শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরের শিকার হয়ে যুবকের আত্মহত্যার অভিযোগ, মামলা নেয়নি পুলিশ
Published: 29th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহের গৌরিপুরে মিজানুর রহমান মনির (২৭) নামের এক যুবক ফ্যানের সঙ্গে মাফলার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরের শিকার হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় তার ভাই আনিসুর রহমান থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (২৪ মার্চ) আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
মিজানুর রহমান মনির উপজেলার পূর্ব দাপুনিয়া এলাকার আব্দুল মালেক ফকিরের ছেলে।
আনিসুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘১৫-১৬ মাস আগে মনিরের সঙ্গে তার স্ত্রী জেবুন্নেসা মুমুর (২৪) কলহ সৃষ্টি হয়। মূলত বিয়ের কিছুদিন পরই মোবাইল ফোনে অন্য ছেলের সঙ্গে তার স্ত্রীর কথা বলার প্রমাণ পায় মনির। বিষয়টি মুমুর বাবা, মাকে জানায় মনির। এতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। পরে বাবার বাড়ি চলে যায় মুমু। সোমবার (১৭ মার্চ) মনির তার স্ত্রীকে আনতে যায়। তখন তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। মনির বাড়ি ফিরে বিষয়টি আমাদের জানায়। ওই দিন মনির নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করে। তাতে লেখা ছিল, “আমি আত্মহত্যা করছি, তার জন্য আমার কথিত বউ মুমু দায়ী”।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুমু সোমবার সকাল ১০টার দিকে কল করে মনিরকে তাদের বাড়িতে ডেকে নেন। সেখানে গেলে তার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মনিরকে মারধর করেন। আহত অবস্থায় রাত ৯টার দিকে বাড়িতে এসে ঘরের ফ্যানে মাফলার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।’
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে টালবাহানা করে বলে অভিযোগ করেছেন আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ওসি প্রথমে মামলা নিতে চাইলেও পরে মামলা নেয়নি। এর পর বারবার থানায় গেলেও ওসি মামলা নিচ্ছেন না।’
অভিযোগের বিষয়ে গৌরিপুর থানার ওসি মির্জা মাযহারুল আনোয়ারের ফোন নাম্বার ও হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অবশ্যই মামলা হওয়ার মতো। তবে ওসি কেন মামলা নিচ্ছেন না তা তিনিই বলতে পারবেন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ র রহম ন ন মন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’