মুঠোফোনে হিজবুল্লাহ নেতার ছবি, চিকিৎসককে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
Published: 18th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের এক চিকিৎসকের মুঠোফোনে হিজবুল্লাহর সাবেক নেতার প্রতি ‘সহানুভূতিশীল ছবি ও ভিডিও’ পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁকে লেবাননে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত সপ্তাহে এ ঘটনা ঘটেছে বলে গতকাল সোমবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানায়।
ওই চিকিৎসকের মুঠোফোনের ডিলিটেড আইটেম ফোল্ডারে এসব ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে।
রাশা আলাউইহ বলেছেন, লেবাননে থাকাকালে গত মাসে নিহত হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহর জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। একজন মুসলিম হিসেবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি হাসান নাসরুল্লাহকে সমর্থন করতেন।
বোস্টনের এক ফেডারেল বিচারক ওই চিকিৎসককে তাৎক্ষণিকভাবে লেবাননে ফেরত পাঠানো ঠেকাতে গত শুক্রবার একটি আদেশ জারি করেছিলেন। মার্কিন বিচার বিভাগ ওই বিচারককে উল্লিখিত বিবরণ পাঠিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে যে মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা (সিবিপি) তাঁর আদেশ ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করেনি।
রাশা আলাউইহ নামের ৩৪ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক লেবাননের নাগরিক। তাঁর এইচ-১বি ভিসা ছিল। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে লেবাননে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফেরার পর গত বৃহস্পতিবার বোস্টনের লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয় তাঁকে। এ ঘটনায় তাঁর চাচাতো ভাই তাঁকে ফেরত পাঠানো স্থগিত করতে একটি মামলা করেন।
ওই চিকিৎসককে এমন সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
রাশা আলাউইহর বিষয়ে বিচার বিভাগ জানিয়েছে, কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সহকারী অধ্যাপকের ফোনে সিবিপি যা পেয়েছে এবং বিমানবন্দরে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশ করতে দেওয়ায় অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঅভিবাসীবিষয়ক ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির আওতা বাড়ানোর ট্রাম্পের পদক্ষেপ আটকাতে মামলা২৩ জানুয়ারি ২০২৫রয়টার্সের পর্যালোচনা করা সেই সাক্ষাৎকারের একটি প্রতিলিপি অনুসারে, রাশা সিবিপিকে বলেছিলেন, তিনি হিজবুল্লাহকে সমর্থন করেন না। তবে ধর্মীয় কারণে নাসরুল্লাহকে তিনি অনেক বেশি শ্রদ্ধা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি একজন চিকিৎসক। এটি মূলত বিশ্বাসের বিষয়।’
যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে মনে করে থাকে। এ গোষ্ঠীকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ইরানের সমর্থনপুষ্ট প্রতিরোধ বাহিনী বা এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এদিকে রাশাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপসারণের কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর কিছু সহকর্মীসহ কয়েক শ বিক্ষোভকারী রোড আইল্যান্ড স্টেট হাউসের লনে জড়ো হয়ে তাঁর প্রতি সমর্থন জানান। তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘তাঁর ভিসা বৈধ। তিনি কিছুই ভুল করেননি। এখনই গণ-অপসারণ বন্ধ করুন।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে বাংলাদেশিদের উদ্বেগের কারণ নেই ২১ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনপ্রথম দিনেই অভিবাসী তাড়ানোর হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের২০ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। পানিতে ডুবে যাওয়ার পর উদ্ধারে ধীরগতি, প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ কিছু বিষয় উঠে এসেছে প্রাথমিক প্রতিবেদনে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারসহ তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্য, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী শারীরিক শিক্ষা বিভাগের নিয়মানুযায়ী হলগুলোর সাঁতারু দলের জন্য একজন প্রশিক্ষক বাধ্যতামূলক। সব হলে একজন করে ক্রীড়া প্রশিক্ষকের পদ থাকলেও সায়মার হলে (মন্নুজান হল) পদটি ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া সায়মা সাঁতার দলের সদস্য ছিল না। তবু তিনি সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ঘটনার দিন আরও দুটি হলের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ছিল। সেই হল দুটির প্রশিক্ষকেরা সুইমিংপুলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই সাঁতার অনুশীলন করছিলেন সায়মাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই সবাই সাঁতার কাটলেও সবার অগোচরে হঠাৎ ডুবে যান সায়মা। বিষয়টি টের পাওয়ার পর তাঁকে পুল থেকে ওপরে তুলতে সময় লেগেছে ২০ মিনিটের বেশি। বাইরে থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সায়মাকে পুল থেকে উদ্ধার করেন প্রশিক্ষকেরা। ওপরে তুলে তাঁর বুকে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুখ দিয়ে পানির সঙ্গে খাবার বের হচ্ছিল।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে সেখান থেকে রওনা করা অ্যাম্বুলেন্সে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না। জরুরি বিভাগে থাকা সিলিন্ডারেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল না। সেটি বদলে গাড়ি প্রস্তুত করে রওনা দিতে আট মিনিট সময় লেগেছে। একটি সিলিন্ডারে কতটুকু অক্সিজেন আছে বা নেই, সে সম্পর্কে কর্তব্যরত নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও চর্চা না থাকায় সেখানেও সময় নষ্ট হয়। তবে সায়মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অনেক বেশি চেষ্টা ছিল।
সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা সায়মার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। এর জন্য তিনি চিকিৎসাও নিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করতেন তিনি।’
প্রতিবেদনে সুপারিশের বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, প্রশিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী সাঁতার কাটার সময় পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও প্রায় ২০ মিনিট পর তাঁর বিষয়টি নজরে আসা প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। দুজন প্রশিক্ষক বসে নিজেরা গল্প করছিলেন। ওনারা যদি এটা না করতেন, হয়তো তাঁদের দৃষ্টিতে মেয়েটি থাকতেও পারত। তাই তদন্ত কমিটি তাদের প্রশিক্ষক পদ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে। সুইমিংপুল তদারকির জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে কর্মরতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও সুপারিশ করা হয়েছে।
শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে একটি প্রশ্ন করাকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে সিনেট ভবনেই স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন ও অনশন কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। শিক্ষার্থীদের দাবি, সিনেট ভবনে ওই শিক্ষককে প্রশ্ন করতে বাধা দিয়ে হেনস্তা করেন ওই কর্মকর্তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকই বিষয়টি ভালোভাবে বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে সায়মা হোসাইনের মৃত্যুতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ও ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের আশ্বাসে সেদিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা গত তিন দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্যারিস রোডে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। গতকাল প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের কথা থাকলেও করা হয়নি। এ জন্য আজ দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা প্রশাসন ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।