Prothomalo:
2025-08-02@01:02:11 GMT

স্যালুট প্রবাসী ভাইবোনেরা...

Published: 30th, March 2025 GMT

দেশের অর্থনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য আমাদের একটা ছোট গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপেরই একজন হুমায়ুন কবীর, যাকে আমরা আন-ট্রেডিশনাল অর্থনীতিবিদ বলি, তিনি অক্টোবর মাসে হুট করে বলে বসলেন, আমাদের সামনের রোজায় তিন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসবে। সেই সময়ে দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে, রিজার্ভের ওপর চরম চাপ, মাত্রই রেমিট্যান্স বয়কট থেকে উঠে আসছে দেশ। ফলে আমরা থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম।

বাস্তবতা হলো তখন আমাদের রেমিট্যান্স মাত্রই ২ দশমিক ৫ বিলিয়নের লক্ষ্যমাত্রা ছুলো। হ্যাঁ! ওই অবস্থা থেকে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে যদি সরকার ডলারের মূল্যমান কমিয়ে দেয় আরও, অথবা প্রণোদনা দেয়। সরকার ডলারের মূল্য খুব বেশি বদল করেনি। এখনো হুন্ডিতে ডলারের দাম বেশি। আর আমরা তিন বিলিয়নের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছি (৩১ মার্চের পুরা ডেটা এলে আমরা জানব), আর তার পুরোটাই আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের কৃতিত্ব।

দেশের বাইরে যখন যাই, প্রায় সব জায়গায় আমাদের প্রবাসী ভাইদের পাই। সেটা ইউরোপ হোক বা থাইল্যান্ডের কোনো দোকানে। বাংলায় কথা শুনলেই তাদের কী আকুতি! অনেকে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশও করতে পারে না। চুপ করে তাকিয়ে থাকে।

নেদারল্যান্ডসের বিরিয়ানি খেতে বসে যেমন বিল দিতে গিয়ে শুনি ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট, টেরও পাইনি, এক চাটগাঁইয়া ভাই ছিল সার্ভিংয়ে বা থাইল্যান্ডে আম কেনার পর ফোনে বাংলা বলছি শুনেই আমার থেকে ফল নিয়ে নতুন একঝুড়ি থেকে আম বেছে দিল এক সিলেটি ভাই। আর দামও নিজে থেকেই কমিয়ে নিলেন। এমন অনেক ভালোবাসাই পাই বিদেশে ঘুরতে বা কাজে গেলে।

প্রবাসীদের দেশপ্রেমের সব থেকে বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রেমিট্যান্স বয়কট। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসের সব থেকে কম রেমিট্যান্স এসেছিল গত বছরের জুলাই মাসে। আওয়ামী সরকার এত আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল যে দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছিল।

আরব আমিরাতে তো আন্দোলনকারী প্রবাসীদের গ্রেপ্তারও করা হলো। দীর্ঘ সাজার মুখোমুখিও হয়েছিলেন তাঁরা। আওয়ামী লীগ সরকারও সেই প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টো তাঁদের বিষোদ্‌গার করেছে। পরে তো তাদের পতন হলোই। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রচেষ্টায় কারাগারমুক্ত হলেন আরব আমিরাতের সেই ভাইয়েরা।

নতুন সরকার যখন রিজার্ভ নিয়ে চাপে, বাইরের ঋণও পাওয়া যাচ্ছে না, বিনিয়োগ পরিস্থিতিও স্থবির, তখন আবারও ত্রাতা হয়ে এলেন আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা। এ বছরের বাজেট প্রস্তাবের সময় বিশ্বব্যাংকের একটা পূর্বাভাস ছিল, ২৪ বিলিয়ন হবে এক বছরে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তো আর তত্ত্ব মেনে চলেন না। তাঁরা সাময়িক লোভ বাদ দিয়ে দেশের জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো শুরু করেন। ফলাফল এই মাইলস্টোন।

গত বছর ঠিক এ সময়েই হতাশার কথা লিখতে বসেছিলাম। এ সরকারের শুরুতেও আশা করতে পারিনি তেমন একটা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দারুণ প্রচেষ্টা এখন আশার সঞ্চার করছে। তাদের এ চেষ্টা আর ফলপ্রসূ হবে, যদি তাঁরা পাচার হওয়ার অর্থ ফেরত আনতে পারে। যদি পারে, তাহলে আসলে আমাদের আর লোনের জন্য কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। সেই সুসময়ের অপেক্ষায় সারা দেশ এখন তাকিয়ে।

এখন কথা হচ্ছে, এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কি আমাদের কাছে প্রাপ্য সম্মান পান? ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রবাসে থেকে লাশ হয়ে ফিরেছেন ১৯ হাজার ৩৮৭ জন। এক কোটির ওপর প্রবাসী আছেন, যাঁদের নেই কোনো ভোটের অধিকার। তাঁরা বেশির ভাগ সময়েই আমাদের দূতাবাসগুলো থেকে যথাযথ সেবা ও সুবিধা পান না। নিদারুণ মানবেতর জীবন যাপন করে খেয়ে না–খেয়ে তাঁরা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।

তাঁদের অনেক টাকায় আবার মধ্যস্বত্বভোগীরা খেয়ে নেন। যেমন ফ্লাইটের টিকিটের ক্ষেত্রে এত দিন আমরা সেটি দেখেছি। এ ছাড়া ন্যূনতম ট্রেনিং ছাড়া অনেকে চলে যাচ্ছেন, যাঁরা জানেনও না কীভাবে কথা বলতে হবে। এ ছাড়া অবৈধ পথে গিয়ে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের লাশও তো আসে না এ দেশে। বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা তো অহরহ হচ্ছে।

একবার এয়ার ইন্ডিয়ার এক ফ্লাইটে মিডল ইস্ট থেকে আসা এক বাংলাদেশি ভাইকে পেয়েছিলাম, যিনি ক্ষুধায় চিৎকার করে কাঁদছিলেন। তাঁর কাছে টাকা ছিল না যে কিছু কিনে খাবেন। যেখানে বাংলাদেশি শুধু ছিলাম এই অধম। সেই যাত্রায় ব্যবস্থা করে দেওয়া গেলেও অন্য সময়? দুবাইয়ে বিমানের টিকিটের বিশাল লাইন হয়।

আগেই পোশাক–আশাক দেখে বা কথাবার্তা শুনে আলাদা করে ফেলা হয় মানুষদের। যাঁরা শ্রমজীবী, তাঁদের জন্য থাকে লম্বা লাইন ও চেকিং। ঢাকা এয়ারপোর্টের খারাপ ব্যবহারের শিকার হতে হয় তো অহরহ। হ্যাঁ, তাঁরা অনেক কিছু জানেন না। কিন্তু কেউ কি তাঁদের শেখানোর বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করেছে?

পাকিস্তানের রেমিট্যান্স ২০২০ সাল পর্যন্তও বাংলাদেশ থেকে কম ছিল। তারা এখন ৩০ বিলিয়ন পার করে ফেলেছে? আমাদের কবে হবে? আগামী মাসে রেমিট্যান্স কম আসবে, সরকার কি প্রস্তুতি নিয়েছে? আমাদের রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে অবশ্যই ‘হোয়াইট কলার’ চাকরির জন্য মানুষ পাঠাতে হবে। এর জন্য করতে হবে শিক্ষা থেকে ট্রেনিং—সবকিছুর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।

দিতে হবে প্রবাসীদের নিরাপত্তা, সুবিধা। এ খাতে আমাদের ৩৫ বিলিয়ন রেমিট্যান্স আসা অসম্ভব নয়। কিন্তু চেষ্টাটা আসতে হবে সরকার থেকেই। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে, টিকিটের দাম কমিয়েছে, এয়ারপোর্টের অবস্থা আগের থেকে ভালো, বেশ কিছু ট্রেনিংয়ের পরিকল্পনা ও পলিসি বানানোর কাজও চলছে। সামনে হয়তো আরও কিছু পরিবর্তন দেখতে পাব।

এখন আসি আরেকটা সুখবরে। মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশের মোট রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দেশের মোট রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ আসেনি, অন্য কোথাও থেকে বড় কোনো ঋণও নেই। বড় বড় বিনিয়োগের কথা হচ্ছে, কিন্তু এখনো সেই অর্থে বিনিয়োগ আসেনি। এ অবস্থায়ও কিন্তু আমাদের রিজার্ভের পতন ঠেকানো গেছে। শুধু ঠেকানো নয়, এটা এখন বাড়ছে।

সরকার এলসির পেমেন্ট করে দিচ্ছে, ঋণের সুদ পরিশোধ করছে, শুধু তা–ই নয়, তারা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের যে পেমেন্ট অনেক দিন ধরে বাকি ছিল, তা পরিশোধ করে দিচ্ছে। সেই জন্যই এত রেমিট্যান্স আসার পরও আমাদের রিজার্ভের বৃদ্ধি তুলনামূলক কম। কিন্তু এই পেমেন্টগুলো পরিশোধের ফলে দেশের অর্থনীতি অনেকটা স্থিতিশীল।

গত বছর ঠিক এ সময়েই হতাশার কথা লিখতে বসেছিলাম। এ সরকারের শুরুতেও আশা করতে পারিনি তেমন একটা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দারুণ প্রচেষ্টা এখন আশার সঞ্চার করছে। তাদের এ চেষ্টা আর ফলপ্রসূ হবে, যদি তাঁরা পাচার হওয়ার অর্থ ফেরত আনতে পারে। যদি পারে, তাহলে আসলে আমাদের আর লোনের জন্য কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। সেই সুসময়ের অপেক্ষায় সারা দেশ এখন তাকিয়ে।

সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট।

ই–মেইল: [email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব স দ র আম দ র র র প রব স র জন য হওয় র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’

জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।

জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুক্রবার ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ছিল। ছবি:শিল্পকলা একাডেমি

সম্পর্কিত নিবন্ধ