পাকিস্তানের উৎসবের দিনে নিউজিল্যান্ডের দুই সেঞ্চুরি
Published: 19th, February 2025 GMT
আবরার আহমেদকে সুইপ করে এক রান নিতেই পূর্ণ হলো সেঞ্চুরি। অপর প্রান্তে ব্যাট করা টম ল্যাথাম এসে জড়িয়ে ধরলেন উইল ইয়াংকে। সেঞ্চুরিটা তিনি করেছেন দলকে শুরু থেকে টেনে এনেই, তবে ৯৯ রানে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে চার বল। এরপর যখন তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন, স্বাভাবিকভাবে ইয়াংয়ের মুখে ছিল হাসি।
পরে অবশ্য সেঞ্চুরির আনন্দে মেতেছেন ল্যাথামও। দুজনের সেঞ্চুরিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৩২০ রান করেছে নিউজিল্যান্ড। ঘরের মাঠে টুর্নামেন্ট শুরুর ম্যাচেই পাকিস্তানকে জয়ের জন্য ওভারপ্রতি ৬-এর বেশি হারে রান তুলতে হবে।
করাচিতে দিনের শুরুটা অবশ্য পাকিস্তানের জন্য আনন্দেরই বেশি ছিল। খেলার কারণে যে নয়, তা বোঝা বোধ করি খুব একটা মুশকিল হওয়ার কথা নয়।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি দিয়েই ২৯ বছর পর পাকিস্তানে আইসিসির টুর্নামেন্ট ফিরেছে। এই আয়োজন ঘিরে ক’দিন ধরেই পাকিস্তানে উৎসবের আবহ। তার ছাপ থাকল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুরুর দিনেও—পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি এলেন, বিমানবাহিনীর সৌজন্যে আকাশেও হলো রঙের খেলা।
এরপর খেলার মাঠেও টসও জিতেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিউইরা ব্যাটিংয়ে নামার পর ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে ডেভন কনওয়ে ফেরার চার বল পরই আউট হন কেইন উইলিয়ামসন। এর আগেই অবশ্য একটা দুঃসংবাদ যোগ হয় পাকিস্তানের—ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোটে পেয়ে মাঠ ছেড়ে যান ফখর জামান। নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই অবশ্য মাঠে ফিরেছেন তিনি।
পাকিস্তানকে এরপর ভুগিয়েছে ইয়াং-কনওয়ে জুটি। ১২৬ বলে ১১৮ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডের এগিয়ে যাওয়ার ভিত গড়ে দেয়। ইয়াং অবশ্য বিদেশের মাটিতে নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পর ১১৩ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭ রান করে আউট হয়ে যান।
পরের পথটুকুতে কিউইদের এগিয়ে নেন ল্যাথাম। ইয়াংয়ের পর সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি, নিউজিল্যান্ডের রান নিয়ে যান তিন শ ছাড়িয়ে। ১০৪ বলে ১১৮ রানে অপরাজিত থাকেন ল্যাথাম। ৭৪ বলে তার সঙ্গে গ্লেন ফিলিপসের ১২৫ রানের জুটি ভাঙে ইনিংস শেষের দুই বল আগে।
পাকিস্তানের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন শাহিন আফ্রিদি ও হারিস রউফ। আফ্রিদির খরচ ৬৩ রান হলেও হারিসের বলে বেরিয়েছে ৮৩ রান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেটের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রবেশের বিকল্প মাধ্যম ভিপিএন বা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।
তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য লংগেস্ট সাইলেন্স: ইন্টারনেট শাটডাউনস ডিউরিং বাংলাদেশ’স ২০২৪ আপরাইজিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের (শাটডাউনের) ঘটনাকে পাঁচ ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এরপর প্রতি ধাপে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ও ধরন কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ডিজিটালি রাইটের গবেষক তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ধাপে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট হয়েছিল। প্রথমবার ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই এবং দ্বিতীয়বার ৫ আগস্ট। এ দুই ধাপে মোবাইল ডেটা ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ফোর-জিকে টু-জিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পাশাপাশি ফিল্টারিং প্রযুক্তি ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দিয়ে ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হয়েছিল।
সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক বৈশ্বিক সংস্থা ‘ওপেন অবজারভেটরি অব নেটওয়ার্ক ইন্টারফেয়ারেন্স’র সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সময় ও অন্তর্ভুক্ত এলাকার আওতার বিবেচনায় ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাকে বাংলাদেশে অন্যতম ব্যাপক ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে ইন্টারনেট শাটডাউন ও নানা মাত্রায় নিয়ন্ত্রণকে সময়ভিত্তিক পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন প্রথম ধাপ জুলাই ১৫-১৭, দ্বিতীয় ধাপ জুলাই ১৮-২৩, তৃতীয় ধাপ জুলাই ২৪-৩১, চতুর্থ ধাপ আগস্ট ১-৩ ও পঞ্চম ধাপ আগস্ট ৪-৫।
ভিপিএনের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় ২৪ জুলাই। এ সময় প্রোটন ভিপিএন, নর্ড ভিপিএন ও টানেলবিয়ারের মতো অ্যাপগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভিপিএন হলো নিরাপদ ও গোপন পথে ওয়েবসাইটে প্রবেশের উপায়, যা ব্যবহারকারীর অবস্থান ও ডেটা গোপন রাখে। বিশেষ করে ব্লকড করে দেওয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, সারা দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি নিয়ন্ত্রণ ও সুনির্দিষ্ট কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশ ও ঘোষণা ছাড়াই তা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা এসেছিল।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণা থেকে জানা গেছে, ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে সরকার থেকে মৌখিক ও অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলন বেগবান হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ডেটার প্রবাহকে ধীরগতির করে দেওয়া হয়। ১৫ জুলাই সকাল থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৬ জুলাই থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে বাধাগ্রস্ত করা হয়।
সহিংসতার তীব্রতা বাড়তে থাকলে ১৮ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট শাটডাউন শুরু করে সরকার। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ওই দিন দিবাগত রাত ১টা ২৯ মিনিটের দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যা ২৩ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিপিএন, মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ডের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১ থেকে ৩ আগস্টের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, ভিপিএন বাধাগ্রস্ত করা ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ৪ থেকে ৫ আগস্ট সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটালি রাইটের প্রতিবেদনে।