ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে সাশ্রয়ী দামে বিক্রির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল, ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কিনবে সরকার। এ বিষয়ে ৩টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই তিন ক্রয় প্রস্তাবে ব্যয় হবে ৮৮২ কোটি ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
সভা সূত্রে জানা যায়, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি দামে বিক্রির লক্ষ্যে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল কেনার জন্য অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। ৩টি দরপ্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন ২টি দরদাতা প্রতিষ্ঠান তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা এর কাছ থেকে ২০ হাজার লিটার এবং মজুমদার ব্রান অয়েল মিলস লিমিটেড যশোরের থেকে ৯০ হাজার লিটার তেল ক্রয় করবে। প্রতি লিটার ১৬১ টাকা হিসেবে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল কয়ে মোট ব্যয় হবে ১৭৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন:
সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি: ক্রেতা-বিক্রেতার অস্বস্তি, প্রত্যাহার দাবি
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বেড়ে ১৮৯ টাকা
সভায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ২টি দরপ্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও সীডস ক্রাশিং মিলস লি. ঢাকা এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৬৫.৮৫ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৩৬৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
সভায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
সূত্র জানায়, দেশের সরকারি খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি দরপত্র জমা পড়ে। ৬টি প্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাত্তাবি অ্যাগ্রো ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৩৯৪.৭৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয়ে ব্যয় হবে এক কোটি ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রা ২৪০ কোটি ৮০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৫০ হ জ র ম ট র ক টন ২০ ল খ ল ট র র সপনস ভ র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সোনাগাজীতে ইজারা চুক্তি না মেনে চলছে পশুর হাট
সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাট বাজারে অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে পশুর হাট বসিয়ে প্রতি সপ্তাহে লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করার অভিযোগ উঠেছে। বাজার ইজারার শর্তের বাইরে ওয়াকফ এস্টেটের মালিকীয় সম্পত্তি দখল করে এই পশুর হাট পরিচালনা করা হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিএনপিপন্থী বাজার ইজারাদার সাইফ উদ্দিন শামীমের নামে রশিদ ছাপিয়ে গরু ছাগলেরর হাট বসিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে এ বাজার থেকে।
এদিকে, অবৈধ দখলদারিত্ব ও পশুর হাট সরানোর দাবিতে হাজী মমতাজ উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেটের (সরকারি ইসি নং ১১৩৩৩) মোতওয়াল্লী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন।
জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় লোকজন অবৈধ গরু বাজার বসাত, যা এখনও চলমান রয়েছে। আমাদের ওয়াকফ এস্টেট বা রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাটে সরকারিভাবে কোনো পশুর হাট ছিল না, নেইও। সোনাগাজী উপজেলা প্রশাসন রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাট তোহা বাজার উল্লেখ করে ইজারার দরপত্র আহ্বান করে এবং সেই অনুযায়ী ইজারাদারের সাথে চুক্তি করে। এরপরও একটি চক্র সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে পশুর হাট চলমান রেখে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের ওয়াকফ এস্টেট এবং তোহা বাজারের পেরি-ফেরি আলাদা। এরপরও ইজারাদার তোহা বাজারের সীমানা ছাড়িয়ে আমাদের ওয়াকফ এস্টেটে অবৈধভাবে পশুর হাট বসিয়েছে। আমরা কোনো প্রকার লাভবান হচ্ছি না। পাশাপাশি আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পশুর হাট বসানোয় বাড়ির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অবৈধ পশুর হাট বন্ধে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে, যা এখনও সুরাহা হয়নি। বর্তমানে বিষয়টি সোনাগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানিয়া আক্তার লুবনার নিকট তদন্তাধীন রয়েছে।”
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাটের দরপত্রে ‘তোহা বাজার’ (গন্ডি বাজার) নামে উল্লেখ থাকলেও সেখানে পশুর হাট বসানোর কোনো অনুমোদন ইজারাদারকে দেওয়া হয়নি। চুক্তিপত্রেও পশুর হাট/গরু বাজারের কথা উল্লেখ নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এ বাজারে অবৈধ পশুর হাট বসিয়ে অন্তত ৮৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আরেকটি চক্র প্রতি সপ্তাহে বাজার থেকে প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান নতুন দরপত্র আহ্বান করেন। এতে রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাটকে ‘তোহা বাজার’ ‘গন্ডি বাজার’ হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়। বিএনপি-ঘনিষ্ঠ সাইফ উদ্দিন শামীম প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে ইজারা নেন এবং এরপর থেকেই ওয়াকফ এস্টেটের মালিকীয় জায়গায় নতুন করে পশুর হাট বসানো হয়।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই, প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার গরু ছাগলের এ হাট থেকে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আসন্ন কোরবানির মৌসুমে চাঁদা আদায়ের পরিমাণ বাড়বে আরও কয়েকগুণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গরু ব্যবসায়ী জানান, পশুর হাটকে লক্ষ্য করে শামীম প্রচলিত সরকারি ইজারার মূল্য থেকে চার গুণ বেশি দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। অতিরিক্ত ইজারার টাকা উঠানোর জন্য তোহা বাজারে টোল বৃদ্ধি এবং গরু-ছাগলের হাসিল বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সামনে কোরবানির মৌসুমে এ অবৈধ পশুর হাটকে ঘিরে আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে তার।
এ বিষয়ে বাজার ইজারাদার সাইফ উদ্দিন শামীম বলেন, “বাজারটি ‘তোহা বাজার’ ও ‘পশুর হাট’ নিশ্চিত হয়েই আমি ইজারা নিয়েছি। সরাসরি দরপত্রের মাধ্যমে প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ করে এক বছরের জন্য বাজার ইজারা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শুধুমাত্র তোহা বা গন্ডি বাজার ১০ লাখ টাকা ইজারা নেওয়ার মতো পাগল আমি না। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাকে যে চুক্তিপত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানে ‘পশুর হাট’ বসানোর অনুমতি দেওয়া আছে। এছাড়া ওয়াকফ এস্টেটের যে সম্পত্তির মধ্যে বাজার মিলানো হচ্ছে, তার জন্য হাজী মমতাজ উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেট জামে মসজিদকে প্রতি মাসে ৫০০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম বলেন, “রিয়াজ মুন্সিরহাট বাজারটি অনেক পুরোনো একটা বাজার। বাজারটি ইতোমধ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। দরপত্রে বাজারটি ‘তোহা বাজার’ (গন্ডি বাজার) নামে উল্লেখ থাকলেও সেখানে পশুর হাট বসানোর কোনো অনুমোদন ইজারাদারকে দেওয়া হয়নি। চুক্তিপত্রেও পশুর হাট/গরু বাজারের কথা উল্লেখ নেই। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি ইজারাদার সেখান পশুর (গরু-ছাগল) হাট পরিচালনা করছে যা চুক্তিপত্রের বিরোধী। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে শিগগিরই ব্যবস্থা নেব।”
তিনি আরো বলেন, “হাজী মমতাজ উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেট কর্তৃপক্ষ দাবি করছে তাদের ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে বাজার পরিচালনা হচ্ছে। বিষয়টি তারা আমাদের নজরে এনেছেন। আমরা এ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/এস