Prothomalo:
2025-06-16@05:54:04 GMT

শিশুদের জন্মগত হৃদ্‌রোগ

Published: 13th, April 2025 GMT

শিশুদের হৃদ্‌রোগ বা জন্মগত হৃদ্‌রোগকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ। সাধারণ মানুষের কাছে এটি ‘হার্টের ছিদ্র’ নামে বেশি পরিচিত। বিশ্বে প্রতি হাজার নবজাতকের ৮–১২টি এ রোগ নিয়ে জন্মায়।

জন্মগত হৃদ্‌রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে এতে বংশগত প্রভাব রয়েছে। পরিবারে কারও জন্মগত হৃদ্‌রোগ থাকলে শিশুর ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস, রুবেলা ভাইরাস সংক্রমণ, কিছু ওষুধ সেবন, ধূমপান বা মাদক সেবনও শিশুর হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

একটি সুস্থ হৃৎপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ বা চেম্বার থাকে। এগুলো হলো ডান অলিন্দ ও নিলয়, বাঁ অলিন্দ ও নিলয়। হৃৎপিণ্ডের ডান পাশ দূষিত রক্ত ফুসফুসে পাঠায়, যেখানে রক্ত পরিশোধিত হয়ে বাঁ পাশ দিয়ে সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। জন্মগত হৃদ্‌রোগে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক গঠন ও কাজ বিঘ্নিত হয়।

প্রকারভেদ

জন্মগত হৃদ্‌রোগকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়—

১.

সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজ

২. এসায়ানোটিক হার্ট ডিজিজ

সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজে কার্বন ডাই–অক্সাইডযুক্ত দূষিত রক্ত হৃৎপিণ্ডের ছিদ্র দিয়ে বিশুদ্ধ রক্তে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রোগীর ত্বক, ঠোঁট, নখ ও জিহ্বা নীলচে হয়ে যায়। এসব শিশু বুকের দুধ খাওয়ার সময় বা কান্নাকাটি করলে নীলাভ ভাব বৃদ্ধি পায়।

এসায়ানোটিক হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের রং স্বাভাবিক থাকে। কারণ, বিশুদ্ধ রক্ত দূষিত রক্তে মিশে ফুসফুসে ফিরে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এসায়ানোটিক হৃদ্‌রোগ সায়ানোটিকে রূপ নিতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাকে জটিল করে তোলে।

লক্ষণ

হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক দ্রুত বা ধীর হওয়া।

দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস।

ঘন ঘন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (সর্দি-কাশি লেগে থাকা)।

বয়স অনুযায়ী ওজন না বাড়া।

অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি বা খেলায় অনীহা।

বুকের দুধ খেতে কষ্ট হওয়া বা খাওয়ার সময় ঘামা।

ঠোঁট, জিহ্বা বা নখ নীল হয়ে যাওয়া।

কান্নার সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

রোগনির্ণয়

বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক মানের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা–সুবিধা রয়েছে। জন্মগত হৃদ্‌রোগ শনাক্ত করতে সাধারণত বুকের এক্স-রে, ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়। এই তিন পরীক্ষার মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় সম্ভব। তবে ইকোকার্ডিওগ্রাফি একজন অভিজ্ঞ জন্মগত হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত।

চিকিৎসা কী

কিছু হৃদ্‌রোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় অস্ত্রোপচারের। অস্ত্রোপচার ছাড়াও ক্যাথেটারভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন সেপ্টাল অক্লুডার ব্যবহার করে ছিদ্র বন্ধ করা সম্ভব।

জন্মগত হৃদ্‌রোগ জটিল শারীরিক সমস্যা হলেও সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসায় অধিকাংশ শিশুই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. সিয়াম আল ইসলাম, জন্মগত হৃদ্‌রোগবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ