ভাতিজাকে আলিঙ্গন করতে বাদশাহ দুই হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলি
Published: 26th, March 2025 GMT
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ। গভর্নরের প্রাসাদের সামনে হাজির হয়েছেন হাজার দশেক মানুষ। সেখানে আনা হলো সৌদি রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স ফয়সাল বিন মুসাইদকে। পরনে সাদা পোশাক। হাঁটু গেড়ে বসলেন তিনি। কিছুক্ষণ বাদেই নেমে এল জল্লাদের তলোয়ার। হাজারো জনতার সামনে শিরশ্ছেদ করা হলো যুবরাজকে। তারিখটা ১৯৭৫ সালের ১৮ জুন।
এবার কয়েক মাস পেছনে ফেরা যাক। সেদিন ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ, আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগে। সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ নিজ কার্যালয়ে কুয়েতের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন প্রিন্স ফয়সাল বিন মুসাইদ। সম্পর্কে তিনি বাদশাহ ফয়সালের ভাইপো। ওই হত্যাকাণ্ডের জন্যই তাঁর শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।
বাদশাহ ফয়সাল ছিলেন সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আল সৌদের ছেলে। সৌদি আরবের তৃতীয় বাদশাহ তিনি। তাঁর মৃত্যু সে সময় দুনিয়াজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ নামীদামি সব সংবাদপত্র এ নিয়ে ফলাও করে খবর ছেপেছিল। শোক জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডসহ বিশ্বনেতারা। তবে কী কারণে চাচাকে হত্যা করতে প্রিন্স ফয়সাল অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, সে রহস্যের আর সমাধান হয়নি।
প্রিন্স ফয়সাল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য, এমন অভিযোগও উঠেছিল।যেভাবে হত্যা করা হয় ফয়সালকে
বাদশাহ ফয়সালকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তাঁর জ্বালানি তেলমন্ত্রী ছিলেন শেখ আহমেদ জাকি ইয়ামানি। তাঁর মেয়ের নাম মেই ইয়ামানি। পেশায় তিনি লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাদশাহ ফয়সালকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। এখন বয়স ৬৮। হত্যাকাণ্ডের সময় কী ঘটেছিল, তা বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায় জানিয়েছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মেই ইয়ামানি বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন তেলমন্ত্রী। তাই তিনি সেদিন বাদশাহ ফয়সালকে এ বিষয়ে আগে থেকে ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন। আর যে যুবরাজ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, তিনি বাদশাহর ভাইপো ছিলেন। ভাগ্যের পরিহাস হচ্ছে, তাঁর নামও ছিল ফয়সাল।
মেই ইয়ামানি আরও বলেন, ‘কুয়েতের তেলমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে প্রতিনিধিদল বাদশাহর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তাদের ভেতরে ঢুকে পড়েন ফয়সাল। বাদশাহ ফয়সাল তাঁর ভাইপোকে আলিঙ্গন করতে দুই হাত বাড়িয়ে দেন। তখনই তাঁর ভাইপো পকেট থেকে একটা ছোট্ট পিস্তল বের করেন। এরপর গুলি করেন বাদশাহ ফয়সালকে। মাথা লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি। আমার বাবা তখন বাদশাহ ফয়সালের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।’
এরপর বাদশাহ ফয়সালকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি মারা গেছেন। মেই ইয়ামানির বাবা শেখ ইয়ামানি বাদশাহ ফয়সালের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মন্ত্রীদের একজন। বিবিসিকে মেই ইয়ামিন বলেন, ‘আমি সেদিনের কথা কখনোই ভুলব না। সে কষ্ট আমাকে সইতে হয়েছে। আমি এখনো তা মনে করতে পারি। আমার বাবার যে বেদনা, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন বাদশাহ ফয়সালের পাশে, যিনি ছিলেন তাঁর সব কিছু—গুরু, বন্ধু, পথপ্রদর্শক। অথচ তাঁকে এত কাছে থেকে গুলি করে মারা হলো।’
বাদশাহ ফয়সালকে হত্যার খবর পরদিন স্থান পেয়েছিল নিউইয়র্ক টাইমসের প্রথম পাতায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ন স ফয়স ল মন ত র আরব র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবকে এখনও দেশের সবচেয়ে বড় তারকা মানেন তামিম
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে মুখ খুলেছেন তামিম ইকবাল। সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারকা খ্যাতি বা ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এই দুই তারকার দূরত্বের পেছনে অন্য কারণ কাজ করেছে। তবে সেই দূরত্ব ঘোচানোর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলেও আক্ষেপ করেছেন তিনি।
তামিম বলেন, ‘অনেকে বলে, কে কার চেয়ে সেরা। কার এনডোর্সমেন্ট বেশি। এগুলো কিছুই আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করেনি। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। আমি নিজেই যখন এটা বলি, তখন তারকা খ্যাতি সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না।’
তিনি জানান, বিসিবির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলে সাকিব ও তার মধ্যকার দূরত্ব কমত। ‘তারা আলাদাভাবে কথা বলেছেন, কিন্তু দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেননি’, বলেন তামিম।
তামিম আরও বলেন, অধিনায়ক থাকার সময় সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে তিনি নিজেই চেষ্টা করেছেন। যদিও সে চেষ্টা তখন সফল হয়নি, ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা এখনও তিনি দেখেন।
এমনকি নিজের অসুস্থতার সময় সাকিবের সহানুভূতিশীল আচরণের কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেন তামিম। বলেন, ‘আমার অসুস্থতার সময়ে সাকিব তার ফেসবুকে দোয়ার অনুরোধ করেছিল। তার বাবা-মা হাসপাতালে আমাকে দেখতে গিয়েছেন। আমরা দু’জনই পরিণত। সামনাসামনি হলে এবং নিজেদের মধ্যে কথা হলে সম্পর্ক উন্নত হতে পারে।’
তামিমের এই মন্তব্যেই বোঝা যায়, ব্যক্তিগত বিরোধ থাকলেও তামিম এখনও চান সাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কটা সুস্থতায় ফিরুক।