তিন বছর কারাগারে আটকে রেখে ফিলিস্তিনি বন্দী মুসাব কাতাবিকে গত বৃহস্পতিবার মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে শেষ মুহূর্তেও তাঁর ওপর নির্যাতন চালান দেশটির কারারক্ষীরা।

মুক্তি দেওয়ার আগে মুসাব কাতাবির মাথা আবর্জনার বাক্সে ঢুকিয়ে দেন ইসরায়েলি কারারক্ষীরা। এ ছাড়া তাঁর মাথায় ইহুদিদের প্রতীক ‘স্টার অব ডেভিড’ এঁকে দেওয়া হয়।

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরের নিজ শহর কালকিলিয়ায় মিডল ইস্ট আইকে একটি সাক্ষাৎকার দেন কাতাবি।

সাক্ষাৎকারে কাতাবি বলেছেন, মাত্র ১৩ বছর বয়সে গ্রেপ্তার হওয়ার ফিলিস্তিনি কিশোর আহমেদ মানাশ্রার পাশাপাশি তাঁকেও মুক্তি দেয় ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ। মানাশ্রাকে সাড়ে ৯ বছর পর মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁর মতো মানাশ্রাকেও মুক্তি দেওয়ার আগে নির্যাতন করা হয়েছে।

কাতাবি বলেন, ‘(ইসরায়েলি) কারারক্ষীরা বৃহস্পতিবার সকালে আমাদের একত্র করেন ও কারাগারের বাইরে র‍্যামন নামক স্থানে নিয়ে যান। তাঁরা আমাদের ছবি তোলেন ও কাগজপত্রে সই নেন।’

এ ঘটনার আগেও ফিলিস্তিনি বন্দীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অংশ হিসেবে ‘স্টার অব ডেভিড’ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। ইহুদিদের এ ধর্মীয় প্রতীক ইসরায়েলি পতাকায় আঁকা আছে।

‘মুক্তির মুহূর্তে তাঁরা (কারারক্ষীরা) ময়লা ফেলার একটি বাক্স নিয়ে আসেন, আমাদের মাথা তাতে ঢুকিয়ে দেন ও মারধর করেন। পরে একজন আমার মাথার চুল চেঁছে ‘‘স্টার অব ডেভিড’’ প্রতীক এঁকে দেন’, বলেন কাতাবি।

এ ঘটনার আগেও ফিলিস্তিনি বন্দীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অংশ হিসেবে ‘স্টার অব ডেভিড’ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। ইহুদিদের এ ধর্মীয় প্রতীক ইসরায়েলি পতাকায় আঁকা আছে।

২০২৩ সালের আগস্টে পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনির গালে জোর করে ‘স্টার অব ডেভিড’ সেঁটে দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী।

ওই বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলা ও এর জের ধরে গাজায় দেশটির তাণ্ডব শুরুর পর ফিলিস্তিনি বন্দীদের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। ইতিমধ্যে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ফিলিস্তিনি বন্দী ইস্যুতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।

‘আমাদের প্রচণ্ড মারধর করা হতো। তাঁরা (কারারক্ষীরা) আমাদের ভীষণভাবে অপমান করতেন, আমাদের শরীর পা দিয়ে মাড়াতেন, কুকুর দিয়ে ভয় দেখাতেন। এগুলো সহ্য করা ছিল খুব কঠিন।’—মুসাব কাতাবি, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দী

ইসরায়েলের কারাগারে থাকা অবস্থায় বেশ কিছু ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। অনেককে মারধর, নানা ধরনের নির্যাতন ও তাঁদের ওপর যৌন সহিংসতা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

গত জুলাইয়ে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বেন গিভির গর্ব করে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনি বন্দীদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পেরেছেন তাঁরা।

ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে কাতাবি বলেছেন, তাঁদের অবস্থা বিপজ্জ্বনকের চেয়ে খারাপ।

মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি কাতাবিকে ইসরায়েলের নাফহা কারাগারে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, সেখানে তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য বন্দীদের প্রতিদিন মারধর করেছেন কারারক্ষীরা।

কাতাবি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রচণ্ড মারধর করা হতো। তাঁরা আমাদের ভীষণভাবে অপমান করতেন, আমাদের শরীর পা দিয়ে মাড়াতেন, কুকুর দিয়ে ভয় দেখাতেন। এগুলো সহ্য করা ছিল খুব কঠিন।’ বন্দী অবস্থায় না খাইয়ে রাখা, পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী না দেওয়া ও অসুখ–বিসুখে চিকিৎসা না দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে কাতাবি বলেছেন, ‘তাঁদের অবস্থা বিপজ্জ্বনকের চেয়েও খারাপ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ক র গ র স ট র অব ড ভ ড বন দ দ র ব যবহ র আম দ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ