আমির খান কেবল অসাধারণ অভিনয়ের জন্যই নয় বরং সিনেমা এবং এর ব্যবসায়িক দিক সম্পর্কেও বোঝাপড়ার জন্যও বিশেষভাবে জনপ্রিয়। সম্প্রতি ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে বড় বাধার কথা জানালেন বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। সেই সঙ্গে জানালেন সম্ভাবনার কথাও।

দ্যা হলিউড রিপোর্ট ইডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমির খান জানান, ভারতে সিনেমা হলের স্বল্পতা দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে চীনের উদাহরণ টানেন তিনি।

আমির খান বলেন, ‘চীনের জনসংখ্যা আমাদের সমান হলেও তাদের সিনেমা হল আমাদের চেয়ে দশ গুণ বেশি। সেখানকার সিনেমা যে বিশাল অঙ্কের ব্যবসা করে তার প্রধান কারণই এই ব্যাপক স্ক্রিন সংখ্যা।’

আমির খান বলেন, ‘ভারতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার সিনেমা হল রয়েছে, যার অর্ধেকই দক্ষিণ ভারতে। ফলে একটি হিন্দি সিনেমা মুক্তি পেলে গড়ে ৫ হাজার স্ক্রিনেই সীমাবদ্ধ থাকে। অথচ চীনে স্ক্রিনের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার। এর সঙ্গে তুলনা চলে না। ‘দঙ্গল’ সিনেমা চীনে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা আয় করেছিল, তবুও সেটা চীনের সবচেয়ে বড় হিট নয়। সেখানে সিনেমা ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি পর্যন্ত ব্যবসা করে। এটাও সম্ভব। কারণ সেখানে স্ক্রিন বেশি এবং দর্শক আরও বেশি পৌঁছাতে পারে।

আমিরের ভাষ্য, একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে আমার ইচ্ছা, ভারতে আরও থিয়েটার গড়ে উঠুক, যেখানে সাধারণ মানুষ সহজে পৌঁছাতে পারে। আমাদের দেশে অনেক এলাকা ও জেলাতে একটি হলও নেই। তাই আমি মনে করি, কম খরচে, সহজলভ্য থিয়েটার গড়ে তোলার দিকেই আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

তবে সব কিছুর মাঝেও আশাবাদী আমির খান। সরকারের উদ্যোগ, যেমন ‘ওয়াল্ড অডিও ভিজুয়্যাল আ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট সামিট’ সম্মেলন ভবিষ্যতে দেশের সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন দঙ্গল অভিনেতা। সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম র খ ন আম র খ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ