বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলে আর শেষ হতে চায় না কেন
Published: 12th, March 2025 GMT
এই লেখার শিরোনাম আরও কয়েক রকম হতে পারত। শিরোনাম হতে পারত—‘সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সমস্যা কোথায়’ কিংবা ‘ভর্তি–বাণিজ্য আর কত দিন চলবে’। আবার সমস্যার আরেকটি দিক দেখিয়ে শিরোনাম করা যেত ‘লিখিত পরীক্ষা নিয়েও কেন লাভ হচ্ছে না’ অথবা ‘এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে ভর্তি নিতে বাধা কোথায়’।
লেখার শিরোনাম নিয়ে ভাবতে হচ্ছে, কারণ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই ফোন করে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে নানা রকম মন্তব্য করে চলেছেন। জানতে চাইছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে এত দেরি হয় কেন?
অভিভাবকদের মধ্যে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ইউজিসি সেটা নিয়ে কাজও করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল করা যায়নি। যে কটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ধরেবেঁধে একক ভর্তি পরীক্ষায় রাজি করানো গিয়েছিল, এ বছর তাদেরও বেঁকে বসতে দেখা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে যার মতো ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায় কেন? এর উত্তর হতে পারে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই চায় নিজের মতো প্রশ্নপত্র তৈরি করে উপযুক্ত শিক্ষার্থীকে বাছাই করতে। তবে এ যুক্তি খুব জোর পাবে না। কারণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পাশাপাশি রাখলে বোঝা যায়, সেগুলোর গুণগত ধরনে বিশেষ ফারাক নেই।
একক ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আর কী আপত্তি আছে দেখা যাক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিযোগ, সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ভালো কথা। কিন্তু আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে গিয়েও তো দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করতেও বেগ পেতে হয়।
একক পরীক্ষা না হওয়ার কারণে আরেকটি বাড়তি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যেমন কোনো পরীক্ষার্থীর যদি প্রথম পছন্দ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তবে সেখানকার ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে অন্য কোথাও সে টিকে গেলেও ভর্তি হতে পারে না, কিংবা ভর্তি হলেও পরে সেখানকার ভর্তি বাতিল করে আসতে হয়।
১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে চলা দেশের চারটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় একক পরীক্ষার পক্ষপাতী নয়। তারা নিজেদের ‘বড়’ মনে করে, অথচ ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে সিজিপিএ যথেষ্ট বেশি চায় না। ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চার বছর ধরে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষাও নিচ্ছে। ফলে ভর্তি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে অতিরিক্ত সময় লেগে যাচ্ছে।
লিখিত পরীক্ষার পক্ষে অসংখ্য যুক্তি উপস্থাপন করা যায়। তবে তার জন্য প্রশ্নও যথাযথ হতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকটি অনুষদের লিখিত পরীক্ষায় এমন প্রশ্নও দেখা যায়, যার সঙ্গে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের ধরনে বিশেষ পার্থক্য নেই। সেসব প্রশ্নের উত্তর এক লাইন বা এক শব্দের বেশি নয়। যেমন এ বছর গ ইউনিটের প্রশ্নে এসেছে, সংশোধন করো: ‘পরিচ্ছদ মানে অধ্যায়, পরিচ্ছেদ মানে পোশাক’। এখনে মূলত পরিচ্ছেদ ও পরিচ্ছদ শব্দের অর্থজ্ঞান যাচাই করা হয়েছে। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মধ্যেই এ ধরনের বিষয় যাচাই করা সম্ভব ছিল।
লিখিত পরীক্ষা সফল করতে গেলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও সীমিত রাখতে হয়। বিপুলসংখ্যক লিখিত খাতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে সমস্যা রয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষকভেদে একেকটি খাতায় অনেক বেশি নম্বরের ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। এটা যেমন কোনো কোনো পরীক্ষার্থীকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে, তেমনি কোনো কোনো পরীক্ষার্থীকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এমনটা মোটেও আশা করা যায় না। কেননা, মাত্র ১ নম্বর কমবেশি হওয়ার কারণে মেধাক্রমের ব্যবধান হাজারের ওপরেও চলে যেতে দেখা যায়।
লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বেশি সময় লাগছে এবং নম্বরে অযাচিত ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। এর দরুন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এখনো লিখিত পরীক্ষা নিতে সাহস করছে না। কিন্তু এক ঘণ্টার বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে যে পরিমাণ ফি নেওয়া হয়, তা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়।
ভর্তি পরীক্ষার কাজে যুক্ত থাকার কারণে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে লাখ টাকার বেশি আয় করতে দেখা যায়। আর আলাদা আলাদা ফরম কেনা বাবদ একজন অভিভাবককে কত টাকা খরচ করতে হয়, সেটা তিনিই ভালো জানেন। দরিদ্র অভিভাবকের কাছে ভর্তি পরীক্ষার খরচ রীতিমতো একটা আতঙ্কের নাম। সমন্বিত পরীক্ষা অনেক ধরনের সমস্যা কমাতে পারে। দেশের মেডিকেল কলেজগুলো সেই প্রমাণ রেখেছে।
এরপরও যদি একক ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে মতের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা না যায়, তবে বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। এসএসসি পরীক্ষার নম্বর কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য হয়। একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষার নম্বরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচনা করা যায়। এসব পাবলিক পরীক্ষার নম্বর নিয়ে যদি দ্বিধা থাকে, তবে সেখানে একেকটি খাতা দুজন পরীক্ষককে দিয়ে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। তাদের গড় নম্বরের ভিত্তিতে জিপিএ ও নম্বরপত্র তৈরি হবে। মোদ্দাকথা, যে ভাবেই হোক ভর্তি পরীক্ষার দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল আয়োজন থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ পর ক ষ র থ পর ক ষ র প পর ক ষ র ন ক পর ক ষ পর ক ষ য় সমন ব ত সময় ল গ পর চ ছ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু
তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
রোববার তেহরান দূতাবাস এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকদের নিম্নোক্ত মোবাইলফোন নম্বরগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
+ ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫।