তরুণের কাছে পুলিশ-সেনাবাহিনী পরিচয়ে চাঁদা দাবি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ গ্রেপ্তার ৫
Published: 15th, April 2025 GMT
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় মাদকসহ এক তরুণকে আটকে রেখে পুলিশ-সেনাবাহিনী পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার বাটইয়া ও নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন (২৫), একই ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর মো.
পুলিশ জানায়, আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আসামিদের নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে অভিযুক্তদের জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
কবিরহাট থানা ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীনন্দী গ্রামের সফি উল্যাহর ছেলে মো. তাফসীরুল ইসলাম ওরফে রাফসানকে (১৯) মাদকদ্রব্যসহ আটক করেন ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুনসহ স্থানীয় একদল যুবক। তাঁরা তাফসীরুলকে পুলিশে না দিয়ে বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আটকে রাখেন। এই সময়ে মামুন ও তাঁর সহযোগীরা তাফসীরুলের বাবা সিএনজি অটোরিকশাচালক সফি উল্যাহর কাছে ডিবি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে মারধরের হুমকি দেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা তাঁকে দাবি করা টাকা বাটইয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণারটেক মসজিদের সামনে রাখার জন্য বলেন। তখন তিনি (বাদী) তাঁর অসহায়ত্বের কথা জানান। একপর্যায়ে তিনি ৭০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে জানান। তখন তাঁরা ওই টাকা স্থানীয় ফরায়েজী বাজারের উত্তর মাথায় স্কুলের পশ্চিম পাশে রাখার জন্য বলেন। পরে তিনি ওই স্থানে টাকা রেখেছেন বলে তাঁদের জানান। অভিযুক্তরা তখন তাঁকে বলেন, ‘তোমার সঙ্গে প্রশাসনের লোক আছে।’ এরপর তাঁর ছেলেকে ডিবি পুলিশকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।
বাদী উল্লেখ করেন, এতে তাঁর সন্দেহ হয়। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল করেন। একই সঙ্গে তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ ও সেনাবাহিনী মুঠোফোনের কল রেকর্ড শুনে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে। পরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা মো. সফি উল্যাহ (৬০) বাদী হয়ে কবিরহাট থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় আরও তিন-চারজনকে।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মাদকসহ এক তরুণকে আটক করেন আবদুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েক যুবক। তাঁরা তাঁকে পুলিশে সোপর্দ না করে উল্টো পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই তরুণকে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে তরুণের বাবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে মাদকসহ আটক তরুণের বিরুদ্ধেও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালীর আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্র ও মাদকসহ সাবেক এমপির ছেলে আটক
সাতক্ষীরায় সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রিফাত আমিনের ছেলে সাফায়েত সরোয়ার রুমনকে (৪৮) আটক করেছে সেনাবাহিনী। আজ রোববার দুপুর ১টার দিকে সাতক্ষীরা সদরের রাজ্জাক পার্ক সংলগ্ন বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার হেফাজতে থাকা একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিন শতাধিক ইয়াবা, ব্যথানাশক ইনজেকশন, মদ ও মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।
রুমন সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। রিফাত আমিন ছিলেন জেলা মহিলা লীগের সাবেক সভানেত্রী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মনোনীত হন। মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনাসহ অন্যের জমি, চিংড়িঘের ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ রয়েছে রুমনের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানান, সেনাবাহিনীর অভিযানকালে রুমন দোতলা থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে নিচে অবস্থানরত সেনাসদস্যরা তাকে দ্রুত ধরে ফেলেন।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া মেজর ইফতেখার আহমেদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মদসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।