বহু নাটকীয়তার পর এএসপিদের সমাপনী কুচকাওয়াজ
Published: 23rd, February 2025 GMT
এক বছর প্রশিক্ষণ শেষে গত বছরের ২০ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। দেড় হাজারের বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আগের রাতে হঠাৎ কুচকাওয়াজ স্থগিত করে প্রশাসন। এর পর ২৪ নভেম্বর সেই অনুষ্ঠানের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সেবারও অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। বিসিএস ৪০তম ব্যাচের এএসপিদের সমাপনী কুচকাওয়াজকে কেন্দ্র করে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটতে থাকে। অবশেষে সেই সমাপনী কুচকাওয়াজটি হয়ে গেল।
রোববার সকাল ১০টায় রাজশাহীর চারঘাটে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদায় প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সব নাগরিকের, কোনো দলের নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়, কোনো সম্প্রদায়ের নয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করবে। তারা কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন কিংবা তাদের অন্যায্য ও অন্যায় নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে অপেশাদার আচরণ ও বেআইনি কাজ করবে না। আজকের এই সমাপনী অনুষ্ঠানে আপনারা এই শপথে বলীয়ান হবেন– এই আশাবাদ ব্যক্তি করছি। নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্তব্য পালন করতে হবে। থানায় এসে মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেই দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয় বিসিএস ৪০তম ব্যাচের ৬৩ জন ও ৩৮তম ব্যাচের তিনজনসহ মোট ৬৬ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারের। এক বছর প্রশিক্ষণ শেষে গত বছরের ২০ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে আগের রাতে তা স্থগিত করা হয়। পরে আবারও দিন ঠিক করার পর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছিল।
এর পর গত ১৫ ডিসেম্বর এলোমেলোভাবে হেঁটে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন– এমন অভিযোগ এনে শিক্ষানবিশ ২৫ এএসপিকে শোকজ করা হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের মাত্র দুই দিন আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি শোকজপ্রাপ্ত ২৫ জনের মধ্যে ছয়জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অবশেষে আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ৪০তম বিসিএস ব্যাচের ৫৭ জন ও ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের তিনজনসহ মোট ৬০ প্রশিক্ষণার্থীর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হলো।
প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদার অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান ভূঞা।
প্যারেড অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর ১১ পদাতিক ডিভিশনের মেজর জেনারেল এস এম আসাদুল হক, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাওয়াদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) বাংলাদেশ পুলিশ আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ ও আরএমপির পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানসহ উচ্চপদস্থ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী দুই প্রশিক্ষণার্থী হলেন রুহুল আমিন লাবু ও এম সায়েলিন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন হয় ছ ল ব স এস
এছাড়াও পড়ুন:
বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ
এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।
বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।
বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।