অভ্যুত্থানের সময় ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত শতাধিক ব্যক্তি শনাক্ত
Published: 13th, March 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হামলাসংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম। উপাচার্যের কার্যালয়সংলগ্ন লাউঞ্জে প্রায় ৫৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি উপাচার্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পরে কাজী মাহফুজুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত হামলা হয়েছে, আমরা তার সবকিছু এ প্রতিবেদনে আনার চেষ্টা করেছি। সেখানে আমরা দেখেছি, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে।’
মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘১২২ জন ঢাবি শিক্ষার্থী, যারা হামলায় জড়িত, তাদের প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এ ছাড়া বহিরাগতও অনেক শিক্ষার্থীর প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। এ প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট থেকে পাশ হয়ে এলে আমরা তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানাব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে। এ ছাড়া যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে বলা হয়েছে।’
আইন বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ জুলাই বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় আমরা দেখেছি, মল চত্বরে যারা হামলা করেছে তাদের মাথায় সাদা ক্যাপ ছিল। এরপর যারা আহত হয়েছে তারা যখন ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছে, তাদেরও হামলা করেছিল ছাত্রলীগ। এরপর ডাক্তারদের বলা হয়েছিল চিকিৎসা না দিতে, যেখানে আমাদের প্রশাসনেরও যোগসাজশ থাকতে পারে।’
কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা তদন্ত করার সময় বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজতে গেলে সেখানে তার কোনো হার্ডডিস্ক পাইনি। সব হার্ডডিস্ক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে একটা মেইল ও নম্বর পাঠিয়েছি। শিক্ষার্থীরা সেখানে জুলাইয়ে হামলার নানা ছবি-ভিডিও পাঠিয়েছে। এ ছাড়া আমরা ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল পত্রপত্রিকার সংবাদগুলো দেখেছি। সেটার ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি করা হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চলাকালীন ৭০ জন শিক্ষককে পাওয়া গেছে, যাঁরা শিক্ষার্থীদের জামায়াত, শিবির, ছাত্রদল, রাজাকার বলে ট্যাগিং (তকমা) করেছেন, যেটা আন্দোলনে প্রভাব ফেলেছে। কেননা শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীরা প্রভাবিত হবে, সেটা স্বাভাবিক। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে জানতে চাইলে অনেকে স্বীকার করেছেন এবং সেটার জন্য “সরি” বলেছে।’
প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট অন্য শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষ র থ দ র ওপর ১৫ জ ল ই উপ চ র য ন র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা
রাজধানীতে হাত ও পা বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ীর কাউন্সিল শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির একটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বিদ্যুৎমিস্ত্রি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পুরান ঢাকার সদরঘাটে। পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে রাজধানীর মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি এলাকায় থাকতেন।
আনোয়ারের ভাই দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে আনোয়ার বাসা থেকে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পরে খবর পান, তাঁর ভাইকে কাউন্সিল উত্তর শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির গ্যারেজে নিয়ে হাত–পা বেঁধে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে গিয়ে আনোয়ারের হাত–পা বাঁধা ও রক্তাক্ত মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান তাঁর মা।
লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়েছে বলে মৃত্যুর আগের তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন আনোয়ার। তাঁর ভাই এ কথা জানিয়ে বলেন, এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলেই আনোয়ারের মৃত্যু হয়। এরপর যাত্রাবাড়ীর থানা-পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
গতকাল সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভোরে সঙ্গী সুমনকে নিয়ে আনোয়ার বাসের কাঠামো তৈরির কারখানায় চুরি করতে যান। এ সময় সেখানে থাকা লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। তাঁর সঙ্গী সুমন পালিয়ে যান।