শেয়ারবাজারে নতুন আসা কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি মার্কেটে ৫০ হাজার টাকা ন্যূনতম বিনিয়োগের শর্ত তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি আইপিও আবেদনে উচ্চ সম্পদশালীদের জন্য কোটা সংরক্ষণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গঠিত টাস্কফোর্স এই প্রস্তাব করেছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গত সোমবার বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে তাদের আইপিও–সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছে। সেখানে আইপিওর আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সেই সঙ্গে বহুজাতিক, সরকারি ও বড় মূলধনি ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে সরাসরি তালিকাভুক্তি বা ডিরেক্ট লিস্টিং সুবিধা চালুরও সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করে এমন বহুজাতিক, সরকারি ও বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে সরাসরি তালিকাভুক্তি সুবিধা চালু করা যেতে পারে। তাতে বাজারে ভালো কোম্পানি আসার পথ সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটি কমিয়ে ১০ শতাংশ করারও সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে সরাসরি তালিকাভুক্তির সুবিধাটি সরকারি নির্দেশনার আলোকে দেওয়া হয়। টাস্কফোর্স সুপারিশ করেছে সরকারি নির্দেশনার বদলে এই সুবিধা বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সর্বজনীন করার।

আইপিওর ক্ষেত্রে উচ্চ সম্পদশালীদের জন্য ১৫ শতাংশ কোটা সুবিধা চালুরও সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। তারা বলছে, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিরা আইপিওতে দুই লাখ টাকার বেশি আবেদন করতে পারবেন। তাঁদের জন্য ১৫ শতাংশ কোটা থাকবে। আর ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দুই লাখ টাকার কম আবেদন করতে পারবেন। ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওতে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। এ ছাড়া স্টার্টআপ বা প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানির জন্য আলাদা বিধান চালুরও সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

বর্তমানে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ভিত্তিমূল্য নির্ধারিত হওয়ার পর তার চেয়ে ১০ শতাংশ কমে আইপিও শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টিও বাতিলের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। এই বিধান বাতিলের যুক্তি হিসেবে তারা বলছে, এ বিধান থাকার ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ও গুণমান বিবেচনা না করেই আইপিওর জন্য আবেদন করেন। কারণ, তাঁরা ধরে নেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেহেতু ১০ শতাংশ বেশি দামে শেয়ার কিনেছেন, তাই কম দামে আইপিওতে আবেদন করে লাভবান হওয়া যাবে। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতাও তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। তারা বলছে, দ্বৈত তালিকাভুক্তির বিষয়টি বাধ্যবাধকতামূলক না করে ঐচ্ছিক রাখার।

গত ৭ অক্টোবর শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো.

মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন। টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি ছিল ১৭টি। এর মধ্যে টাস্কফোর্স এখন পর্যন্ত তিনটি বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র শ কর ছ দ র জন য প রস ত ব সরক র আইপ ও

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি

শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী  আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।

যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করসুবিধা দেবে সরকার
  • বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা চেয়ারম্যানের
  • কর্মীদের নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানালেন রাশেদ মাকসুদ
  • ২১ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বিএসইসির আদেশ জারি
  • ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করল বিএসইসি
  • পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে: বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে
  • পুঁজিবাজারে আস্থা বাড়াতে ৬ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ
  • এপ্রিলজুড়ে দর পতন, আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নেই