শেরপুরে পৈতৃক জমি নিয়ে ৪ ভাই-বোনের মারামারি, বড় ভাই নিহত
Published: 2nd, April 2025 GMT
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে পৈতৃক জমি নিয়ে সহোদর ভাই-বোনদের মারামারিতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম সমশ্চুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম মো. দুলাল মন্ডল (৬০)। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল কাদির মন্ডলের ছেলে। এই ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা আশকর আলী নামে এক প্রতিবেশীকে আটক করেছে।
তবে এই মৃত্যুকে রহস্যজনক বলে দাবি পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের। তবে দুলালের বোন হামিদা ও তাকলিমা গা ঢাকা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম সমশ্চুড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের জীবিত দুই ছেলে দুলাল মন্ডল ও হেলিম মন্ডল ও দুই মেয়ে হামিদা বেগম ও তাকমিনা বেগমের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে ওয়ারিশান জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে এবং আত্নীয় স্বজনরা উদ্যোগ নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন পক্ষই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি।
এর মধ্যেই হঠাৎ করে বুধবার সকাল নয়টার দিকে হেলিম মন্ডল নিজের বসত-ভিটায় আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস গাছ কাটতে যান। এসময় বড় ভাই দুলাল মন্ডল, বোন হামিদা ও তাকমিনা গিয়ে বাধা দেন। এ নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে বোনেরা মিলে ভাইয়ের গলা চেপে ধরলে ভাই দুলাল মন্ডল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে দুলালের লাশ বাড়ি নিয়ে এলে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যসহ উপস্থিত হন নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা। দীর্ঘ সময় দুলালের লাশ উঠানে থাকলেও ময়না তদন্তের জন্য পুলিশকে বাধা দেন দুলালের পুত্র ও কন্যারা।
এক পর্যায়ে ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়। পরে দুলালের সন্তানদের ভালো করে বুঝিয়ে দীর্ঘ সময় পর বিকেলে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এসময় দুলালের সন্তানরা দাবি করেন তাদের পিতা হার্টের রোগী ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, “নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদনের পর ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/তারিকুল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তদন ত র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
ঝিনাইদহে কৃষকের হাত-পা ও গলা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার
নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। স্বজনরা জানান, সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল।
আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুলালী বেগম ছাড়াও যারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে।’’
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সালাম আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে আবার তাকে পাশের গোয়ালঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি হয়ে গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করে।’’
আটক দুলালী বেগম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।’’
নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যে জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঢাকা/মাসুম/বকুল