জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। শিবির বলেছে, বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে ছাত্রদল অন্যায়ভাবে দমনের চেষ্টা করছে। শুধু তা–ই নয়, নিজেরা সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে দায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যার প্রবক্তা ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ।

আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এ কথা বলেন।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাম্প্রতিক ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে সম্পৃক্ত করে ছাত্রদল মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছে বলে দাবি করেন শিবির সভাপতি। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদের টুলসগুলো কিছু ছাত্রসংগঠন ঘোষণা দিয়ে গ্রহণ করেছে।.

..শুধু তা–ই নয়, কুয়েটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিবিরের সম্পৃক্ততার মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে। খুলনার শিববাড়ীতে তাদের মিছিল থেকে ‘‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’’ এই স্লোগান দেওয়া হয়। এমন ভয়ংকর, হিংস্র স্লোগান আমরা ছাত্রলীগের মুখে শুনতাম। কিন্তু ছাত্রদলের মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও যুবদলের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য দিবালোকে পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয় অভিযোগ করে শিবির সভাপতি বলেন, কিন্তু ছাত্রদল তাদের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাস হয়ে গেলেও এখনো দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি বলে অভিযোগ করেন জাহিদুল ইসলাম। সারা দেশে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়ন, শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশকেন্দ্র এবং রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া রাজশাহীগামী একটি বাসে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আমরা ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রশাসনকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে; অথবা নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ সময় শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি কারাবন্দী জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তিরও দাবি করেন জাহিদুল।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহা (সাজ্জাদুর রহমান) আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে চরম অবমাননাকর ও ধৃষ্টতাপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন বলে অভিযোগ করেন জাহিদুল ইসলাম। তিনি রাখাল রাহার গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।

কুয়েটের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকলেও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন শিবির সভাপতি। সিলেটের এমসি কলেজে সাম্প্রতিক একটি ঘটনাতেও কতিপয় সংবাদমাধ্যম উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা সিবগাতুল্লাহ, মো. আবু সাদিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র ল ইসল ম র ঘটন স গঠন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • ডিবির অভিযানে আ.লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭
  • পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
  • সাবেক আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল