ময়মনসিংহের গৌরিপুরে মিজানুর রহমান মনির (২৭) নামের এক যুবক ফ্যানের সঙ্গে মাফলার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরের শিকার হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় তার ভাই আনিসুর রহমান থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (২৪ মার্চ) আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

মিজানুর রহমান মনির উপজেলার পূর্ব দাপুনিয়া এলাকার আব্দুল মালেক ফকিরের ছেলে। 

আনিসুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘১৫-১৬ মাস আগে মনিরের সঙ্গে তার স্ত্রী জেবুন্নেসা মুমুর (২৪) কলহ সৃষ্টি হয়। মূলত বিয়ের কিছুদিন পরই মোবাইল ফোনে অন্য ছেলের সঙ্গে তার স্ত্রীর কথা বলার প্রমাণ পায় মনির। বিষয়টি মুমুর বাবা, মাকে জানায় মনির। এতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। পরে বাবার বাড়ি চলে যায় মুমু। সোমবার (১৭ মার্চ) মনির তার স্ত্রীকে আনতে যায়। তখন তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। মনির বাড়ি ফিরে বিষয়টি আমাদের জানায়। ওই দিন মনির নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করে। তাতে লেখা ছিল, “আমি আত্মহত্যা করছি, তার জন্য আমার কথিত বউ মুমু দায়ী”।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুমু সোমবার সকাল ১০টার দিকে কল করে মনিরকে তাদের বাড়িতে ডেকে নেন। সেখানে গেলে তার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মনিরকে মারধর করেন। আহত অবস্থায় রাত ৯টার দিকে বাড়িতে এসে ঘরের ফ্যানে মাফলার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।’

এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে টালবাহানা করে বলে অভিযোগ করেছেন আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ওসি প্রথমে মামলা নিতে চাইলেও পরে মামলা নেয়নি। এর পর বারবার থানায় গেলেও ওসি মামলা নিচ্ছেন না।’

অভিযোগের বিষয়ে গৌরিপুর থানার ওসি মির্জা মাযহারুল আনোয়ারের ফোন নাম্বার ও হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অবশ্যই মামলা হওয়ার মতো। তবে ওসি কেন মামলা নিচ্ছেন না তা তিনিই বলতে পারবেন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ র রহম ন ন মন র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি

ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।

গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।

আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।

এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।

কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।

গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২৩৮ বছরে কী পেল আর কী পেল না ময়মনসিংহ জেলা
  • হাড়ভাঙা পরিশ্রমে পুরুষের অর্ধেকের কম বেতন নারীর
  • ময়মনসিংহে সাহিত্য আড্ডার স্থানসহ নানা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
  • ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ
  • ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ ভেঙে দিল প্রশাসন
  • যেভাবে আর্জেন্টিনার মার্তিনেজকে ময়মনসিংহে ফেরালেন শ্রাবণ
  • বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, দুই ঘণ্টা পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক
  • টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
  • টঙ্গীতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, সাউন্ড নিক্ষেপ
  • সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি