে পারি; যাকে আমরা ক্লে কাটিং বলি। চাল দিয়েও আমরা অনেক খেলা করতে পারি। অনেক চালের মধ্যে ছোট ছোট খেলনা লুকিয়ে রাখতে পারি, যেগুলো সন্তান খুঁজে বের করবে। আবার বোতলে চাল ভরতে পারি ফলে মনোযোগ বাড়বে। যে বাচ্চাদের বুদ্ধিগত দিক উন্নত, তাদের চাল থেকে ডাল আলাদা করতে দিতে পারি, যা তাদের মনোযোগ বাড়াতে অনেক ভূমিকা রাখতে পারে।’
বাসার আশপাশে, মূলত ঢাকার বউবাজার, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, ঝাউচরের দিকে সরাসরি বাড়িতে গিয়ে সেবা দিয়ে থাকেন সবুজ। অনলাইনের মাধ্যমেও অসংখ্য অভিভাবককে বাচ্চাদের নানা ধরনের ইস্যু নিয়ে গাইডলাইন দেন। সবুজ জানান, বিশেষ শিশুর ষোলআনা পরিবর্তন করা সম্ভব না। তার উন্নতি ঘটনো সম্ভব। অতিরিক্ত হাইপার বাচ্চাকে শান্ত করা সম্ভব। যে লিখতে চায় না একদমই, তাকে দিয়ে লেখানো সম্ভব। যে বাচ্চা কথা বলতে পারে কিন্তু বলে না, তার কথা বলার প্রবণতা বাড়ানো যায়।
সবুজের নিজের একটি সংগঠন আছে– ‘নিউ হোপ ফর চিলড্রেন’। এর মাধ্যমেও বিশেষ শিশুদের সেবা দেওয়া হয়। এখানে সবুজের সঙ্গে যুক্ত আছেন সুমাইয়া আক্তার, তিথি, ইসরাত, অনিক হাসান, সায়মন, রায়হানসহ আরও অনেক তরুণ।
ভবিষ্যতে একটি স্কুল খুলতে চান সবুজ। পাশাপাশি বিশেষ শিশুদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চান। সবুজের মতে, বিশেষ শিশুরা দেশের উন্নয়নেও অংশ নিতে পারে। এটিই তিনি প্রমাণ করতে চান নিজের মেধা, শ্রম, সৃজনশীলতার সবটুকু দিয়ে। সে লক্ষ্যে সবুজ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ভ লপম ন ট ল ম য ট র য় লস ক জ কর সব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।
আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।