শিশুদের হৃদ্রোগ বা জন্মগত হৃদ্রোগকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ। সাধারণ মানুষের কাছে এটি ‘হার্টের ছিদ্র’ নামে বেশি পরিচিত। বিশ্বে প্রতি হাজার নবজাতকের ৮–১২টি এ রোগ নিয়ে জন্মায়।
জন্মগত হৃদ্রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে এতে বংশগত প্রভাব রয়েছে। পরিবারে কারও জন্মগত হৃদ্রোগ থাকলে শিশুর ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস, রুবেলা ভাইরাস সংক্রমণ, কিছু ওষুধ সেবন, ধূমপান বা মাদক সেবনও শিশুর হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
একটি সুস্থ হৃৎপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ বা চেম্বার থাকে। এগুলো হলো ডান অলিন্দ ও নিলয়, বাঁ অলিন্দ ও নিলয়। হৃৎপিণ্ডের ডান পাশ দূষিত রক্ত ফুসফুসে পাঠায়, যেখানে রক্ত পরিশোধিত হয়ে বাঁ পাশ দিয়ে সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। জন্মগত হৃদ্রোগে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক গঠন ও কাজ বিঘ্নিত হয়।
প্রকারভেদ
জন্মগত হৃদ্রোগকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়—
১.
২. এসায়ানোটিক হার্ট ডিজিজ
সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজে কার্বন ডাই–অক্সাইডযুক্ত দূষিত রক্ত হৃৎপিণ্ডের ছিদ্র দিয়ে বিশুদ্ধ রক্তে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রোগীর ত্বক, ঠোঁট, নখ ও জিহ্বা নীলচে হয়ে যায়। এসব শিশু বুকের দুধ খাওয়ার সময় বা কান্নাকাটি করলে নীলাভ ভাব বৃদ্ধি পায়।
এসায়ানোটিক হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের রং স্বাভাবিক থাকে। কারণ, বিশুদ্ধ রক্ত দূষিত রক্তে মিশে ফুসফুসে ফিরে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এসায়ানোটিক হৃদ্রোগ সায়ানোটিকে রূপ নিতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাকে জটিল করে তোলে।
লক্ষণ
হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক দ্রুত বা ধীর হওয়া।
দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস।
ঘন ঘন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (সর্দি-কাশি লেগে থাকা)।
বয়স অনুযায়ী ওজন না বাড়া।
অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি বা খেলায় অনীহা।
বুকের দুধ খেতে কষ্ট হওয়া বা খাওয়ার সময় ঘামা।
ঠোঁট, জিহ্বা বা নখ নীল হয়ে যাওয়া।
কান্নার সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
রোগনির্ণয়
বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক মানের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা–সুবিধা রয়েছে। জন্মগত হৃদ্রোগ শনাক্ত করতে সাধারণত বুকের এক্স-রে, ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়। এই তিন পরীক্ষার মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় সম্ভব। তবে ইকোকার্ডিওগ্রাফি একজন অভিজ্ঞ জন্মগত হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত।
চিকিৎসা কী
কিছু হৃদ্রোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় অস্ত্রোপচারের। অস্ত্রোপচার ছাড়াও ক্যাথেটারভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন সেপ্টাল অক্লুডার ব্যবহার করে ছিদ্র বন্ধ করা সম্ভব।
জন্মগত হৃদ্রোগ জটিল শারীরিক সমস্যা হলেও সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসায় অধিকাংশ শিশুই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. সিয়াম আল ইসলাম, জন্মগত হৃদ্রোগবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরা শুরু, চাঁদপুরের মাছঘাটে কর্মব্যস্ততা
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার নদীর অভয়াশ্রমে দুই মাস পর ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা শুরু হয়েছে। সরকারি পর্যায়ের আদেশে জাটকা রক্ষা ও অন্যান্য মাছ বৃদ্ধিতে গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০ দিন শিকার বন্ধের পর বুধবার মধ্যরাত থেকেই জেলেরা নদীতে শিকারে নেমেছে। কর্মব্যস্ততা ফিরেছে চাঁদপুরের মাছঘাটে। তবে প্রথম দিনে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলেরা।
মাছ আহরণ কম হওয়ায় প্রথম দিনে আড়তে তেমন ব্যস্ততা চোখে পড়েনি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১০ মণ ইলিশও আসেনি মাছের বড় ঘাট বড় স্টেশনে। তাছাড়া বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, সন্দ্বীপসহ দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ আজ দুপুর পর্যন্ত পৌঁছেনি চাঁদপুর মাছ ঘাটে। নদী তীরে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশের কার্গো ও নৌকাও আসেনি। ইলিশের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইলিশের পাইকারি বাজার চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পর বেচাকেনা কিছুটা শুরু হওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে।
পুরান বাজারের হরিসভা অঞ্চলের জেলে বাবুল, সেলিম, মনির হোসেন বলেন, ভোরে মাছ ধরতে নেমেছি। নদীতে তেমন মাছ নাই। ইলিশ না পেলেও পোয়া, পাঙাশ, চিংড়িসহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। মাছ বিক্রির জন্য বড়স্টেশন মাছঘাটে এসেছি। তবে এই মাছে তেলের টাকাও উঠছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, আজকের আড়তে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজারে। এক কেজির কম ওজনের ২ হাজার ৫০০ টাকায়। সরবরাহ না বাড়লে দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা।
এদিকে শহরের সবচেয়ে বড় বাজার পালবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানের খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে ইলিশই আনেননি। ‘কারণ’ হিসাবে কিরন নামে একজন ব্যবসায়ী বললেন, ‘তিন হাজার টাকার কেজিতে ইলিশ কে কিনবো বলেন? কয়জনে কিনবো? আমরা বেঁচমো কতো?’
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, এখন নদীতে পানি কম। স্রোত ও বৃষ্টিও কম। ফলে এ সময়ে ইলিশ কম পাওয়া যায়।
চাঁদপুরের ইলিশ ক্রেতা মোহন মাছঘাটে এসেছেন ইলিশ কিনতে। দাম শুনেই ফিরে গেলেন। তিনি সমকালকে বললেন, ‘আমাদের চাঁদপুরের মানুষের ইলিশ খাওয়া বড় কঠিন হয়ে পড়ছে। আজকেও যেমন আবার ভরা মৌসুমেও দেখবো দাম আর কমবে না!’