গুম-খুনে জড়িত সদস্যদের বিচার চেয়ে র্যাব কার্যালয়ের সামনে ‘শহীদি মার্চ’ সদর দপ্তরের সাম
Published: 14th, March 2025 GMT
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) যেসব সদস্য গত ১৬ বছরে গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিচারের দাবিতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরের সামনে জুলাই মঞ্চ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আজ শুক্রবার বিকেলে এই কর্মসূচি পালন করে।
এই কর্মসূচি থেকে জুলাই গণহত্যার বিচার, এই গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা, গণহত্যায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জানানো হয়েছে।
‘শহীদি মার্চ’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি সাকিব হোসাইন বলেন, র্যাব বাংলাদেশে এমন সব কাজ করেছে, যার ফলাফল হিসেবে জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো র্যাবকে নিষিদ্ধের পরামর্শ দিয়েছে। র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক নিজে স্বীকার করেছেন, বিগত সময়ে র্যাব গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে জড়িত ছিল। অথচ সাত মাস পার হলেও এখনো র্যাবের যে সদস্যরা গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের তালিকা প্রকাশ করেনি র্যাব। পাশাপাশি চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে র্যাবের যাঁরা গণহত্যায় জড়িত, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।
জুলাই মঞ্চের আরেক প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বর্তমানে প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করছে না। যারা স্বৈরাচারের আমলে নিয়োগ পেয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত জুলাই মঞ্চের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
শহীদি মার্চে সংহতি জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, বিগত সরকার র্যাবকে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্য খারাপ নন। যাঁরা আওয়ামী লীগের দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি পেয়েছিলেন, তাঁরাই হাসিনাকে রক্ষা করতে ছাত্র–জনতার ওপর গুলি চালিয়েছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পুরো বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।
জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি অর্নব হুসেইনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে মুতাছিরুল ইসলাম, মুন্তাজুল ইসলাম, সুরাইয়া আন্তা, আব্দুল নুর তালুকদার, ফুহাদ হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘গণভোট নিয়ে উত্তাপ জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। রাজনৈতিক দল থাকলে মতবিরোধ থাকবে, আমি এক কথা বলব, আরেকজন আরেক কথা বলবে—এটাই নিয়ম। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এবং প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে সিদ্ধান্ত যে রকমই হোক না কেন, জাতীয় নির্বাচন আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
প্রেস সচিব আজ শুক্রবার দুপুরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিচ্ছে। জাতির জন্য যেটা সবচেয়ে মঙ্গলজনক, সে কাজটাই প্রধান উপদেষ্টা করবেন। এখানে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। অনেক বড় বড় কাজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করে এসেছে। জুলাই ঘোষণা দিয়েছে, জুলাই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর হয়েছে। নির্বাচনের কাজ পুরো গতিতে চলছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ভালো। আপনারা একটি-দুটি মৃত্যু হলে, চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটলেই বলতে থাকেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ। আপনারা একটু ভালোভাবে দেখেন পরিস্থিতি কেমন। আপনারা নিজেরা বিচার করে একটা সিদ্ধান্ত নিন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। পুলিশ খুব ভালোভাবে কাজ করছে। অন্যান্য বাহিনীও ভালো কাজ করছে। রাজনৈতিক সংঘাতও গত মাসে কম হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আওয়ামী লীগ তো অনেক টাকা বাংলাদেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তারা নিয়ে গেছে। ওই ডলার তারা খরচ করছে। এখন যে কেউ একটা ঝটিকা মিছিল করলেন, হয়তোবা তাঁর অ্যাকাউন্টে ডলার জমা পড়ছে। আওয়ামী লীগ এ রকম ঝটিকা মিছিল করে আগামী ৫০ বছরেও কিছু করতে পারবে না।
এর আগে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ ছিল মেয়েদের। আমাদের নারীরা, মেয়েরা তাঁদের ভাইদের বুলেট নিজেরা বুক পেতে নিয়েছেন। জুলাই কন্যারা যে বাংলাদেশ বানাতে চেয়েছেন, সেই বাংলাদেশ আমরা বানাতে পারছি কি না, সেটা অবশ্য অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন। আমি বলব, আমাদের চেষ্টা আছে, আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশ এমন একটা দেশ হোক, যেখানে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না।’
জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের সভাপতি জান্নাতুল নাঈম প্রমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল, সহ–উপাচার্য রেজাওয়ানুল হক ও নোয়াখালী জেলা অতিরিক্ত প্রশাসক মুহাম্মদ ইসমাঈল, প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীর, জুলাই শহীদ নাছিমার বোন কোহিনুর আক্তার প্রমুখ।
বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বার্ষিক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। এর আগে তিনি সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় অংশ নেন।