তিন বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দেশের বাজারে এই তেল বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক উচ্চ দামে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং যথাসময়ে ব্যাংকের সহায়তা না পাওয়ায় বিশ্ব বাজারে দর কমার সুফল পাচ্ছেন না দেশের ভোক্তারা। 

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ–ক্যাব আমদানি খরচের সঙ্গে যাবতীয় ব্যয় পর্যালোচনা করে বলছে, এটি ব্যবসায়ীদের অজুহাত মাত্র। তাদের হিসাবে সর্বশেষ বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৪ টাকা বাড়ানোর পর ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে লিটারে অন্তত ১২ টাকা।

দেশে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে মাসে এ চাহিদা দাঁড়ায় দেড় লাখ টন।

বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনের (পিংক শিট) তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২ সাল থেকে সয়াবিন, পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজের দাম নিম্নমুখী। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৬৬৭ ডলার। ২০২৩ সালে সে দর নেমে আসে ১ হাজার ১১৯ ডলারে। ২০২৪ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২২ ডলারে। 
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেও সয়াবিনের দাম এর কাছাকাছি। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সয়াবিনের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৪০ ডলার। এপ্রিল মাসে দাম আরও কমতে শুরু করেছে। 
একই চিত্র পাম অয়েলের ক্ষেত্রে। ২০২২ সালে বিশ্ব বাজারে পাম অয়েলের গড় দাম ছিল ১ হাজার ২৭৬ ডলার। ২০২৩ সালে ছিল মাত্র ৮৮৬ ডলার। ২০২৪ সালে দাঁড়ায় ৯৬৩ ডলার। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পাম অয়েলের গড় দাম ১ হাজার ৬৮ ডলার। এপ্রিল মাসে আবার কমতে শুরু করেছে এর দাম। 

সয়াবিন বীজের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। ২০২২ সালে সয়াবিন বীজের গড় দাম ছিল ৬৭৫ ডলার। পরের বছর আরও কমে তা দাঁড়ায় ৫৯৮ ডলারে। ২০২৪ সালে আরও কমে বিক্রি হয়েছে ৪৬২ ডলারে। চলতি বছরের গত তিন মাসে আরও কমেছে সয়াবিন বীজের দাম। এই তিন মাসে গড় দাম ছিল ৪০৮ ডলার। সয়াবিন বীজ মাড়িয়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভোজ্যতেল পাওয়া যায়। 
কাস্টমসের শুল্কায়ন মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৬ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অপরিশোধিত যে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে, তার শুল্কায়ন মূল্য ছিল প্রতি কেজি গড়ে ১৩৬ টাকা। প্রতি কেজির পরিবহন ও পরিশোধন ব্যয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ বা ২০ টাকা। শুল্ক, কর ও ভ্যাট বাবদ আরও ২১ টাকা যুক্ত করলে খরচ দাঁড়ায় ১৭৭ টাকা প্রতিলিটার। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৮৯ টাকা। এই হিসাবে, প্রতি লিটারে অন্তত ১২ টাকা লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা। 

এবার সবচেয়ে বেশি ভোজ্যতেল আমদানি করেছে টি কে গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে এখন স্থিতিশীল। মাস কয়েক আগে দাম কিছুটা কমলেও এখন ১ হাজার ১০০ ডলারের কাছাকাছি।’ 

তাহলে দেশের বাজারে দাম বাড়ল কেন– জানতে চাইলে শফিউল আতহার তসলিম বলেন, ‘ট্যাক্স ও ভ্যাট পুনর্বহাল করার কারণে দাম বেড়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও তার সুফল সেভাবে নিতে পারিনি আমরা। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ব্যাংক খাতের অস্থিরতার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা।’ ভোজ্যতেলে এখনও লোকসান হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘যে শুল্কহার সরকার পুনর্বহাল করেছে তাতে লিটারে ২১ টাকা বাড়ার কথা। কিন্তু বাড়ানো হয়েছে ১৪ টাকা।’ 

এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে ভোজ্যতেলের দাম। সেখানে দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা বাতাসের আগে তা কার্যকর করেন বাংলাদেশে। কিন্তু দাম কম থাকলে অজুহাত দেন ডলারের, ব্যাংকের, কাস্টমসের। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।’ সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ১৪ টাকা বাড়ানোর বিষয়টি অযৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি।

সাড়ে তিন মাসে জাহাজ এসেছে ২৩টি
শিপিং এজেন্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অপরিশোধিত সয়াবিন, পাম অয়েল ও সয়াবিনের বীজ নিয়ে গত সাড়ে তিন মাসে জাহাজ এসেছে ২৩টি। এসব জাহাজে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল এসেছে ৩ লাখ ৭ হাজার ২৮৫ টন। সয়াবিন বীজ এসেছে ২ লাখ ২৭ হাজার টন। 

২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি ভোজ্যতেল এনেছে টিকে গ্রুপ। ফেব্রুয়ারিতে ৪টি জাহাজে প্রায় ৬০ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল এনেছে টিকে গ্রুপ। মার্চ মাসেও সর্বাধিক আমদানি করেছে টিকে গ্রুপ। এই সময় তাদের পাঁচটি জাহাজে পণ্য এসেছে প্রায় ৮০ হাজার টন। একই মাসে মেঘনা গ্রুপের পণ্য এসেছে প্রায় ৬৫ হাজার টন। 
তবে ১৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ভোজ্যতেলের কোনো জাহাজ আসেনি চট্টগ্রাম বন্দরে। সূত্র দাবি করছে, দাম বাড়ার বিষয়টি আগাম নিশ্চিত হওয়ার পর ২ এপ্রিল থেকে আবার আমদানি শুরু করেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সয়াবিন, পাম ও সয়াবিন বীজ নিয়ে ৭টি জাহাজ নোঙর করে চট্টগ্রাম বন্দরে। আমদানিকৃত এসব ভোজ্যতেলের বেশির ভাগই কেনা হয়েছে ২০২৪ সালে, যখন আন্তর্জাতিক বাজারের গড় দাম ছিল সর্বনিম্ন।

গেল বছর চার-পাঁচবার ওঠানামা করেছে দাম
দেশে যে কয়েকবার ভোজ্যতেলের দর কমেছে, তার পেছনে রয়েছে সরকারের শুল্ককর ছাড়ের সুবিধা। অর্থাৎ যখন শুল্ককর কমানো হয়েছে, তখন আমদানিকারকরা তেলের দর কমিয়েছেন। আবার যখন শুল্ককর ছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে, ফের তারা দাম বাড়িয়েছেন। এভাবেই ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন আমদানিকারকরা। 

দাম ওঠানামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর (২০২৪ সাল) চার-পাঁচবার ওঠানামা করেছে ভোজ্যতেলের দাম। গেল বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছিলেন আমদানিকারকরা। তখন বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দর ৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১৭৩ টাকা। এর পর ১ মার্চ ১০ টাকা কমিয়ে প্রতি লিটারের দর নির্ধারণ করা হয় ১৬৩ টাকা। এর পর ওই বছরের ১৮ এপ্রিল বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৩ টাকা থেকে ৪ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৬৭ টাকা। 
খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৪৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৪৭ টাকা করা হয়। এর পর গত ৯ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি লিটার ১৫৭ টাকা। এর পর সরকার আমদানিতে দুই দফায় শুল্ককর ছাড় দিয়েছে। চলতি বছরের ৩১ মার্চ এই ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফের লিটারে ১৪ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম। 

খাতুনগঞ্জে সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি 
তার পরও বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম। গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে তেলের সরবরাহ একটু বেড়েছে।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ার পর আমদানিকারকরা এসও (সরবরাহ আদেশ) বিক্রি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার যা এসও আছে, সেটিরও পণ্য সরবরাহ করছে না। এতে করে বাজারে তেলের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতির সুবাদে বেশ কয়েক মাস বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে ভোজ্যতেল। খাতুনগঞ্জে গতকালও চাহিদা মতো ভোজ্যতেল ছিল না বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আগের সপ্তাহের তুলনায় সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। 

পাঁচ প্রতিষ্ঠানের হাতে ভোজ্যতেলের বাজার
সময়ের হাত ধরে ভোজ্যতেলের চাহিদা বাড়লেও ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। এখন এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বড় পাঁচ শিল্প গ্রুপ। তাদের দাবি অনুযায়ীই মূলত তেলের দাম বাড়ানো হয়। তাদের হাতেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ। ক্যাব বলছে, এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে আমদানিকৃত ভোজ্যতেলের ৭০ শতাংশ। 
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ও স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস।  
এনবিআরের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রায় ২৫ লাখ ৭ হাজার টন সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করা হয়। ২০২৪ সালে আমদানি হয় প্রায় ৩২ লাখ টন ভোজ্যতেল। দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা এখন প্রায় ৩০ লাখ টন। 

ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, দেশে রিফাইনারি রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি অধিকাংশ চাহিদা পূরণ করছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ রদর ভ জ যত ল র দ ম আমদ ন ক রকর ভ জ যত ল র ব র গড় দ ম ছ ল অপর শ ধ ত খ ত নগঞ জ ব যবস য় র ২০২৪ স ল ২০২২ স ল হ জ র টন শ ল ককর ব তলজ ত আরও কম সরবর হ ১৪ ট ক দ ম কম সরক র বছর র সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের