জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন বিএনপি হতে দেবে না: সেলিমা রহমান
Published: 17th, February 2025 GMT
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘একজন বলছে সংস্কার, একজন বলছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, একদল বলছে নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন বিএনপি হতে দেবে না।’
সোমবার সন্ধ্যায় মাদারীপুরে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিমা রহমান এ কথা বলেন। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো ও দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের লেকেরপাড় স্বাধীনতা অঙ্গনে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
জনসভায় সেলিমা রহমান আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচন হলে বর্তমানে দেশের যে এলোমেলো ভাব, সেটা পরিবর্তন হয়ে সুশাসন আসবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হবে, জবাবদিহি হবে। দেশের জনগণ আস্থা ফিরে পাবে।
গত ১৬ বছরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন–নিপীড়নের প্রসঙ্গ টেনে সেলিমা রহমান আরও বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে তারেক রহমানকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। গত ১৬ বছর একটানা নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন করেছেন শেখ হাসিনা এবং তাঁর দলবল। বহু মানুষকে হত্যা করেছে। এই খুনিদের বিচার হতে হবে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, আওয়ামী লীগের কোনো দোসর যেন বিএনপির দলে জায়গা না পায়। কেউ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় নবম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এফ আর খান। আলোচনার বিষয় ছিল ‘রিয়েল এস্টেটে সততা, বিশ্বাস, পরিবার ও মানবিক মূল্যবোধ।’
‘কাজের ক্ষেত্রে প্রফেশনাল আর সৎ থাকতে হবে। যদি মনে করেন আপনি কোনো কাজে ভালো, তাহলে চেষ্টা কখনো বিফলে যাবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে এ পরামর্শ দেন বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এফ আর খান।
পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচে অতিথি হিসেবে এসে তরুণদের এই পরামর্শ দেন তিনি। পডকাস্ট শোর এ পর্বটি গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচারিত হয়।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট সেক্টর নিয়ে আজ থেকে চার দশক আগে আপনার ধারণা কী ছিল?
উত্তরে এফ আর খান বলেন, ‘১৯৭৯ সালে বুয়েট থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর আমি বুয়েটেই প্রথম কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করি। সে সময় ঢাকায় বেশ কয়েকটি সুপরিচিত ভবনের নকশা করার সুযোগ পাই। কিছুদিন পর আমি মাস্টার্স করার কথা ভাবি, কারণ বুঝেছিলাম—আরেকটি উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়া পেশাগতভাবে নিজেকে আরও এগিয়ে নেওয়া কঠিন। সেই সময় স্কলারশিপের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিল, তাই এর মধ্যেই আইবিএতে ভর্তি হই। সেখানে ম্যানেজমেন্ট ও বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দারুণ এক্সপোজার পাই। এদিকে কিছুদিন পরই বিদেশে পড়ার স্কলারশিপও পেয়ে যাই। দেশে ফিরে এসে আমি ইস্টার্ন হাউজিংয়ে যোগ দিই।’
এফ আর খান আরও বলেন, ‘ইস্টার্ন হাউজিংয়ে যোগ দিয়েই বুঝলাম, আরে, এটা তো দারুণ! এখানে নিজেই নকশা করতে পারি একজন স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার হিসেবে, নিজেই সেটি নির্মাণ করতে পারি আবার বিক্রিও করতে পারি। শুধু তা–ই নয়, গ্রাহকের জন্য সার্ভিস এবং বিক্রয়–পরবর্তী সেবা দেওয়ারও সুযোগ আছে। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটিই একধরনের ইকোসিস্টেম, যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে।’
প্রসঙ্গক্রমে বিটিআইয়ের যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে এফ আর খান বলেন, ‘আমি এবং আমার দুজন সহকর্মী মিলে বিটিআই প্রতিষ্ঠা করি। তাঁদের মধ্যে একজন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। তিনি বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন তিনি পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। আরেকজন সহকর্মী ছিলেন, যিনি আইবিএ থেকে পড়াশোনা করেন, তিনি মার্কেটিং দেখতেন। আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দায়িত্ব নিই। এভাবেই আমরা ১৯৮৫ সালে বিটিআই শুরু করি।’
এই দীর্ঘ যাত্রায় সবচেয়ে বড় শেখাটা কী ছিল? জানতে চাইলে এফ আর খান বলেন, সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই সফলতা আসে। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের বড় শিক্ষা এটিই—যদি তুমি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে।’
এরপর সঞ্চালক জানতে চান, আপনি বাংলাদেশের ফ্ল্যাট মালিকানা আইন ও মান নিয়ন্ত্রণে যে কাজ করেছেন, সেটার পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল?
উত্তরে এফ আর খান বলেন, ‘জাপানে পড়তে গিয়ে আমি দেখেছি, ওরা সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্স বেজড সিস্টেমে চলে। এই মানসিকতাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে। দেশে ফিরে দেখি মালিকানা আইন তখনো অস্পষ্ট। আমরা পার্লামেন্টে গিয়ে আইন পাস করাই, যাতে অ্যাপার্টমেন্ট মালিকেরাও জমির আনুপাতিক মালিক হন। পরবর্তী সময়ে ব্যাংক লোন, ইনভেস্টমেন্ট, শেয়ার বণ্টন—সবকিছু আমরা আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে সক্ষম হই।’
আপনি নীতিনিষ্ঠ ব্যবসা নিয়ে সব সময় কথা বলেন। এই নীতি রক্ষা করে ব্যবসা চালানো কতটা কঠিন? জানতে চাইলে এফ আর খান বলেন, এটি কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। অনেক সময় চাপে পড়তে হয়েছে; কিন্তু কখনো শর্টকাট নেননি তিনি। তাঁর মতে, সঠিক পথে চললে লাভ একটু দেরিতে আসে কিন্তু স্থায়ী হয়।
আপনার দাদা এবং আপনার পরিবারের মূল্যবোধ আপনাকে কতটা প্রভাবিত করেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে এফ আর খান বলেন, ‘অত্যন্ত গভীরভাবে। আমার দাদা ছিলেন একজন গণিতজ্ঞ, খুব নীতিমান মানুষ। ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে শিখেছি, মানুষকে কীভাবে সম্মান দিতে হয়। এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিটা পরে জাপানে পড়তে গিয়ে আরও গভীর হয়েছে। এই মানসিকতাই আমার ব্যবসার ডিএনএতে আছে। আমার চাচা প্রয়াত ড. ফজলুর রহমান খান, বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনিও আমার জীবনে অসাধারণ প্রভাব ফেলেছেন। উনিই আমার নাম রেখেছিলেন। উনি ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা। তাঁর কাজ, তাঁর বিনয় আর সৃষ্টিশীলতা আমাকে শিখিয়েছে যে প্রকৌশল মানে কেবল কাঠামো নয়—এটা মূল্যবোধ ও মানবিকতার মেলবন্ধন।’
এই সেক্টরকে অনেকে শুধু মুনাফার ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। আপনি কীভাবে ভারসাম্য রাখেন নৈতিকতা ও ব্যবসার মধ্যে? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে এফ আর খান বলেন, ‘নীতির সঙ্গে ব্যবসা করলে একটি দীর্ঘমেয়াদি আস্থা তৈরি হয়। গ্রাহক যদি বুঝতে পারেন আপনি সৎ, তাহলে তাঁরা বারবার ফিরে আসবেন। আমরা বিটিআইতে এই বিশ্বাসেই কাজ করি।’
সঞ্চালক এ পর্যায়ে বলেন, আজকাল স্মার্ট হোম, টেকনোলজি—এসব নিয়ে আলোচনা হয়। আপনি মানবিক সংবেদনশীলতার কথা বলেন। এই ভারসাম্য কীভাবে দেখেন?
উত্তরে এফ আর খান বলেন, প্রযুক্তি মানুষের জন্য, মানুষ প্রযুক্তির জন্য নয়। আর নিয়ম ও আইনকানুন—সবই তৈরি হয় সমাজ ও মানুষের উন্নতির জন্য। তাই নিয়ম মেনে চললে কিন্তু মানবিকতার জায়গাটা কখনো হারায় না। ক্লায়েন্টের প্রতি সহানুভূতি রাখতে হবে। প্রয়োজনে কঠোরতা থেকে নমনীয়তায় যেতে হবে—এটাই মানবিক দৃষ্টিকোণ।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আপনার জীবনে কোনো অপূর্ণ ইচ্ছা আছে কি না?
এ বিষয়ে এফ আর খান বলেন, ‘অপূর্ণ ইচ্ছা বলতে চাই না। কারণ, এখনো চেষ্টা করছি এটি নিয়ে এবং আমার বিশ্বাস এটি পূর্ণ হবে। তা হলো অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং—সাধারণ মানুষের জন্য বাসস্থান। শুনতে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মনে হলেও এর পেছনে কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নেই বললে ভুল হবে। তবে আমি আমার টেকনিক্যাল এবং প্রফেশনাল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমাদের কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’