কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, “জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় গ্রেপ্তারবরণ করতে হয়, এর আগেই আমার মৃত্যু হওয়া ভালো ছিল। কারণ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান কারও দলের নয়।” 

তিনি বলেন, “আমাদের অনেকের ভুলত্রুটি নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু স্বাধীনতার কোনো ত্রুটি নেই। জয় বাংলার কোনো ভুলত্রুটি নেই। স্বাধীনতার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ভুলত্রুটি নেই। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করলে, জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করলে এবং আমাকে অস্বীকার করলে স্বাধীনতাই বেহাত হবে।” 

শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকেলে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ইফতার মাহফিলে আমাকে সম্মানিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নিজে এসে আমাকে তার টেবিলে নিয়ে বসিয়েছিলেন। আমি এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কেউ নেই। আমি এটা বিশ্বাস করে এ পর্যন্ত এসেছি। সম্মান দেওয়া আর সম্মান নেওয়ার মালিক আল্লাহ।’

তিনি বলেন, “অনেকের সঙ্গে আমার মেলে না। এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সবার অবদান আছে, রক্ত আছে, ঘাম আছে।”

বাসাইল উপজেলা কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি রাহাত হাসান টিপুর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- কালিহাতী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম আল মনছুর, সখীপুর উপজেলা কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন সজিব, বাসাইল উপজেলা কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান।  

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী কৃষিশ্রমিক

‘১৫-২০ বছর ধইরা (ধরে), ই-খলায় (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) কাজ করি আমরা। আমরারে ৫০০ টেকা (টাকা) রোজ দেইন (দেন), আর বেটাইনতে (পুরুষরা) পাইন ৭০০ থেকে ৮০০ টেকা, দুপুরে আমরারে চিড়া-গুড় দেওয়া অয় (হয়) হেরার (পুরুষদের) লাগি ভাতের ব্যবস্থা করা অয়।’ 

কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুরের শনির হাওরপারের কালীবাড়ির সামনে একটি খলায় ধান শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকা দুই নারীশ্রমিক গীতা বর্মণ ও লক্ষ্মী রানী বর্মণ।

কেবল তাহিরপুরের ধানের খলায় নয়। হাওর এলাকাজুড়েই ধানের খলায় কাজ করা নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরিতে বৈষম্য রয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের নতুনপাড়ার বারীক মিয়ার খলায় কাজ করছিলেন, পাশের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মধ্যবয়সী নারীশ্রমিক প্রেমলতা বিশ্বাস। কখন কাজে এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, সকাল ৮টায়। কয়টায় ছাড়বেন কাজ, বললেন বিকাল ৫টায়। মজুরি কত জানতে চাইলে বললেন, দিনে ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিকরা কত পায় প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ৭০০ টাকা। আপনাকে কম দেওয়া হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রেমলতা বলেন, ‘ই-দেশও নিয়মওই এইটা, বেটাইনতে (পুরুষরা) বেশি পায়।’
মধ্যনগরের বংশিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা হাসিনা বেগম জানান, ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলার কাজ করেন তিনি। প্রতিদিনই সকালে আগে কাজে লাগেন এবং কাজ শেষে সবার পরে ফেরেন তিনি। কিন্তু মজুরি দেবার সময় তাঁকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিককে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকাও দেওয়া হয়।

দিরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বড় গৃহস্থ সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়ার ভাষ্য, রাজাপুরে নারী কৃষিশ্রমিক কমে গেছে। পাশের ইসলামপুরে এখনও বেশির ভাগ কাজ করেন নারীরা। ওখানে নারী ও পুরুষ শ্রমিক অর্ধেক-অর্ধেক। এবার পুরুষ ও মহিলা শ্রমিককে কত টাকা চুক্তিতে গ্রামের বড় কৃষকরা কাজে লাগিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, পুরুষ ২০ দিনে ১৬ মণ ধান এবং নারী শ্রমিকদের ৮ মণে করানো হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথাও তুলেছি, কিন্তু অন্যরা তাতে বিরক্ত হন, তারা বলেন, চেয়ারম্যান সাবে রেইট বাড়িয়ে সবাইকে বেকায়দায় ফেলতে চান।’ 

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের ফসল উৎপাদনে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় কৃষি শ্রমিকের চাইতে এক সময় বেশি ছিল নারী শ্রমিক। মজুরি বৈষম্যের কারণে এদের অনেকে এলাকার কাজ ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে চলে গেছে। 

সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য বললেন, কৃষিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে গ্রামীণ এলাকা ছেড়ে উপজেলা, জেলা ও রাজধানীর গার্মেন্টসমুখী হয়েছে হাজার হাজার নারীশ্রমিক।  কৃষি ছাড়াও অন্যান্য পেশায়ও মজুরি বৈষম্য থাকায় নারীর উপস্থিতির সংখ্যা কমছে।

গৌরী ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত পুরুষদের পেশা কৃষক লিখলেও নারীর ক্ষেত্রে হয় না। নারীর প্রতি এমন বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ