ঈদের পাঁচ দিন পরও শেরপুর থেকে ময়মনসিংহের ভাড়া ১৫০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। যাত্রীরা ভাড়া বেশি দিয়েও সেকথা বলতে পারছেন না ভয়ে। কারণ একটি দালাল চক্র অটোরিকশা স্ট্যান্ডে অতিরিক্ত ভাড়ার প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে অপমান-অপদস্ত করছেন। এই চিত্র শুধু শেরপুর সদর থানার সামনের ময়মনসিংহগামী স্ট্যান্ডেই নয়; জেলার সব সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে একই চিত্র।
জানা গেছে, স্বজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শেরপুরের ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী ও জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও সানন্দাবাড়ির হাজারো মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন। ঈদের আগে এবং পরে প্রশাসন ভাড়া নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়, জরিমানাসহ শাস্তিও দেয়। এতে ভাড়া কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে কর্মস্থলমুখী যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার সিন্ডিকেট ও চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শুরু করে। খবর পেয়ে অভিযান চলালেও এক স্ট্যান্ডের খবর অন্য স্ট্যান্ডে ফোনে জানিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। ফলে যে স্ট্যান্ডে আধাঘণ্টা বা ১ ঘণ্টার অভিযান চলে সেখানে ভাড়া সহনীয় হলেও অপরপ্রান্তে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলতে থাকে। আবার তদারকি দলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর ফের শুরু হয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
শেরপুর থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার। এখানে ঈদের আগে ভাড়া ছিল ১৫০ টাকা। গত শুক্রবার থেকে একই দূরত্বে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীর চাপ বেশি থাকার সুযোগে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীর কাছ থেকেও হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিন চাকার এই যানে কর্মস্থলে ফিরছেন যাত্রীরা।
শনিবার সকালে কথা হয় পোশাক শ্রমিক মিনা বেগমের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আরও দুই সহকর্মী গাজীপুর যাবেন। রোববার (আজ) সকালে তাদের কর্মস্থলে হাজির হতে হবে। ঈদের ছুটিতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা দিয়ে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরে আসেন। বাসের টিকিট না পেয়ে ঈদের পরও একইভাবে ময়মনসিংহে যাচ্ছেন। সেখান থেকে বাস অথবা অন্য কোনো যানবাহনে 
যাবেন কর্মস্থলে। মিনা বেগম বলেন, তাদের 
কাছ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হবে। আসার সময় ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছেন। ঈদের 
পাঁচ দিন পরও ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
আকমল হোসেন চাকরি করেন একটি বেসরকারি ফার্মে। তিনি যাবেন ভালুকায়। তাঁর ভাষ্য, আসার সময় ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে ১৫০ টাকা। ফেরার সময় ৩০০ টাকা চাচ্ছে। কেন ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তাঁকে এক চালক ও কিছু লোক গালাগাল করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে। লজ্জায় কাউকে বলতে পারছেন না।
অটোরিকশা চালক আশরাফ আলীর দাবি, কয়েকদিন ধরে লাইন দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে গ্যাস নিতে হচ্ছে। সেখানে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। আবার গ্যাসের থেকে হাওয়া বেশি দেয়। তাই ভাড়া বেশি না নিলে তাদের কিছুই থাকে না।
শেরপুর শহরের খোয়ারপাড় মোড়ে কথা হয় রৌমারী থেকে আসা যাত্রী আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে রৌমারী থেকে ২৫০ টাকায় শেরপুর আসতাম। আজ (শনিবার) ৩০০ টাকা ভাড়া নিয়েছে।’ একই এলাকা থেকে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়িগামী অটোরিকশার চালকরা ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেশি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। একই অবস্থা শহরের থানা মোড়ে শেরপুর জামালপুর ও নকলা, চন্দ্রকোনা স্ট্যান্ডে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমানের ভাষ্য– বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে নজরদারি ও অভিযান চলছে। বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় জরিমানা করা হচ্ছে। চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছেন না তারা।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ১৫০ ট ক ৩০০ ট ক স এনজ

এছাড়াও পড়ুন:

‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।

শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।

সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।

সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’

সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • ‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
  • ‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
  • কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর ময়মনসিংহে স্বস্তির বৃষ্টি
  • ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
  • নান্দাইলে বাস-ইজিবাইক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
  • তাপপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন, এর পর বৃষ্টি
  • গামছা পরে ঘুমিয়ে থাকার কারণ জানালেন সমু চৌধুরী
  • দিনাজপুর সীমান্তে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ