চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দেড় শতাধিক অসহায়-দুস্থ পরিবারের মধ্যে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী দেন সুহৃদরা। একই সঙ্গে দু’জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে এককালীন ১১ হাজার ৫০০ টাকা শিক্ষাবৃত্তি এবং একজন দাখিল পরীক্ষার্থীকে লেখাপড়ার খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন শিবগঞ্জের সুহৃদরা। 

গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘের কার্যালয়ে সমকালের জেলা প্রতিনিধি একেএস রোকনের সভাপতিত্বে ঈদ উপহার দেওয়ার আয়োজন করে সুহৃদ সমাবেশ শিবগঞ্জ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

আজাহার আলী। তিনি বলেন, এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। প্রতিবছর এমন আয়োজন হলে সমাজের অসহায় ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরিবারের সদস্যরা কিছুটা হলেও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন। আগামীতেও এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে সুহৃদ সমাবেশ। 

এদিকে সত্রাজিতপুর ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মাহিমা খাতুনকে লেখাপড়ার জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার পিতা অসুস্থ হওয়ায় লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এমন পরিস্থিতিতে দাখিল পরীক্ষা পর্যন্ত তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন শিবগঞ্জের সুহৃদ উপদেষ্টা ব্যবসায়ী আলমগীর জুয়েল। এ ছাড়া একই মাদ্রাসার ফাজিল পরীক্ষার্থীকে দেড় হাজার টাকা দেওয়া হয়। 

কালুপুর গ্রামের তিন কন্যাসন্তানের বিধবা নারী জাহানারা বলেন, ‘এই ঈদে এখন পর্যন্ত কেহ খোঁজখবর নেয়নি। সাত রকমের ঈদসামগ্রী পাওয়ায় ঈদের দিন রান্না করে খাবার খেয়ে আনন্দে কাটাতে পারব।’ 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন– উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, শিবগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুর রউফ, উপজেলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি আকবর হোসেন এবং শিবগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ইউসুফ আলী, সুহৃদ সমাবেশ শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার উপদ্নো আলমগীর জুয়েল, সাইফুল ইসলাম, সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সহসভাপতি আজিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইমুম সাদাব, দপ্তর সম্পাদক আবদুল বাতেন, অর্থ সম্পাদক এসএম মহিউদ্দিন, প্রচার সম্পাদক রায়হান আলী, সদস্য ইসরাইল হোসেন ও সদস্য আতিক ইসলাম সিকো প্রমুখ।

শেষে অসহায়, রিকশাচালক ও ছিন্নমূল মানুষসহ দুস্থদের তালিকা তৈরি করে তাদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদ উপহার তুলে দেওয়া হয়। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ প ইনব বগঞ জ শ বগঞ জ উপহ র

এছাড়াও পড়ুন:

বাসাবাড়িতে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ বন্ধে আইন করার সুপারিশ

বাসাবাড়ির কাজে তথা গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।

বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না।

শ্রম সংস্কার কমিশন এ প্রসঙ্গে বলেছে, গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। একই সঙ্গে এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। এর আগপর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে ‘গৃহকর্মীর কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা–২০১৫’–এর যথাযথ বাস্তবায়ন।

নিয়োগের ক্ষেত্রে আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন বা স্থায়ী—সব ধরনের গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মঘণ্টা, বেতন, ছুটি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করে একটি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থান চুক্তি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি কার বরাবর, কোন স্থানে এবং কীভাবে দায়ের করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

গৃহশ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া গৃহকর্মীদের সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদানেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।

পারলারের কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নেওয়ার পরামর্শ

এদিকে বিউটি পারলার খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে এ খাতের কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র বা ডে কেয়ার সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে কমিশন।

অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের কাজের মান ও ঝুঁকি বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা এবং তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি কাঠামো তৈরি করতে হবে।

দেশের সব বিউটি পারলার শ্রমিকদের পেশাগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষার জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া, অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

বিউটি পারলারের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করাসহ সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিউটি পারলারের কর্মীদের বড় একটি অংশ রাতে বাসায় ফেরে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ও রাত্রিকালীন বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ