শেখ হাসিনার নামে ঈদ সামগ্রী বিতরণের ভিডিও ভাইরাল, বিএনপির প্রতিবাদ
Published: 30th, March 2025 GMT
বরগুনার অজ্ঞাত একটি জায়গায় শেখ হাসিনার নামে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে ‘জয় বাংলা পরিষদ’ ব্যানারে এ ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ, জেলা যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে বিএনপি।
শনিবার সন্ধ্যায় ২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বরগুনা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদ মোল্লা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সেই ভিডিও।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বরগুনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু জাফর, গৌরীচন্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট তানভির সিদ্দিকী, সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদ মোল্লা, জাতীয় শ্রমিক লীগের বরগুনা জেলা শাখার আহ্বায়ক আবদুল হালিম মোল্লা, যুবলীগ নেতা রাজিব, বিকাশ সাহাসহ কয়েকজন নেতা ঈদ সামগ্রী বিতরণ করছেন। সেই ঈদ সামগ্রীতে লেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে উপহার। ভিডিওটিতে তৌহিদ মোল্লাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে শনিবার রাতে জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে সমাবেশ করে বিএনপি। সেখানে বক্তারা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ বরগুনায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বরগুনাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ য বল গ বরগ ন য বল গ বরগ ন ব তরণ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।