সিন্ডিকেটে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় গাড়ি থেকে নামিয়ে অপদস্ত
Published: 5th, April 2025 GMT
ঈদের পাঁচ দিন পরও শেরপুর থেকে ময়মনসিংহের ভাড়া ১৫০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। যাত্রীরা ভাড়া বেশি দিয়েও সেকথা বলতে পারছেন না ভয়ে। কারণ একটি দালাল চক্র অটোরিকশা স্ট্যান্ডে অতিরিক্ত ভাড়ার প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে অপমান-অপদস্ত করছেন। এই চিত্র শুধু শেরপুর সদর থানার সামনের ময়মনসিংহগামী স্ট্যান্ডেই নয়; জেলার সব সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে একই চিত্র।
জানা গেছে, স্বজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শেরপুরের ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী ও জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও সানন্দাবাড়ির হাজারো মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন। ঈদের আগে এবং পরে প্রশাসন ভাড়া নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়, জরিমানাসহ শাস্তিও দেয়। এতে ভাড়া কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে কর্মস্থলমুখী যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার সিন্ডিকেট ও চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শুরু করে। খবর পেয়ে অভিযান চলালেও এক স্ট্যান্ডের খবর অন্য স্ট্যান্ডে ফোনে জানিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। ফলে যে স্ট্যান্ডে আধাঘণ্টা বা ১ ঘণ্টার অভিযান চলে সেখানে ভাড়া সহনীয় হলেও অপরপ্রান্তে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলতে থাকে। আবার তদারকি দলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর ফের শুরু হয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
শেরপুর থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার। এখানে ঈদের আগে ভাড়া ছিল ১৫০ টাকা। গত শুক্রবার থেকে একই দূরত্বে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীর চাপ বেশি থাকার সুযোগে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীর কাছ থেকেও হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিন চাকার এই যানে কর্মস্থলে ফিরছেন যাত্রীরা।
শনিবার সকালে কথা হয় পোশাক শ্রমিক মিনা বেগমের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আরও দুই সহকর্মী গাজীপুর যাবেন। রোববার (আজ) সকালে তাদের কর্মস্থলে হাজির হতে হবে। ঈদের ছুটিতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা দিয়ে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরে আসেন। বাসের টিকিট না পেয়ে ঈদের পরও একইভাবে ময়মনসিংহে যাচ্ছেন। সেখান থেকে বাস অথবা অন্য কোনো যানবাহনে
যাবেন কর্মস্থলে। মিনা বেগম বলেন, তাদের
কাছ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হবে। আসার সময় ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছেন। ঈদের
পাঁচ দিন পরও ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
আকমল হোসেন চাকরি করেন একটি বেসরকারি ফার্মে। তিনি যাবেন ভালুকায়। তাঁর ভাষ্য, আসার সময় ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে ১৫০ টাকা। ফেরার সময় ৩০০ টাকা চাচ্ছে। কেন ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তাঁকে এক চালক ও কিছু লোক গালাগাল করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে। লজ্জায় কাউকে বলতে পারছেন না।
অটোরিকশা চালক আশরাফ আলীর দাবি, কয়েকদিন ধরে লাইন দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে গ্যাস নিতে হচ্ছে। সেখানে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। আবার গ্যাসের থেকে হাওয়া বেশি দেয়। তাই ভাড়া বেশি না নিলে তাদের কিছুই থাকে না।
শেরপুর শহরের খোয়ারপাড় মোড়ে কথা হয় রৌমারী থেকে আসা যাত্রী আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে রৌমারী থেকে ২৫০ টাকায় শেরপুর আসতাম। আজ (শনিবার) ৩০০ টাকা ভাড়া নিয়েছে।’ একই এলাকা থেকে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়িগামী অটোরিকশার চালকরা ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেশি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। একই অবস্থা শহরের থানা মোড়ে শেরপুর জামালপুর ও নকলা, চন্দ্রকোনা স্ট্যান্ডে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমানের ভাষ্য– বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে নজরদারি ও অভিযান চলছে। বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় জরিমানা করা হচ্ছে। চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছেন না তারা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ১৫০ ট ক ৩০০ ট ক স এনজ
এছাড়াও পড়ুন:
ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ছেলের মুক্তি চেয়ে কাঁদলেন মা
জমিসংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় সালিশ ডেকে আল-আমিন (২৮) নামে এক যুবককে আটকের পর নগরীর কেওয়াটখালীতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজনৈতিক মামলায় জেলে পাঠিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর মা আনোয়ারা বেগম।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়ে অঝোরে কাঁদেন তিনি।
আল-আমিন নগরীর বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগম দম্পতির সন্তান। ২০২১ সাল থেকে জমি নিয়ে আনোয়ারা বেগম ও প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের উপ-প্রধান প্রকৌশলী। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে আনোয়ারা বেগমের অভিযোগ।
আনোয়ারা বেগম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২১ সালে বলাশপুরে স্বামীর পেনশনের টাকায় তিনি জমি কেনেন। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক জমিতে প্রাচীর দেন মনিরুজ্জামান। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা দেন মনিরুজ্জামান।
আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘‘আমার ছেলে আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মনিরুজ্জামান কোতোয়ালি মডেল থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম থানায় উভয় পক্ষকে ডাকেন।’’
‘‘শনিবার (২৬ জুলাই) রাত আটটায় থানার মধ্যেই দরবার শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। দরবারে যখন জমির কাগজপত্র আমাদেরগুলো ঠিক প্রমাণিত হয় তখন ওসি আল-আমিনকে তার রুমে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পিছন পিছন আমি গিয়ে প্রতিবাদ করলে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন তিনি। এরপর আল-আমিনকে লকাপে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেন। ছেলে রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাকে জেল পাঠানো হয়েছে।’’ বলে অভিযোগ করেন আনোয়ারা বেগম।
আনোয়ারা বেগম এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের মানুষ করেছি। আল-আমিন ক্রোকারিজের ব্যবসা করে পুরো সংসার চালায়। রাজনীতির সাথে কোনোভাবেই সে জড়িত নয়। অথচ ওসি তাকে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। মনিরুজ্জামানের টাকা ও ক্ষমতার কাছে আমি হেরে গেছি। এই দেশে কোনো বিচার নাই। আমার ছেলে যদি মুক্তি না পায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সে বিপথে গেলে পুলিশ, সমাজ এবং রাষ্ট্র এ জন্য দায়ী থাকবে।’’
‘‘ওসি সালিশের এক পর্যায়ে প্রভাবিত হয়ে আল-আমিনকে সালিশ থেকে আটক করে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। এ সময় হাতে-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি,’’ উল্লেখ করে আনোয়ারা বেগম কড়জোরে ঘটনার সঠিক বিচারের পাশাপাশি আল-আমিনের মুক্তি দাবি করেন।
এ দিকে আল-আমিনের বিরুদ্ধে মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫মিনিটে পুলিশের টহল টিম আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড়ে একদল সন্ত্রাসী রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাংচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা করছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরো, ২৫টি কাচের টুকরো জব্দ করে। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আল-আমিন যুবলীগ করে। কারণ যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে তার ছবি রয়েছে।’’
আল-আমিনকে থানায় সালিশ ডেকে পরে আটক করা হয়েছে কিন্তু মামলায় দেখানো হয়েছে তাকে কেওয়াটখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘‘এ
বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবে।’’
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘‘আল-আমিনের মা ছেলের মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। আমি শুনেছি। তার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
মিলন//