গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে যুবক খুনের পেছনে কি অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ
Published: 21st, March 2025 GMT
গুলশানের বিপণিবিতান পুলিশ প্লাজার সামনের সড়কে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমনকে গুলি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে যখন এ ঘটনা ঘটে, তখন অনেক মানুষ ঈদের কেনাকাটা করতে ওই বিপণিবিতানে ঢুকছিলেন-বের হচ্ছিলেন। বিপণিবিতানটির সামনে তখন গাড়ির ব্যাপক চাপ ছিল। হকারদের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যেই পুলিশ প্লাজার উল্টোপাশে উত্তর-পশ্চিম কোণে ফুটপাতে সুমনের সঙ্গে খুনিদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে তাঁকে গুলি করা হয়। সুমন গুলশান-১ এর দিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন খুনিরা সড়কের মাঝখানে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। পরে পুলিশ প্লাজার উত্তর দিকের সড়ক দিয়ে মেরুল বাড্ডার দিকে খুনিরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়।
এই খুনের ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, সুমন নিজে একটি অপরাধী চক্রের সদস্য। অপরাধ জগতে তিনি ‘শুটার’ হিসেবে পরিচিত। মহাখালী, গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও রামপুরা অঞ্চলের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণকারী কোনো গ্রুপের হাতে তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন। এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুমন হত্যার তদন্ত করা হচ্ছে। সুমন হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে এসব অঞ্চলে সক্রিয় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৮টি অপরাধী গ্রুপের তথ্য পেয়েছে তদন্তকারীরা। এর মধ্যে পাঁচটি বড় অপরাধী গ্রুপের তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে তিনটি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আরও পাঁচটি অপরাধী দল এই অঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সুমনের দৃশ্যমান ব্যবসা হচ্ছে কেবল টিভি সংযোগ ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা। তবে তিনি বাড্ডা, গুলশান ও মহাখালী অঞ্চলের অপরাধ জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী রবিন-ডালিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ভাড়ায় জমি দখলসহ নানা অপরাধে তিনি জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময় তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাড্ডা এলাকায় বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ম্যাগাজিনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাসহ অন্তত পাঁচটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রবিন-ডালিম গ্রুপের হয়ে সুমন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। চাঁদা না পেয়ে গত ১৭ জানুয়ারি বাড্ডা এলাকায় জুয়েল খন্দকার নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। পরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে জামিনে মুক্ত হন। জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি নিজেই হত্যার শিকার হলেন।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো.
আগে থেকে সক্রিয় তিন গ্রুপ, নতুন যুক্ত হয়েছে আরও পাঁচটি
পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, রবিন-ডালিম গ্রুপের হয়ে সুমন দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অপরাধে জড়িত ছিলেন। রবিন-ডালিম গ্রুপের হয়ে মহাখালী, গুলশান ও বাড্ডা অঞ্চলে চাঁদাবাজি, মাছের আড়ত দখল, কেবল টিভি সংযোগ-ইন্টারনেট ব্যবসা, জমি দখলসহ নানা অপরাধে সক্রিয় ছিলেন সুমন। এই অঞ্চলের এসব ব্যবসা ও জমি দখলসহ বিভিন্ন বিষয়ে আধিপত্য বিস্তারে রবিন-ডালিম গ্রুপ ছাড়াও জিসান গ্রুপ ও মেহেদী গ্রুপ সক্রিয়। এসব সন্ত্রাসী দলগুলোর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা দেশের বাইরে থেকে সহযোগীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। এই তিনটি দলের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা দেশের বাইরে অবস্থান করে সহযোগীদের মাধ্যমে অপরাধ করছেন। এসব দ্বন্দ্বের জেরে সুমন খুন হয়ে থাকতে পারেন।
আরও পড়ুনগুলশানে যুবককে গুলি করে হত্যায় ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’, অভিযোগ পরিবারের২ ঘণ্টা আগেগোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, জিসান থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ে। সেখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগীদের দিয়ে নানা ধরনের অপরাধ করছেন। মেহেদী গ্রুপের প্রধান মেহেদী কলিংস নামে পরিচিত। তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এক সময়। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে অপরাধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রবিন, ডালিম গ্রুপের এই দুই নেতা থাকেন মালয়েশিয়ায়। তাঁদের সহযোগীরা মাদক ব্যবসা, জমি দখল ও চাঁদাবাজিতে জড়িত।
অপরাধ জগতের খোঁজ রাখে এমন একাধিক সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই অঞ্চলের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নিতে ছোট বড় মিলিয়ে আরও ৫টি অপরাধী গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও আক্তার হোসেন আক্কু বড় দুটি অপরাধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া ছোট আরও তিনটি অপরাধী দল সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিবার যা বলছে
সুমন খুনের ঘটনার সঙ্গে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা বলছে পরিবার। এ ঘটনায় সুমনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে আজ শুক্রবার গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেল ও তাঁর সহযোগীরা এর আগে একাধিকবার সুমনের ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে মারধরও করেছিলেন। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসার দ্বন্দ্বের জের ধরেই গতকাল রাতে সুমনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী।
মৌসুমী আক্তার প্রথম আলোকে জানান, মহাখালীর টিবি গেট এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামে সুমনের ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা রয়েছে। তিনি মহাখালী এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ দিতেন। আর সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেলও মহাখালীতে কেব্ল টিভি সংযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করতেন। ২০২০ সালে করোনার সময় রুবেলের সহযোগী জামাল, সেন্টু ও আফজাল মারধর করে সুমনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ সময় তাঁরা কয়েক লাখ টাকার ইন্টারনেট লাইনের তার নিয়ে যান।
যদিও পুলিশ বলছে, সেভেন স্টার গ্রুপ বলে কিছু নেই। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বিভিন্ন অপরাধী দল ‘ফাইভ স্টার’, ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপসহ বিভিন্ন নামে পরিচিতি ছিল। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশের পর থেকে অপরাধ জগতে এসব গ্রুপের আর অস্তিত্ব নেই।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রব ন ড ল ম গ র প র দ বন দ ব র স মন স মন র এল ক য় সরক র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে আবার ইরানের হামলা, নাগরিকদের নেওয়া হলো সুরক্ষিত এলাকায়
ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ইরান নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের এক মুখপাত্রের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ হামলা ভোর পর্যন্ত চলবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি ও আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজের প্রতিবেদনেও নতুন করে ইসরায়েলে ইরানের হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। খবর-গার্ড়িয়ান
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি শহর তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত করেছে। এতে চলতি সপ্তাহের জি-৭ বৈঠকে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে যে, এই দুই আঞ্চলিক শত্রুর মধ্যে সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
নাগরিকদের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান: ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের হামলার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পর পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব। নাগরিকরা এখন দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যেতে পারে।
এর আগে রোববার সোমবার ভোরে ইসরায়েলে ইরানের হামলায় চারজন নিহত ও ৮৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। এছাড়া বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে।
ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জরুরি পরিষেবা সোমবার জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজন মহিলা এবং দুজন পুরুষ, যাদের সকলের বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।
নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে: ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলায় শুক্রবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।
তেল আবিবের কাছে মধ্য ইসরায়েলি শহর পেতাহ টিকভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সেখানে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। কংক্রিটের দেয়াল পুড়ে গেছে। জানালা উড়ে গেছে। একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশটির জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর হাইফায় হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অনুসন্ধান চলছে। যেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
নতি স্বীকারের কোনোও ইচ্ছা নেই: ইরান
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটি ইসরায়েলে কমপক্ষে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে উত্তেজনা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানের কাছে নতি স্বীকার করার কোনোও ইচ্ছা তাদের নেই। কারণ শুক্রবার তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা জোর দিয়েছে।
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’ এতে কিছুক্ষণের জন্য টেলিভিশনটির সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পরে সেটি পুনরায় সম্প্রচারে আসে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অধীনস্থ ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক (আইআরআইএনএন) জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলের হামলার পর আগুনে পুড়তে থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক সাংবাদিক। ভিডিওটিতে ওই সাংবাদিক বলেন, তিনি নিশ্চিত নন—এই হামলায় তার কতজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার বেশ কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের পরিচয় কী, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানাননি কর্মকর্তারা।
টেলিভিশনটির একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, হামলার সময় তারা ভবনটিতে কাজ করছিলেন। তখন সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। কিন্তু আকস্মিক হামলার পর কিছুক্ষণের জন্য সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর অবশ্য পুনরায় সম্প্রচার কাজ চালু করতে সক্ষম হন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।
একপর্যায়ে টেলিভিশনটির সম্প্রচার শাখার প্রধান পেমান জেবেলি রক্তমাখা একটি কাগজ নিয়ে পর্দায় হাজির হন। সেটি দেখিয়ে তিনি বলেন, তারা ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন’।
গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের হামলার আগ মুহূর্তে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পর্দায় উপস্থাপিকাকে দেখা যাচ্ছিল। হামলার সময় উপস্থাপিকাকে দ্রুত সরে যেতে দেখা যায়। অন্যদিকে, গণমাধ্যম কার্যালয়টি ইরান সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।
এই হামলার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কাৎজের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মেগাফোন ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’।
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। হামলার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তেহরানের স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার পরে ওই হামলাটি চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ইরানের স্বৈরশাসক যেখানেই থাকুন না কেন, তাকে আঘাত করা হবে।