‘অভিনয়ের সময় অপূর্ব ভাইয়ের চোখ কথা বলে। অভিনয়ের সময় তাঁর চোখে তাকিয়ে অভিনয় করা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়।’ এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা অপূর্বর চোখ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন তাসনিয়া ফারিণ। অপূর্বর চোখ ও তাঁর স্টাইল নিয়ে মন্তব্য নিলে এমন শ-খানেক মন্তব্য মিলবে তাঁর সহকর্মীদের থেকেই। তাঁর ব্যক্তিত্ব, মধ্যবিত্ত পরিবারের স্ট্রাগল করা ছেলের চরিত্রে তাঁর রূপদান, কথা বলার স্টাইল– সবই মুগ্ধকর সবার জন্য।
বলিউডে আমির খানকে বলা হয় ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। তাঁর নাম এলেই অবধারিতভাবে জুড়ে দেওয়া হয় এ তকমা। অনেকের মতে, তিনি সবকিছুতেই পারফেক্ট, সবকিছু বেশ নিখুঁতভাবে করে থাকেন। ঢাকাই শোবিজের অপূর্বর বেলায়ও মধ্যবিত্ত পরিবারের চিরচেনা গল্পে, জীবনসংগ্রামের বিভিন্ন পোড় খাওয়া চরিত্রে ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ হিসেবে অপূর্বকে বিশেষভাবে বিশেষায়িত করাই যায়; এবং করছেনও অনেকে।
শোবিজে ১৮ বছরের যাত্রা অপূর্বর। মানে ১৮ বসন্ত! এ ১৮ বছরের কত রকম চরিত্রে নিজেকে রূপায়ণ করেছেন, তার হিসাব অভিনেতারও নেই। তবে সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া তাঁর ‘চালচিত্র’ সিনেমাটির চরিত্র নিয়ে অকপটেই বলতে পারলেন। এ ছবিটির মাধ্যমেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের সিনেমায় দেখা গেল তাঁকে। ছবি মুক্তির আগে এক সাক্ষাৎকারে অপূর্বর মধ্যে বলিউড তারকা শাহরুখ খানের চার্ম খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চালচিত্র সিনেমার নির্মাতা ডি গুপ্ত।
ভারতীয় গণমাধ্যম ‘অন্য সময় প্রাইম’ নির্মাতা বলেন, ‘অপূর্বর মধ্যে শাহরুখের একটা চার্ম আছে। আর তাই অতি নাটকীয়ভাবে তাঁকে ব্যবহার করতে চেয়েছি। আগে ওর অনেক নাটক আমি দেখেছি। সেগুলো দেখেই মনে হয়েছে ওর মধ্যে শাহরুখের যে চার্মটা আছে, সেটাই ধরতে হবে।’
এই অ্যাকশন ধারার চালচিত্র সিনেমায় অপূর্ব ছাড়া ছিলেন টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, শান্তনু মাহেশ্বরী, ইন্দ্রজিৎ বসু ও রাইমা সেনের মতো বাঘা বাঘা তারকারা। এই তারকারাও অপূর্বর প্রশংসা করতে ছাড়েননি। অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী তো অকপটে বলেই দিলেন, ‘সে (অপূর্ব) এত বড় তারকা শুটিংয়ে সেটা বুঝতে দেয়নি। কলকাতায় তাঁর ভক্ত দেখে বিস্মিত আমরা।’
সিনেমাটি মুক্তির পর পশ্চিমবঙ্গে অপূর্বর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সবাই। সেই প্রশংসার রেশ কাটতে না কাটতেই ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে মুক্তি পায় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিটের বিশেষ নাটক ‘মন দুয়ারী’। অপূর্বকে মুখ্য ভূমিকায় নিয়ে নাটকটি নির্মাণ করেছেন জাকারিয়া সৌখিন। মুক্তির চার দিনের মাথায় ১০ মিলিয়ন ভিউর ঘর অতিক্রম করেছে। এককথায়, নাটকটি দেখতে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন দর্শক।
মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, এটি ইউটিউবে না দিয়ে সিনেমা হলে মুক্তি দিলে কী ক্ষতি হতো! বেশির ভাগ দর্শকই নাটকটিকে বড় ক্যানভাসের সিনেমা বলতে চাইছেন। যেটি দর্শকদের বাংলা সিনেমার স্বর্ণালি সময়ে নিয়ে গেছে ‘মন দুয়ারী’র পারিবারিক ক্লাইম্যাক্সে ভরা চিত্রনাট্য আর চোখ ধাঁধানো অপরূপ সিনেমাটোগ্রাফির সুবাদে।
গল্পে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অপূর্ব হঠাৎ গ্রামে ফেরেন দাদিকে ‘বেটার লাইফ’ দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে। কিন্তু পারিবারিক বন্ধন ছেড়ে দাদি দিলারা জামান যেতে চান না। বাধা হয়ে দাঁড়ায় কাজিন নাজনীন নিহাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
এমন ফ্যামিলি সেন্টিমেন্ট, রোমান্টিক আমেজের সঙ্গে বাংলার অপরূপ দৃশ্য আর বিশেষ দুই গান এবং আবহসংগীতের মেলবন্ধনে ‘মন দুয়ারী’ যেন অবিশ্বাস্য এক পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা হয়ে ধরা দিয়েছে ইউটিউব দর্শকদের মাঝে। দর্শকদের এমন ভালোবাসা দেশ থেকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে উপভোগ করছেন অপূর্ব। সেখান থেকেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন তাঁর দর্শকদের কাছে। জানিয়েছেন, দর্শকদের এ ভালোবাসাই ১৮ বছরের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
অপূর্ব বলেন, ‘দর্শকরাই আমাদের সব। তাদের কথা মাথায় রেখেই কাজ করি। তাই দর্শকদের কাছাকাছি থাকতে পারছি। কাজ দিয়ে আমি আমার দর্শকদের কাছে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।’
আগামী ঈদে অপূর্ব অভিনীত ওয়েব ফিল্ম ‘হাউ সুইট’ মুক্তি পাবে। কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত এতে অপূর্বর সঙ্গে আছেন তাসনিয়া ফারিণ। এ কাজটি নিয়েও দর্শকদের মাঝে প্রত্যাশা জেগেছে। অপূর্ব জুটির নতুন রসায়ন মন দুয়ারী কিংবা চালচিত্রের রেশ ছাড়িয়ে যায় কিনা সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মন দ য় র
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঝুঁকি আসলে কতটা
সাধারণ সময়ে এই ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক, যুগ পরিবর্তনকারী ও ভয়জাগানিয়া বলে মনে হতো। কারণ, স্নায়ুযুদ্ধকালেও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে রাশিয়ার উপকূলের দিকে পরমাণু সাবমেরিন পাঠানোর এমন নির্দেশ দেননি।
এই ধরনের পরমাণু উত্তেজনার খেলায় আগে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নেতা জড়াননি।
সত্যি বলতে, ১৯৬২ সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়ে বিশ্বকে পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ১৩ দিন ধরে পুরো পৃথিবী ভয় আর অনিশ্চয়তায় কাঁপছিল।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।
তবে তার অর্থ এই নয় যে ট্রাম্প যা করলেন, সেটি কোনো ঝুঁকিমুক্ত সিদ্ধান্ত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অবস্থান এমনভাবে বদলেছেন, যেটা তাঁর পূর্বসূরিদের কেউই সাহস করেননি। এমনকি অনেকটা হালকাভাবেই তিনি পারমাণবিক উত্তেজনার সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রেখেছেন।
এখন যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পাল্টা জবাব দিতে চান, তাহলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।
ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, পুতিন তেমন কিছু করবেন না। আসলে ট্রাম্প সম্ভবত এবার রাশিয়ার কৌশলই ব্যবহার করছেন।
পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন। এই কালিনিনগ্রাদ এলাকাটি ন্যাটোর সদস্যদেশ পোল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত।
২০২৩ সালে পুতিন বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেন। স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া নিজেদের দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করল। তিনি ইউক্রেনে বারবার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
আর গতকাল শুক্রবার পুতিন ঘোষণা দিলেন, রাশিয়া ওরেশনিক নামে একধরনের হাইপারসনিক মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি শুরু করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৫ সালের মধ্যেই বেলারুশে মোতায়েন করা হবে। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য নির্দিষ্ট স্থানও ইতিমধ্যে বাছাই করে রাখা হয়েছে।
গত কয়েক দিনে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের নানা হুমকি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে। মেদভেদেভ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করছেন। তিনি এর আগেও পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন।
পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন।কিছুদিন আগেও পুতিনের ভক্ত হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন এবং তার মোকাবিলায় পাল্টা চাল দিচ্ছেন।
অন্যভাবে বললে, রাশিয়া যেটাকে ‘কেবল হুমকি’ হিসেবে দিচ্ছে, ট্রাম্প সেটাকে ‘আসল হুমকি’ হিসেবে নিচ্ছেন। এটা অনেকটাই উল্টো পরিস্থিতি। কারণ, ট্রাম্পের সমর্থকেরা সাধারণত বলে থাকেন, তাঁর কথাকে সরাসরি না নিয়ে রূপকভাবে বুঝতে হবে।
মেদভেদেভকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প তাঁর নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, ‘শব্দের গুরুত্ব অনেক। আর সেগুলো অনেক সময় এমন পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যা কেউ চায় না।’
তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকিকে অনেকটাই নাটকীয় ‘পারফরম্যান্স’ বলা যায়। হ্যাঁ, এটি উচ্চ ঝুঁকির, দায়িত্বহীন। তবে শেষমেশ এটি একধরনের ‘লোক দেখানো কার্যকলাপ’।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। আগামী কয়েক দিনে ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করতে হবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দিন দিন এটির গুরুত্ব আরও বাড়ছে। কারণ, গতকাল শুক্রবার কিয়েভে রাশিয়ার এক হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনা দেশগুলো বিশেষ করে চীন, ভারত, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরিকল্পনাও ট্রাম্পের জন্য কূটনৈতিক চাপে পরিণত হয়েছে।
এ সবকিছুর মাঝখানে ট্রাম্প যদি পরবর্তী সময়ে তাঁর হুমকি থেকে সরে দাঁড়াতে চান, তাহলে তিনি দেখাতে পারবেন যে সাবমেরিন মোতায়েনের মাধ্যমে তিনি রাশিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তিনি এমন একটি কৌশল নিয়েছেন, যার ঝুঁকি হয়তো বেশি, কিন্তু অর্থনৈতিক খরচ তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে যেসব মিত্রদেশকে তিনি অন্য ক্ষেত্রে পাশে পেতে চান, তাদের ওপর শুল্ক আরোপের চেয়ে এই মূল্য তুলনামূলক কম।