বাংলাদেশের মৎস্যখাতে দক্ষিণ কোরিয়া কারিগরি সহায়তার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সামুদ্রিক মৎস্য এবং এ সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, মেরিকালচার ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মঙ্গলবার পোর্ট সিটি বুসানে কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের মৎস্য বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার এবং জাতীয় মৎস্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট চোল ইয়ং সি এর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা গভীর সমুদ্রে অবৈধ মাছ ধরার বিরুদ্ধে নজরদারি জোরদার, গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ধরায় সক্ষমতা অর্জন, সামুদ্রিক সম্পদের মজুদ নির্ণয়ে সহায়তা, সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষকদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান, মূল্য সংযোজন পণ্য উন্নয়ন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট উন্নয়নের মাধ্যমে মৎস্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন। 

দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় উপদেষ্টা কোরিয়ান মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলদেশ সরকার সাধারণ মানুষের আমিষ চাহিদা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানতে পেরেছেন যে, কোরিয়ান সরকার তার জনগণকে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে মাছের যোগান দেয়ার জন্য নানা পদক্ষেপে গ্রহণ করেছে। তবে, উভয় দেশেরই কমন ও বৈশ্বিক অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রে দূষণ, আইইউই ফিসিং, অধিক মৎস্য আহরণ, অবৈধ ফিসিং গিয়ার ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

উপদেষ্টা এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্র একত্রে কাজ করতে পারে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ জন্য উভয় দেশের সরকার ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা যেতে পারে মর্মে উপদেষ্টা প্রস্তাব করেন।

কোরিয়ার ভাইস মিনিস্টার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, মৎস্যখাতে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ভাইস মিনিস্টার আশ্বস্ত করেন, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার মৎস্যখাতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় খুঁজে বের করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আলোচনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আরও সহযোগিতার বিকাশ উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

ভাইস মিনিস্টার আরও বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যেই অবৈধ মাছ ধরার পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ধরার ট্র্যাকিং-এর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে। নির্দিষ্ট প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশকে কোরিয়া সহযোগিতা করতে পারে। তিনি প্রযুক্তিগত গবেষণা সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেন। 

উপদেষ্টা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাক্ষাতের সময় কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত তৌফিক ইসলাম শাতিল উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএফডিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জনাব সুরাইয়া আখতার জাহান, মৎস্য অধিদপ্তরের  মহাপরিচালক ড.

মো: আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ৫ দিনের সরকারি সফরে দক্ষিণ কোরিয়াতে অবস্থান করছেন। সফরকালে তিনি ইতোমধ্যে কোরিয়া মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (কেএমআই)-এর সভাপতি, কোরিয়ান ফিশারিজ রিসোর্সেস এজেন্সি (এফআইআরএ) -এর সভাপতি, পুকিয়ং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, কোরিয়া ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ অন্যান্যদের সাথেও দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বুসান ফিস প্রসেসিং এবং এক্সপোর্ট সেন্টার গংসু ফিস ভিলেজ পরিদর্শন ও প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তাদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সহয গ ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ