নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুরধ্বনী রানী করকে (৭৮) মৃত দেখিয়ে প্রায় দেড় বছর বয়স্ক ভাতাবঞ্চিত রাখার পর এবার তাঁকে ‘জীবিত’ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর মৃত্যুসনদ তৈরি করে ভাতা না দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

আজ রোববার মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সুরধ্বনী রানী মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামের মৃত নরেন্দ্র চন্দ্র করের স্ত্রী।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুরধ্বনী রানী কর আট বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। ভাতাপ্রক্রিয়া ডিজিটাল হওয়ার পরও তিনি নিয়মিত ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু বছর দেড়েক আগে হঠাৎ তাঁর মুঠোফোন নম্বরে ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা পাননি। পরে কয়েকজনের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি মারা গেছেন। তাঁর জায়গায় আরেকজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। সমাজসেবা কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ঘুরেও ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি।

এ নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘বয়স্ক ভাতা বন্ধের খোঁজ নিতে গিয়ে সুরধ্বনী জানলেন তিনি মৃত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে এলে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের নির্দেশে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সমাধানের চেষ্টা চালান।

সম্প্রতি সুরধ্বনীর বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারের মৃত্যুসনদের ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী সুরধ্বনী রানীর স্থলে অন্যজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছিল। সুরধ্বনী যেহেতু জীবিত আছেন বলে জানতে পেরেছি, তাই ওই এলাকার অন্য এক মৃত ব্যক্তির জায়গায় তাঁকে প্রতিস্থাপন করে ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চলতি মার্চ মাস থেকে তিনি ভাতা পাবেন। এ ঘটনায় তেঁতুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামকে শোকজ করেছে উপজেলা প্রশাসন।’

ভুক্তভোগী সুরধ্বনী রানী কর বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সমাজসেবা অফিসে গিয়েছিলাম। তাদের কথামতো নতুন একটি মোবাইল নম্বরে নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে জমা দিয়েছি। চলতি মাস থেকে ভাতা পাব বলে জানিয়েছে। অনেক কষ্ট করে আমাকে চলতে হয়। ভাতার টাকাটা পেলে ওষুধ কিনে কোনো রকমে চলতে পারব।’ তিনি জানান, দুই ছেলে রেখে ২০ বছর আগে স্বামী মারা যান। এক ছেলে ছোটবেলায় হারিয়ে গেছে। আরেক ছেলে দিনমজুরি করে পরিবার নিয়ে কষ্ট করে চলেন।

আরও পড়ুনবয়স্ক ভাতা বন্ধের খোঁজ নিতে গিয়ে সুরধ্বনী জানলেন তিনি মৃত২৮ জানুয়ারি ২০২৫

মোহনগঞ্জের ইউএনও জুয়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি নজরে আসামাত্র দ্রুত সুরধ্বনী রানীর ভাতার ব্যবস্থা করতে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তাঁর ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জেনেছেন। এদিকে মৃত্যুসনদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে শোকজ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শোকজের কাগজ এখনো পাইনি। তবে এটা আমার দোষ নয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রশিদের কথায় আমি মৃত্যুসনদে সই করেছিলাম।’ খোঁজখবর না নিয়ে মৃত্যুসনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে বলেন, কোনো মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি মূলত সদস্যরা নিশ্চিত করে সনদ তৈরি করেন। চেয়ারম্যান এতে শুধু স্বাক্ষর দেন। এর দায় ইউপি সদস্যের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বয়স ক ভ ত র ব যবস থ ম ত য সনদ কর মকর ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ