রিজার্ভ চুরি তদন্তে সীমাহীন গাফিলতি হয়েছে: আইন উপদেষ্টা
Published: 13th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংকের আলোচিত রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে তৎকালীন সরকারের সময়ে সীমাহীন গাফিলতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি এখন এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটি এ ঘটনায় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আজ রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ কথাগুলো বলেন। এর আগে আজ পর্যালোচনা কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম বৈঠকে বসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় গত মাসে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।
এই কমিটির কাজের পরিধি হিসেবে রয়েছে, কমিটি ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি ও এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে। তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে তাদের সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়। কিন্তু এখনো ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার ৩৯ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্তআসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুই বিলিয়ন ডলার চুরি বা লুট করার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত পেরেছে ৮৮ মিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন ডলার এখনো উদ্ধার করা যায়নি। বাকি টাকা উদ্ধার হয়েছে। পর্যালোচনা কমিটির প্রধান হিসেবে তাঁর কাছে মনে হয়েছে, এটি আসলে পুরো বাংলাদেশ লুট করার একটি পরিকল্পনা ছিল। দুই বিলিয়ন ডলার যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চলে যেত আজকে দুর্ভিক্ষ বা প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থায় পড়তে হতো।
আরও পড়ুনরিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে কমিটি১২ মার্চ ২০২৫গাফিলতির প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, সিআইডিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যাঁরা জড়িত আছেন, তাঁদের নাম অভিযোগপত্রে না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনকে ভালো উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, সেই প্রতিবেদনের পর্যালোচনাও শুনেছেন। কমিটি নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা করেন আইন উপদেষ্টা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জ র ভ চ র র ঘটন আইন উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট কম ট র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।